যেভাবে খেলবেন কড়ি খেলা

114

খেলার উপদান কড়ি। কড়ি মানে কড়ির খোলস। আগে এই কড়ির খোলস মূদ্রা হিসেবে চালু ছিল। কড়ির বিনিময়ে পণ্য কেনাবেচার চল ছিল সেকালে। ঘরে বসে খেলার যায় এমন একটি মজার খেলা হলো কড়ি খেলা। গ্রীষ্মের অলস দুপুরে ছেলেমেয়েরা সময় কাটানোর জন্য কড়ি খেলায় মেতে ওঠে। কড়ি খেলা মূলত মেয়েদের খেলা। তবে খেলোয়াড় কম পড়লে ছেলেরাও মাঝে মাঝে খেলে। এখন যেমন মানুষ টাকা রোজকার করে, টাকার রোজগারের জন্য কত কষ্ট করে। হানাহানি, মারামারির মূলও টাকা। এককালে টাকা নয়, মানুষ কড়ির জন্যই কষ্ট করত। মারামারি-হানাহানি করত। ছোটরা অনুকরণ প্রিয়। কড়ির রোজগারের জন্য মানুষের মরীয়া হয়ে ওঠার সেই ব্যাপারটিই কড়ি খেলার মাধ্যমে ছেলেমেয়েরা ফুটিয়ে তোলে। এই খেলার জন্য দরকার হয় চারজন খেলোয়াড়। আর চারটি কড়ির খোলাস। খেলোয়াড় কম পড়লে ২/৩ জনেও খেলা চলে। এই খেলায় কোনও দলের দরকার হয় না। টস করাও জরুরি নয়। প্রথমে চারজন খেলোয়াড় গোল হয়ে বসে ঘরের মেঝেতে। আলাপ করে ঠিক করে নেবে কে আগে দান শুরু করবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কমকয়সী খেলোয়াড়কে প্রথম সুযোগ দেওয়া হয়। সেই খেলোয়াড় কড়ি চারটে পুরে নেয় হাতের মুঠোয়। তারপর সেগুলো আলতো করে ছুড়ে দেয় মেঝের ওপর। শুরু হয় কড়ি খেলা। শুধু মেঝেয় ছুড়ে দিলেই কড়ি খেলা শুরু করা যায় না। চার পড়তে হয়। মেঝের ওপর কড়ি ছিড়িয়ে দেওয়ার পর চারটে কড়িই যদি উপুড় হয়ে পড়ে তবে সেটাকে চার বলে। মানে সেই খেলোয়াড় চার পয়েন্ট পায় ওই দান থেকে। চার পড়ে কীভাবে সেটা নিচের ছবি দেখানো হলো। চারটে কড়িই উপুড় হয়ে পড়েছে। তাই এই দান থেকে খেলোয়াড় চার পয়েন্ট পাবে। ধরা যাক, প্রথম চালে চারটে কড়িই উপুড় হয়ে না পড়েনি। একটা দুটো বা তিনটা কড়ি চিৎ হয়ে পড়েছে। তাহলে ওই দান থেকে চার হবে না। শুধু চার কেন, কোনও পয়েন্টই পাবে না সেই খেলোয়াড়। চিত্র-৩ এ দেখা যাচ্ছে দুটো কড়ি উপুড় হয়ে পড়েছে, দুটো কড়ি চিৎ হয়ে পড়েছে। তাই এই দান থেকে কোনও পয়েন্ট পাবে না খেলোয়াড়। খেলোয়াড় প্রথমবার কড়ি চালার চার সে আবার চালতে পারবে না। দান আরেকজনকে দিয়ে দিতে হবে। এবার দ্বিতীয় খেলোয়ড় কড়ি চালবে। তারও যদি চার না পড়ে তখন তৃতীয় খেলোয়াড়ের পালা। সেও যদি চার না পায় তখন চতুর্থ খেলোয়াড় দান শুরু করে। তারও চার না পড়লে আবার প্রথম খেলোয়াড়ের হাতে চলে আসে কড়ি। এভাবে যতক্ষণ না কারও চার পড়ছে ততক্ষণ আসল খেলা শুরু করা যাবে না। ধরা যাক, এক খেলোয়াড়ের চার পড়ল। তখন কড়িগুলো গুছিয়ে নেবে সে। পাবে চার পয়েন্ট। এরপর নিয়ে দ্বিতীয় চাল দেবে। এবারও যদি চার পড়ে তবে সে আরও