বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করতেই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয় : আলোচনা সভায় বক্তারা

168

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিনম্র শ্রদ্ধায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করেছে জেলাবাসী। শনিবার বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে জেলা প্রশাসন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। আলোচনাকালে বক্তারা বলেন, বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করতেই পাকহানাদার বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ :
নিজস্ব প্রতিবেদক : দিবসটি উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। জেলা প্রশাসক এ জেড এম নূরুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল। বিশেষ অতিথি ছিলেন, পুলিশ সুপার টি.এম. মোজাহিদুল ইসলাম, নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. শংকর কুমার কুন্ডু, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হুদা, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ, মুক্তিযোদ্ধা মুনিম উদ দৌলাসহ অন্যরা।
অনুষ্ঠানে ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল বলেন, পাক হানাদার বাহিনীরা আমাদের দেশকে মেধাশূন্য করার জন্যই আজকের এই দিনে জ্ঞানী-গুণী, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ অনেক মেধাসম্পন্ন ব্যক্তিদের হত্যা করে। যুদ্ধ করে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা দেশকে স্বাধীন করেন। দেশকে স্বাধীন করতে আরো অনেকেই ভূমিকা রাখেন। বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবের জন্য মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। সেদিন বঙ্গবন্ধু দেশের জন্য ভেবেছিলেন আজকে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাবছেন। দেশের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ডা. শিমুল এমপি আরো বলেন, দেশের সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের মধ্যে একজন আমাদের এই জেলাতে সম্মুখযুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন। আমরা জেলাবাসী গর্বিত এই বীর সন্তানের জন্য। তাই আমরা আমাদের দেশের জন্য প্রাণ দেয়া ব্যক্তিদের কথা ভেবে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাব।
জেলা প্রশাসক এ জেড এম নূরুল হক বলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই আমরা বিজয়ের মাস উদ্্যাপন করার চেষ্টা করছি। আজকের এই দিনটি একটি বিশেষ দিন। এই দিনে আমাদের দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমাদের দেশের অনেক খ্যাতিসম্পন্ন ও উজ্জ্বল নক্ষত্রগুলো পাক হানাদারদের হাতে প্রাণ হারান। দেশকে মেধাশূন্য করতে পাকবাহিনীরা আমাদের দেশের সকল বুদ্ধিজীবীকে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। বুদ্ধিজীবীরাই দেশের প্রাণ। তাদের মৃত্যুর বিনিময়ে আমরা আজকে স্বাধীন দেশ পেয়েছি। আমরা এই স্বাধীন দেশকে বৈষম্য, দুর্নীতি ও দারিদ্র্যমুক্ত হিসেবে দেখতে চাই। অসাম্প্রদায়িকতা দূরীভূত করব। আমাদের এই জেলার উন্নয়নে নিজেদেরকে নিয়োজিত করব। ছোট ছোট উন্নয়নের মধ্য দিয়ে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখব।
পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা আজকে স্বাধীন দেশের বাসিন্দা। এই স্বাধীন দেশ আমরা অনেক কষ্ট ও ত্যাগের বিনিময়ে পেয়েছি। আজকের এই দিনে অনেক জ্ঞাণী মানুষ প্রাণ দিয়েছিলেন। তাঁদের কথা ও দেশের উন্নয়নের কথা ভেবে আমরা আমাদের সন্তানদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলব এবং দেশের কাজে নিয়োজিত করতে উদ্বুদ্ধ করব। আমাদের দেশের এই সুন্দর প্রকৃতির মাঝেও অনেক কিছুই শেখার আছে। সামর্থ্যানুযায়ী আমরা আমাদের সন্তানকে প্রকৃতি, দেশ সম্বন্ধে জানাবার চেষ্টা করব। আমাদের সন্তানদের ভালো কাজের ধাবিত করার চেষ্টা করব।
এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ : এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ (ইবিএইউবি)-এ যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যায়ের নিজস্ব মিলনায়তনে দিবসটি উদ্যাপন উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এবিএম রাশেদুল হাসান। আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যায়ের রেজিস্ট্রার ড. সোহেল আল বেরুনী। আরো বক্তব্য দেন ট্রেজারার ড. শামীমুল হাসান।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের প্রাক্কালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদেরকে হত্যা করে এ দেশকে পিছিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের স্বপ্নকে মুছে ফেলতে পারেনি। আমরা আমাদের কাজের মাধ্যমে শহীদদের বাঁচিয়ে রাখব। শহীদদের আত্মত্যাগকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা ও দেশপ্রেম নিয়ে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আইন অনুষদের প্রধান এস. এম. শহীদুল ইসলাম। সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ডিন ড. দেলোয়ার হোসেন, ব্যবসায় অনুষদের প্রধান ড. মোস্তফা মাহমুদ হাসান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাহরিয়ার কবিরসহ সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ।
এরপর সকাল সাড়ে ১০টায় উপাচার্য প্রফেসর ড. এবিএম রাশেদুল হাসানের নেতৃত্বে রেহাইচরে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের শাহাদতস্থলে স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

গোমস্তাপুর প্রতিনিধি জানান : চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে যথাযথ মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় শ্রমিক লীগ গোমস্তাপুর উপজেলা শাখা আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মোবারক হোসেন টনি। প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমান।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হানানুজ্জামান নুহু, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহফুজা খাতুন, জেলা পরিষদের সদস্য ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হালিমা বেগমসহ অন্যরা।
সন্ধ্যায় রহনপুর বিজিবি ক্যাম্পের সামনে অবস্থিত গণকবরে মোমবাতি প্রজ্বলন ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শনিবার বিকেলে গণকবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও দোয়ার আয়োজন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান, গোমস্তাপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহিদুর রহমান, কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেনসহ সরকারি কর্মকর্তারা।