ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানসমূহের সম্ভাব্য সংকট ও করণীয়

391
করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় ব্যাংকিং খাত সংকটে পড়েছে। আগামীতে এ সংকট আরও প্রকট হতে পারে। সম্ভাব্য সংকট থেকে ব্যাংকিং খাত উত্তরণের উপায় হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। এমন কিছু উদ্যোগেই কিছুটা কমে এসেছে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ। তবে এখনো থাকা খেলাপি ঋণের প্রায় অর্ধেকই (৪৫.৮ শতাংশ) রয়েছে ৫ ব্যাংকে।
একইভাবে করোনার প্রভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ব্যাংক নামে খ্যাত ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের ঋণ আদায় আশংকাজনকভাবে কমেছে মানুষের ব্যবসা বাণিজ্য মন্দা, নানাবিধ অপপ্রচার, স্থানীয় প্রশাসন ও কিছু আমলাদের দায়িত্ব জ্ঞানহীন হুমকি, সিদ্ধান্ত, প্রচার ইত্যাদি কারণে তাই দেশের অন্যান্য সেক্টরের ন্যায় ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানসমূহে এক অশনি সংকেত বা অশুভ লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ব্যাংকিং অস্থিরতা নিয়ে সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সকল সচেতন মহল ভাবলেও ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান নিয়ে কেউ তেমন চিন্তা করে বলে মনে হয় না। অথচ এই সেক্টরের সাথে জড়িত কয়েক কোটি মানুষ। তাই কেউ ভাবুক বা না ভাবুক এই সেক্টরের সাথে যারা জড়িত তাদের ভাবনা তাদের ভাবা প্রয়োজন । আগামী ছয়মাসে মধ্যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ব্যবসা বাণিজ্য সচল করতে না পারলে বা ব্যবসা বাণিজ্য সচল করার জন্য সহজ শর্তে ঋণ দিতে না পারলে খেলাপি ঋণ আকাশ চুম্বি রূপ ধারণ করতে পারে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানই লসে চলে যেতে পারে, তারল্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করতে পারে।এই সংকট মোকাবিলা জন্য একদিকে যেমন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ব্যবসা বাণিজ্য সচল করার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে, তেমনি অর্থের যোগান জরুরি হবে। কিন্তু আগামী এক বছরের জন্য ব্যাংক থেকে তেমন ঋণ সুবিধা পাওয়া যাবে বলে আমার মনে হয় না, তাই প্রতিষ্ঠানগুলো অভ্যন্তরীণ অর্থ সংস্থানের উপর জোর দেওয়া জরুরি হয়ে পড়বে। সেক্ষেত্রে সদস্যদের নিকট হতে সেভিংস সংগ্রহের উপর প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর এমআরএ এর যে সকল বিধি নিষেধ রয়েছে তা শিথিল করার বিষয়ে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। পাশাপাশি ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের অর্থ যোগানদাতা প্রতিষ্ঠান বা আশা ভরসার স্থল পিকেএসএফ কিভাবে এসব প্রতিষ্ঠানের নিকট আশির্বাদ আদর্শ পুষ্ট হয়ে পাশে থাকবে সেটিও এই মুহূর্তে সময় এর দাবী বলেই আমার কাছে মনে হয়। সকলের সম্মিলিত উদ্যোগই কেবল পারে জাতির এই সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলা করতে।
মোঃ সেলিম উদ্দীন
পরিচালক, ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচী
আইডিএফ।