চার পয়েন্ট পেয়ে যাবে। আর যদি চার না পড়ে তখন শুরু হবে অন্য খেলা। তখন একটা কড়ির সাথে আরেকটা কড়িকে ঠুকতে হবে। অনেকটা ক্যারাম খেলার মতো করে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে একটা কড়ি যেন আরেকটা কড়ির সাথেই ঠোকর খায়, দুটোর সাথে ঠোকাঠুকি না হয়। তা না হলে দান বাতিল। ধরা যাক, ঠিকঠাক ঠুকতে পারল খেলোয়াড়। তখন চেষ্টা করবে তৃতীয় কড়ির সাথে চতুর্থ কড়ি ঠুকতে। এভাবে একটা কড়ির সাথে আরেকটা কড়ি ঠুকতে পারলে সেই খেলোয়াড় পাবে এক পয়েন্ট। একদানে দুবার ঠোকার সুযোগ থাকে। তাই খেলোয়াড় একদান থেকে কড়ি ঠুকে দুই পয়েন্ট পেতে পারে। কিন্তু একজোড়া কড়ি ঠুকতে পারল, আরেকজোড়া পারল না। তখন কী হবে? তার দান বাতিল হয়ে যাবে। অন্যজন তখন দান শুরু করবে। যেহেতু একজোড়া কড়ি ঠুকতে পেরেছে তাই এক পয়েন্ট পাবে সে। তির চিহ্ন অনুযায়ী যেকোনও একটা দুই জোড়া কড়িকে ঠোকা যাবে। তাহলে এখন পর্যন্ত দেখলাম দুই ভাবে পয়েন্ট পাওয়া যায়। সবগুলো কড়ি উপুড় হয়ে পড়লে খেলোয়াড় পায় চার পয়েন্ট। আর জোড়ায় জোড়ায় কড়ি ঠুকে পায় এক পয়েন্ট করে। তবে ঠোকাঠোকি করে পয়েন্ট পেতে হলে কড়িগুলোর মধ্যে অবশ্যই ফাঁকা থাকতে হবে। যদি গায়ে গায়ে লেগে থাকে তখন তো আর ঠোকাঠুকির সুযোগ থাকে না। তাই যে জোড়া পরস্পরের সাথে লেগে থাকবে সেখান থেকে পয়েন্ট পাওয়ার সুযোগ নেই। এখানে প্রথমজোড়া কড়ি পরস্পরকে স্পর্শ করে আছে, তাই এখান থেকে কোনও পয়েন্ট পাওয়ার সুযোগ নেই খেলোয়াড়ের। কিন্তু দ্বিতীয় জোড়ার মধ্যে সামান্য ফাঁক আছে। তাই এই জোড়া ঠোকা যাবে। এখান থেকে খেলোয়াড় পাবে এক পয়েন্ট। এখানে প্রথমজোড়া কড়ি পরস্পরকে স্পর্শ করে আছে, তাই এখান থেকে কোনও পয়েন্ট পাওয়ার সুযোগ নেই খেলোয়াড়ের। কিন্তু দ্বিতীয় জোড়ার মধ্যে সামান্য ফাঁক আছে। তাই এই জোড়া ঠোকা যাবে। এখান থেকে খেলোয়াড় পাবে এক পয়েন্ট। আবার যদি তিনটি কড়ি পরস্পরের সাথে লেগে থাকে, কিন্তু একটা কড়ি আলগা থাকে তখন কী হবে? তখন আলগা কড়ির সাথে ঠোকা যায় এমন কোনো কড়ি নেই। তাই এই দান থেকে খেলোয়াড় কোনও পয়েন্ট পাবে না। এখানে তিনটি কড়ি পরস্পরের সাথে লেগে আছে, কিন্তু একটামাত্র কড়ি আলগা। এখান থেকে খেলোয়াড় কোনওপয়েন্ট পাবে না। কখনও দেখা যায় চারটি কড়িই চিৎ হয়ে পড়েছে। নিচের মতো। তখন চলে কাড়াকাড়ি। চারজন খেলোয়াড়েরই অধিকার আছে সেই কড়ি কেড়ে নেওয়ার। সবকটি কড়ি চিৎ হয়ে পড়লে এক এক কড়ির জন্য দুই পয়েন্ট বরাদ্দ। তাই কেউ যদি চারটি কড়িই কেড়ে নিতে পারে সে আট পয়েন্ট পাবে। দেখা যায় কেউ দুটো পেয়েছে। কেউ কেউ পেয়েছে একটা করে। কেউ হয়তো একটাও পায় না। যে দুটো পাবে তার খাতায় যোগ হবে চার পয়েন্ট। যে তিনটে পাবে তার খাতায় ছয় পয়েন্ট যোগ হবে। আর একটা পেলে তো দুই পয়েন্ট। চিৎ হওয়া কড়ি যে যে কটাই পাক না, দান কিন্তু সেই আগের খেলোয়াড়েরই থাকে। মানে যে কড়ি চেলেছিল আরকি!