দিন চলে যায় শরীরের বেদনায়

71

জন্মদিন

ছিয়াত্তরে প্রেম ও দ্রোহের কবি
হাসনাত কাদীর
হেলাল হাফিজ (জন্ম: ৭ অক্টোবর, ১৯৪৮)।

‘জীবন খরচ করে’ কবিতা লিখেছেন। দ্রোহের স্লোগান হয়ে মিছিলে মিছিলে ঘুরেছে তা। জুড়ে গেছে প্রেমিক-প্রেমিকার পরাণে। তিনি প্রেম ও দ্রোহের কবি হেলাল হাফিজ। আজ শনিবার তার ৭৬তম জন্মদিন। শুক্রবার সন্ধ্যায় কবির সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়। ঢাকার আকাশে তখন বৃষ্টি ঝরে চলেছে। কবি আছেন শাহবাগের একটি হোটেলে। বললেন, ‘হোটেলে-হাসপাতালে কাটছে সময়। শরীরের অবস্থা ভালো নয়। চলাফেরায় কষ্ট হয়। তবু বাঁচি, একা আছি। একা থাকাতেই আনন্দ।’

এই বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যায় হেলেনকে মনে পড়ে? হেলেন সেই মানবী, যার প্রেমের ফুলে সেজেছিল কবির হৃদয়। যার চলে যাওয়া ঝড় তুলেছিল অব্যক্ত ব্যথার। যে ব্যথা কালো রক্তের মতো ঝরেছিল, হয়েছিল কবিতা। আর কবিকে করেছিল ঘরবিমুখ। তার সংসার হলো না, জীবনজুড়ে সঙ্গ নিল কেবল হাহাকার আর কবিতা। গত বছর জন্মদিনে ভাই নেহাল হাফিজ ও ভাতিজি বিপাশা সুলতানার সঙ্গে কবি হেলাল হাফিজ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ৬০৩ নম্বর কেবিনে। ছবি: মানস মেহেদী অবহেলা, অনাদর ও প্রত্যাখ্যানই তাকে এই বোহেমিয়ান জীবনে টেনে এনেছে বলে মনে করেন কবি। তিনি বলেন, ‘এখন এই পড়ন্ত বেলায়, যখন নাজুক হয়েছে শরীর, তখন আরও কিছু লেখার বাসনাই শক্তি জোগায়।’ গত বছর জন্মদিনে সমকালকে বলেছিলেন আরেকটি কবিতার বই লিখতে চান। লিখতে চান আত্মজীবনীও। সে কথা স্মরণ করালে বললেন, ‘চোখের আলো কমছে। এখন লিখতে-পড়তে কষ্ট হয়। দিন তো চলে যায় শরীরের বেদনায়। লিখতে পারছি না।’

বাংলা ভাষায় প্রেম ও দ্রোহের অসামান্য সব কবিতার এই স্রষ্টা চোখের সমস্যাসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। অকৃতদার এই কবিজীবন নিয়ে তার আক্ষেপ কিছু নেই। কবি মনে করেন, জীবন এক ভ্রমণ। জীবন এক যাপন-অভিজ্ঞতা। কবিতার সাথে সখ্য গড়ে তিনি জীবনের গ্লাসে চুমুকে পেয়েছেন সুধা। শিল্পের জন্য বেদনা খুব জরুরি। তবে শিল্প বা কবিতা জোর করে লেখার বিষয় নয়। কবিতা বাতাসের মতো, তাকে বয়ে আসতে দিতে হয়। কবিতা বৃষ্টির রেণু, তাতে ভিজতে জানতে হয়।

হেলাল হাফিজ খুব কম লিখেছেন। তবে মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছেন, তা কম কবিরই ভাগ্যে হয়। ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ, প্রকাশিত হয় ১৯৮৬ সালে। বইয়ের প্রথম কবিতা ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’। লিখেছিলেন ‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/ এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।’ দখলে নিলেন পাঠকহৃদয়, প্রেম ও দ্রোহের কবি হিসেবে। এরপর প্রায় ৩৪ বছরের বিরতি। ২০১৯ সালে দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’র শুরু প্রেম দিয়ে। লিখলেন ‘এক জীবনের সব হাহাকার বুকে নিয়ে/ অভিশাপ তোমাকে দিলাম,../তুমি সুখী হবে, খুব সুখী হবে।’ দ্রোহ ও প্রেম এক সুতায় গাঁথা মালা। প্রেমের মধ্যেই দ্রোহের উপস্থিতি। প্রেমিক না হলে বিপ্লবী হওয়া যায় না, আর বিপ্লবী হতে হলে প্রেমিক হতেই হয়।