আল বিদা মাহে রমজান

120

রমজানকে বিদায় জানাবে এক ফালি বাঁকা চাঁদ। তারা বড়ই হতভাগা, যারা রমজান পেয়েও বঞ্চিত। পশ্চিম আকাশে উদিত ‘শাহরুল আজিম’, ‘শাহরুল মুবারাকাত’ নামের রমজানের চাঁদ রহমত, মাগফিরাত, নাজাতের উজ্জ্বল আভা ছড়িয়ে ক্ষয়-ক্ষীণ হতে হতে কৃষ্ণপক্ষের শেষ দিনের অপেক্ষায়! রমজানে ঘোষিত হয়—হে ভালোর অন্বেষী অগ্রসর হও, মন্দের অন্বেষী থামো। (তিরমিজ)
রমজান তো তাওবার সুযোগ এনে দিয়েছিল। পাপ কাজ ত্যাগ, কৃত পাপের জন্য অনুতপ্ত এবং ভবিষ্যতে পাপ না করার সংকল্পকে ‘তাওবা’ বলে। ইমাম গাজ্জালি (রহ.)-এর শিক্ষা হলো—‘মানুষ পাপের জন্য এমন অস্থির হবে যেমন সন্তান হারা মা তার সন্তানকে পাওয়ার জন্য অস্থির হয়…যখন গুনাহগার বান্দাও এমনই অস্থিরতায় আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে প্রার্থনা করে তখনই আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। (মিনহাজুল আবেদিন)
এ প্রসঙ্গে বুখারি শরিফের দীর্ঘ বর্ণনায় পাওয়া যায়—এক বেদুইন মুসাফির তার সর্বস্ব হারিয়ে নিরূপায় ও অস্থির মনে নিজের মৃত্যু কামনা করছে! এমন সময় তার হারানো সম্পদ ফিরে পাওয়ার আনন্দ ও উত্তেজনায় সে বলছে—‘আনতা আবদি ওয়া আনা রব্বুক’ অর্থাৎ আল্লাহ তুমি আমার বান্দা আর আমি তোমার প্রভু! (আসলে বলবার কথা—আল্লাহ তুমিই আমার প্রভু আর আমি তোমার বান্দা!) আর সর্বহারা পথিক তার সম্বল ফিরে পাওয়ার আনন্দে যেমন খুশি হয়—পাপী ও পথহারা বান্দা যখন অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হয়, তখন আল্লাহ তার চেয়েও বেশি খুশি হন। আরবের নববর্ষ পালন ও ঘৌড় দৌড় উপলক্ষে প্রচলিত অশ্লীল দুটি উৎসব ‘নিরোজ’ ও ‘মেহেরগান’ রহিত করে প্রিয় নবী (সা.) ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল দুটি ঈদোৎসবের প্রচলন করেন। ঈদের শাব্দিক অর্থ বারবার ফিরে আসা এবং প্রচলিত অর্থ খুশি। রমজানের বিদায় বেলায় ভাবতে হবে ঈদ আনন্দ যেন সবার জন্য সমান হয়। আসলে শুধু নতুন জামা পাওয়ার নাম তো ঈদ নয়, বরং প্রকৃত ঈদ তো তার যে ‘অঈদ’ বা আল্লাহর শাস্তিকে ভয় করে। মনে রাখতে হবে নিরন্ন অসহায়ের দীর্ঘশ্বাস— ‘জীবনে যাদের হররোজ রোজা ক্ষুধায় আসে না নিদ মুমূর্ষু সেই কৃষকের ঘরে এসেছে কি আজ ঈদ।’—কাজী নজরুল ইসলাম
রমজানে শয়তান বন্দি থাকায় মানুষের রিপুতে থাকা শয়তানি অবদমিত হয়েছিল ইবাদতের কল্যাণে। এ চেতনা ধরে রাখতে হবে সারা বছর। তবেই রমজানের সিয়াম সাধনা হবে সার্থক।