শনির হাওরে মহাবিপন্ন কুড়া ঈগল

454

গেল বছর ফেব্রুয়ারিতে হাওরে ঘুরতে গিয়ে হঠাৎ চোখে পড়ে মহাবিপন্ন পাখি দুটির। মাটি থেকে সামান্য উঁচুতে হাওরে কান্দায় বরুন গাছের ডালে বাসা বেঁধেছে। দূর থেকে দেখে অনেকটা শকুনের মতো দেখাচ্ছিল। গাঢ় বাদামী সাদা ডানা, যা দূর থেকে দেখলে কালোই মনে হয়। পাখি দুটো দেখে থমকে দাঁড়িয়েছিলাম। অনেক বছর পর দেখা। দূর থেকে মোবাইল ফোনে ছবি পাওয়া যায় না, তাই ধীর পায়ে গাছের কাছাকাছি যাচ্ছিলাম একটি ভাল ছবির আশায়। কিন্তু তা আর হলো না। মোবাইলে ছবি তোলার চেষ্টা করতেই পাখি দুটি উড়ে গেল। বলছি পৃথিবীর সংকটাপন্ন প্রজাতি এবং বাংলাদেশের মহা বিপন্ন পাখি কুড়া ঈগলের কথা। রাতের প্রহরে প্রহরে ডাকা এ পাখিটির ডাক শুনি না বহুদিন। গত বছর দশেক আগেও শীতকালে রাতের প্রহরে  ডাক শোনা যেত এ পাখিটির। স্থানীয় লোকজনের কাছে এ পাখি ‘কুউরা’ হিসেবে পরিচিত। এর কেতাবি নাম ‘পালাসি ফিস ঈগল’ বা ‘পালাসি কুড়া ঈগল’। এক সময় হাওর এলাকায় কুড়ার আবাসস্থল হলেও এখন আর হাওরে কুড়া ঈগল চোখে পড়ে না। তবে গেল বছর থেকে দুটি কুড়া ঈগলের দেখা মিলছে শনির হাওর পশ্চিম পার হাওরের বেড়িবাঁধের কান্দায় জগদিসপুর গ্রামের সামনে। এবছরও একই জায়গায় পাখি দুটিকে দেখা গেছে। কারণ কুড়া ঈগল একই বাসা বছরের পর বছর ব্যবহার করে। তথ্য সূত্রে জানা যায়, পৃথিবী ব্যাপী ৫২ হাজার ৭০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ২৫শ থেকে ৯ হাজার ৯ শ ৯৯ টি কুড়া ঈগল রয়েছে। আর বাংলাদেশে এ কুড়া ঈগল রয়েছে মাত্র ৫০ থেকে ১০০ টি। গত এক দশকে টাঙ্গুয়া হাওর সহ সমস্ত হাওর এলাকায় তেমন একটা চোখে পড়ে নি কুড়া ঈগলের। যদিও এ পাখির মূল বিচরণস্থল বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়া হাওর দিন দিন উল্লেখযোগ্য হারে কুড়া ঈগল কমে যাওয়ার মূল কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন বিচরণ স্থলে মাছের সংখ্যা কম, বাসা বানানোর জায়গা কমে যাওয়া, সেই সাথে অধিক হারে দূষণে ফলেও কুড়া ঈগল বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত প্রায়। পাশাপাশি আবাসস্থলে স্থানীয় লোক কিংবা পথচারীদের উৎপাত, ডিম দেয়ার সময় স্থানীয় শিশুদের বাসা থেকে ডিম নিয়ে আসা – এসব বিষয়ও এর অস্তিত্ব সংকটের মূল কারণ বলে মনে করেন অনেকে। হাওরে এ কুড়া ঈগলের অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখতে হলে পাখিদের আবাসস্থল নিরাপদ রাখতে হবে। না হলে মহাবিপন্ন এ ‘পালাসি কুড়া ঈগল’ হাওরে গাছের ডালে কিংবা নদী নালা খাল বিলে উড়তে দেখা যাবে না।