পুঁজিবাজারে লোকসানের দিক থেকে শীর্ষে সরকারি কোম্পানি

334

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে লোকসানের দিক থেকে শীর্ষে অবস্থান করছে সরকারি কোম্পানিগুলো। এ তালিকার প্রথম পাঁচটি কোম্পানির মধ্যে তিনটিই সরকারি কোম্পানি। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ কোম্পানিগুলোর শেয়ার কিনে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এখন কোনো লভ্যাংশই পাচ্ছেন না। অথচ এ কোম্পানিগুলো একসময় মুনাফামুখী ছিল। কোম্পানিগুলোর সম্পদও রয়েছে অনেক। তাই এদেরকে মুনাফায় ফেরাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, পুঁজিবাজারের লোকসানী (শেয়ারপ্রতি লোকসানের ভিত্তিতে) কোম্পানিগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে সরকারি খাতের শ্যামপুর সুগার মিলস। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটির সর্বশেষ হিসেব বছরে শেয়ারপ্রতি লোকসান ৬৯ টাকা ৭৬ পয়সা। কোম্পানির শেয়ারের দাম ১০ টাকা। বড় অংকের লোকসান করায় শেয়ারপ্রতি লোকসানের অংক শেয়ারের ফেসভ্যালুকেও ছাড়িয়ে গেছে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আরেক সরকারি কোম্পানি জিল বাংলা সুগার মিলস লিমিটেড। কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ৬২ টাকা ৫৬ পয়সা। তৃতীয় স্থানে রয়েছে বেসরকারি খাতের জুট স্পিনার্স লিমিটেড। কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ৪২ টাকা ১০ পয়সা। চতুর্থ স্থানে রয়েছে বেসরকারি খাতের বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন। কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছয় টাকা ২২ পয়সা। পঞ্চম স্থানে রয়েছে সরকারি খাতের উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি লিমিটেড। এ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান সাড়ে পাঁচ টাকা। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের আওতাধীন শ্যামপুর সুগার ও জিল বাংলা সুগার মিলের লোকসান প্রসঙ্গে করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একেএম দেলোয়ার হোসেন জানান, বর্তমানে মিলগুলোতে লোকসান কমে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদন খরচের অর্ধেক মূল্যে চিনি বিক্রি করায় মিলগুলো লোকসানে পড়ে গেছে। তাছাড়া মুনাফা হওয়ার জন্য যে পরিমাণ উৎপাদন করা দরকার সে পরিমাণ আখ চাষ হতো না, ফলে লোকসান করতে হয়েছে। পাশাপাশি নতুন মজুরি কাঠামোর কারণে খরচ বেড়ে বড় লোকসান গুণতে হয়েছে। এখন চিনির দাম বাড়ানো হয়েছে। আখ চাষিদের নানাভাবে আখ চাষে আগ্রহী করা হয়েছে। তাছাড়া খরচ কমানোর পাশাপাশি বিভিন্নভাবে রাজস্ব বাড়ানোর প্রচেষ্টা চলছে। তাই চলতি অর্থবছরে লোকসান অনেকটাই কমে গেছে। শিগগির কোম্পানিগুলো আরো ভালো অবস্থানে চলে আসবে। দেলোওয়ার হোসেন বলেন, বাজারে চিনির দাম স্থিতিশীল রাখতে করপোরেশন কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে আমরা সফল। পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যখন এ কোম্পানিগুলো বাজারে তালিকাভুক্ত হয় তখন বড় অঙ্কের মুনাফা হতো। কিন্তু পরে সময়ের সাথে সাথে লোকসান বেড়ে যাওয়ায় কোম্পানিগুলোর শেয়ারহোল্ডাররা চরম হতাশ। চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, বাজার নিয়মে চিনি বিক্রির সুযোগ পেলে সরকারি চিনি মিলগুলো ভালো মুনাফা করতে পারে। কিন্তু সরকার চিনির দাম স্থিতিশীল রাখতে কম দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। শেয়ার বিনিয়োগকারীরা বলছেন, পুঁজিবাজারে সরকারি কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অনেক বেশি। এ অবস্থায় সরকারি কোম্পানিগুলো যদি বছরের পর বছর ধরে লোকসান করতে থাকে তাহলে বিনিয়োগকারীরা কোথায় আস্থা রাখবেন। তাই সরকারি কোম্পানিগুলোকে মুনাফায় ফিরিয়ে আনতে কাজ করা দরকার। এসব প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ বলেছেন, সরকারি কোম্পানিগুলোর প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা অনেক বেশি। এজন্যই দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজারে সরকারি কোম্পানি নিয়ে আসার কথা বলা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই মুনাফামুখী কোম্পানিগুলোকে নিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় যে উদ্দেশ্যে এ কোম্পানিগুলোকে আনার কথা বলা হচ্ছে সে উদ্দেশ্যই ভেস্তে যাবে। বাজারে অ-তালিকাভুক্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রতি বছর ভালো অঙ্কের মুনাফা করছে এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে বেশ কয়েকটি। এ কোম্পানিগুলোতে শেয়ার বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ অনেক। এ ধরনের মুনাফামুখী কোম্পানি পুঁজিবাজারে নিয়ে আসলে তা পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক হবে।
তথ্যে দেখা গেছে, ১৭টি সরকারি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে। এরমধ্যে লোকসানে রয়েছে ৭টি কোম্পানি: শ্যামপুর, জিল বাংলা, উসমানিয়া গ্লাস ছাড়াও এটলাস বাংলাদেশ, ন্যাশনাল টিউব, বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড (বিডি এ) এবং মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজও লোকসান করছে প্রতি বছর। সরকারি খাতের যে কোম্পানিগুলো ভালো মুনাফা করছে সেগুলো হলো- বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস কোম্পানি (বিএসসিসিএল), বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি), ইস্টার্ন ক্যাবলস, ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্ট, আইসিবি, যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (যমুনা অয়েল), পদ্মা অয়েল কোম্পানি (পদ্মা অয়েল), পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানি এবং তিতাস গ্যাস।