শুরুতেই কড়ি খেলায় একটা নির্দিষ্ট পয়েন্ট ঠিক করে নেওয়া হয়। ধরা যাক, সেটা ৫০। যে প্রথমে ৫০ পয়েন্ট অর্জন করবে সে হবে প্রথম। সে তখন খেলা থেকে সরে দাঁড়াবে। তখন বাকি তিনজন খেলবে। এরপর যে ৫০ পাবে সে হবে দ্বিতীয়। সেও তখন খেলা থেকে সরে দাঁড়াবে। এর বাকি দুজনের মধ্যে চলবে তৃতীয় হওয়ার লড়াই। এই দুজনের মধ্যে যে আগে ৫০ পয়েন্ট তুলতে পারবে সে তৃতীয়। বাকিজন চতুর্থ। সেই মুহূর্তে খেলার প্রথম ধাপ শেষ। এরপর শুরু হবে দ্বিতীয় ধাপ। এবারে চার খেলোয়াড় আবার মুখোমখি বসবে। চতুর্থ স্থান অজর্নকারী খেলোয়াড়ের ভুমিকা এখানে হবে অপরাধীর। প্রথম স্থান অর্জনকারী খেলোয়াড়ের হাতে থাকবে সবগুলো কড়ি। সেগুলো দুহাতে মুঠোবন্দি করে পিঠের পেছন দিকে নেবে। গোপনে দুহাতে ভাগ করে নেবে কড়িগুলো। একটা হাত সামনে নিয়ে অপরাধীকে জিজ্ঞেস করবে, কয়টা কড়ি আছে। অপরাধী যদি বলতে না পারে তবে সে আবার একইভাবে কড়িগুলো মুঠোয় লুকাবে। এবং অপরাধীর কাছে জানতে চাইবে মুঠোর ভেতর কয়টা কড়ি আছে। মাঝে মাঝে অপরাধী আন্দাজেই বলে ফেলে এক নম্বর খেলোয়াড়ের হাতে কয়টি কড়ি আছে। বলতে পারলেই সেই কড়িগুলো অপরাধীর হয়ে যাবে। বাকি যে কড়িগুলো থাকবে সেগুলো নিয়ে তখন এক নম্বর খেলোয়াড় আগের মতো গোপনে মুঠোয় লুকাবে এবং কয়টি কড়ি আছে জানতে চাইবে। অপরাধী যতক্ষণ আন্দাজের ওপর ভর করে সবগুলো কড়ি আদায় না করতে পারবে তততক্ষণ চলবে খেলা। যখন সব কড়ি অপরাধী নিয়ে নিতে পারবে তখন খেলার দ্বিতীয় পর্যায় শেষ। এরপর শুরু হবে তৃতীয় পর্যায়। এই পর্যায়ে অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া হয়। অপরাধী মাটিতে হাত উপুড় করে পাতবে। এক নম্বর খেলোয়াড় তখন তার হাতে কিল মারবে। অপরাধী চেষ্টা করবে শেষ মুহূর্তে হাত সরিয়ে নিতে। যদি সে হাত সরিয়ে নিতে পারে এবং এক নম্বর খেলোয়াড়ের কিল মাটিতে পড়ে তাহলে বেঁচে যাবে অপরাধী। এক নম্বর খেলোয়াড় আর তাকে কিল মারতে পারবে না। আর যদি সময়মতো হাত সরাতে না পারে তাহলে কিল চলতেই থাকবে। যতক্ষণ পর্যন্ত এক নম্বর খেলোয়াড়ের কিল মাটিতে না পড়বে ততক্ষণ চলবে কিল। প্রথম খেলোয়াড়ের কিল শেষ হলে একই প্রক্রিয়ায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় খেলোয়াড়ও কিল মারবে। আর অপরাধী চেষ্টা করবে সেই কিল এড়াতে। কিল মারার ব্যাপারটা ভয়ঙ্কর মনে হচ্ছে, তাই না! আসলে মোটেও তা নয়। কিল মারা হয় আলতোভাবে যাতে অপরাধী ব্যথা না পায়।