পোলিও রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা

104

পোলিও রোগের কারণ পোলিওমাইলাইটিস একটি আরএনএ ভাইরাসজনিত রোগ। পোলিও ভাইরাস রোগীর মলমূত্র দিয়ে বের হয়। যদিও আক্রান্ত রোগীর মলমূত্রে প্রথম সপ্তাহেই অধিক পরিমাণে বের হয়। ছয় থেকে আট সপ্তাহ পর্যন্ত তা বের হতে থাকে, অর্থাৎ ওই সময়কাল পর্যন্ত একজন পোলিও রোগী রোগ ছড়াতে পারে।পরে এই জীবাণু মলমূত্র দ্বারা কোনো খাবার বা পানীয়ের সঙ্গে মিশে শিশুর শরীরে প্রবেশ করে। সাধারণত এই সংক্রমণ শিশু-কিশোরদের মাঝে বেশি দেখা যায়।

লক্ষণ : প্রথম দুই-তিন দিন সাধারণ জ্বর থাকে এবং এরপর জ্বর ভালো হয়ে যায়। চার থেকে ছয় দিন মাথা ব্যথা করে, ঘাড় শক্ত হয়ে যায়। সারা শরীর, বিশেষ করে হাত-পায়ের মাংসপেশিতে ব্যথা করে। পোলিও ভাইরাস স্নায়ুতন্ত্রে কোন অংশে আক্রমণ করল তার ওপর নির্ভর করে অন্যান্য রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন—

স্পাইনাল টাইপ : শিশু দাঁড়াতে পারে না। তার হাত-পা অবশ হয়ে যায়।বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পা দুটি, কখনো হাত দুটি, কোনো কোনো সময় এক হাত কিংবা এক পা প্যারালাইজড অর্থাৎ অবশ হয়ে যেতে পারে।

বালবার টাইপ : স্নায়ুতন্ত্রের যেসব কেন্দ্র শ্বাস-প্রশ্বাস, হৃত্স্পন্দন ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে, এ ধরনের পোলিও সেই সব কেন্দ্রকে আক্রমণ করে।

স্পাইনো বালবার টাইপ : এ ধরনের পোলিওতে স্পাইনো ও বালবার দুই ধরনের লক্ষণ একত্রে দেখা যায়।

এনকেফালাইটিস টাইপ : এতে শিশুর মস্তিষ্ক আক্রান্ত হয়। তখন রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে।

চিকিৎসা : এই রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। মস্তিষ্ক আক্রান্ত হওয়ার কারণে শিশু অজ্ঞান হয়ে গেলে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হবে।

পোলিও থেকে শিশুকে রক্ষায় করণীয় : পোলিও রোগের সুন্দর প্রতিষেধকব্যবস্থা আছে। ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন অথবা ক্ষেত্রবিশেষে ইনজেকশন নেওয়ার সাহায্যে পোলিও থেকে শিশুকে মুক্ত রাখতে হবে। শিশুর ছয় সপ্তাহ বয়স থেকে এক মাস পর পর তিন ডোজ পোলিও ভ্যাকসিন প্রতিবার ডিপিটির সঙ্গে দুই ফোঁটা করে শিশুকে খাওয়ানো গেলে এবং চতুর্থ ডোজ দুই ফোঁটা পোলিও টিকা শিশুর ৯ মাস বয়সে হামের টিকা নেওয়ার সময় খাওয়ানো হলে তা শিশুর দেহে পোলিও প্রতিরোধ করে।

এ বছর বিশ্ব পোলিও দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ‘টিকা নিরাপদ এবং জীবন বাঁচায়’। পোলিও রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি সাময়িক কিংবা স্থায়ীভাবে শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং তার অঙ্গ অবশ বা পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। রোগটি প্রতিরোধের ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন প্রফেসর ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী, সাবেক বিভাগীয় প্রধান শিশু স্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল