চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৮ বছরে জনসংখ্যা বেড়েছে সাড়ে তিন লাখের উপরে

206

আগামী বৃহস্পতিবার বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। ‘জনসংখ্যা ও উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ২৫ বছর : প্রতিশ্রুতির দ্রুত বাস্তবায়ন’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সারাদেশের মতো চাঁপাইনবাবগঞ্জেও দিবসটি পালিত হবে। এ উপলক্ষে জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় র‌্যালি, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপদ যৌনজীবন ও নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করা, ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গর্ভবতী মায়ের পরিচর্যা, প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, দীর্ঘমেয়াদি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করে পরিকল্পিত পরিবার গঠন, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা, পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে জনসচেতনা বৃদ্ধি, জন্মহার কমিয়ে আনাসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে চাঁপাইনবাবগঞ্জে পালিত হবে এবারের বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুস সালাম বলেন- ১৯৯০ এর দশকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ১.৪১। ২০১০ সালে ১.৩৪ এবং বর্তমানে ০.৯৮ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে এ হার ৬৫ শতাংশে নামিয়ে আনা গেলে তখন আর জনসংখ্যা বাড়বে না। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। তবে আমাদের সামনে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আর তা হলো অসচেতনতার কারণে এখনো অনেক প্রসূতি বাড়িতেই প্রসব করাচ্ছেন। যার ফলে মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। তাই আমরা নিরাপদ প্রসবের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের ওপর জোর দিচ্ছি। তিনি বলেন- বাল্যবিয়ের কারণেও আমাদের দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে। তাই বাল্যবিয়ে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা, কমবয়সী দম্পতিদের দীর্ঘমেয়াদি পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করা, বাড়িতে প্রসব না করিয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দক্ষ ব্যক্তি দ্বারা প্রসব করানোসহ বিভিন্ন বিষয়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে পরিবার পরিকল্পনা দফতরের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করছেন। তিনি বলেন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার না করায় উচ্চহারে অনাকাক্সিক্ষত গর্ভধারণ হচ্ছে। বলা যায়, গর্ভধারণের ২৮ ভাগই হচ্ছে এ কারণে। অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতি ব্যবহার করার জন্য তিনি সবারর প্রতি আহ্বান জানান।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মোট জনসংখ্যা ১৬ লাখ ৪৭ হাজার ৫২১ জন; যা ২০০১ সালে ছিল ১৪ লাখ ২৫ হাজার ৩২২ জন। অর্থাৎ ১০ বছরে জন্যসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ২ লাখ ২২ হাজার ১৯৯ জন। উপজেলাভিত্তিক জনসংখ্যার পরিসংখ্যানে জানা যায়, ২০০১ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় মোট জনসংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৫২ হাজার ৬৫০ জন, যা দশ বছরে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৫ লাখ ৩০ হাজার ৫৯২ জনে। শিবগঞ্জে ২০০১ সালে ছিল ৫ লাখ ৮ হাজার ৯২ জন, ২০১১ সালে তা গিয়ে দাঁড়ায় ৫ লাখ ৯১ হাজার ১৭৮ জনে। ভোলাহাটে ২০০১ সালে ছিল ৯২ হাজার ১৪৯ জন। ২০১১ সালে বৃদ্ধি পেয়ে তা দাঁড়ায় ১ লাখ ৩ হাজার ৩০১ জনে। গোমস্তাপুরে ২০০১ সালে ছিল ২ লাখ ৪০ হাজার ১২৩ জন। ২০১১ সালে তা হয় ২ লাখ ৭৫ হাজার ৮২৩ জন। নাচোল উপজেলায় ২০০১ সালে জনসংখ্যা ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ৩০৮ জন; যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০১১ সালে দাঁড়ায় ১ লাখ ৪৬ হাজার ৬২৭।
২০১১ সালের আদমশুমারির পর পেরিয়ে গেছে আরো ৮ বছরের বেশি সময়। এই ৮ বছরে জেলায় আরো অন্তত দেড় লাখ মানুষ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অনেকের ধারণা।