গোমস্তাপুরে সমলয়ে যান্ত্রিক পদ্ধতি চারা রোপণের উদ্বোধন ও মাঠ দিবস

1103

ফলন বৃদ্ধি ও শ্রমিক খরচ কমাতে গোমস্তাপুর উপজেলায় সমলয়ে বোরো ধান চাষাবাদের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ডিসেম্বরের শেষের দিকে উপজেলার রহনপুর ইউনিয়নের ষাড়ব্রুজ এলাকায় ট্রে পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন শুরু করা হয়। ওই ব্লকের কৃষকরা কৃষি প্রণোদনা পেয়ে ও উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে এবার বোরোধান চাষাবাদ শুরু করেছের। ৫০ একর জমিতে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রীড জাত এসএল ৮ এইচ ধানের চারা তৈরি করে যন্ত্রের সাহায্যে রোপণ করা হচ্ছে। এই আধনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ধানের উৎপাদন খরচ কমানোসহ শ্রমিক সংকট নিরসন হবে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। আজ সকালে রাধানগর ইউনিয়নের লেবুডাঙ্গা সাগরইল মাঠে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্র দিয়ে চারা রোপণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন গোমস্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন রেজা। পরে একই স্থানে অনুষ্ঠিত মাঠ দিবসে সভাপতিত্ব করেন গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত আনজুম অনন্যা। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) জান্নাতুল ফেরদৌস, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান নূহ, রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মতিউর রহমান , উপজেলা সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক, কৃষি যন্ত্রপাতি প্রকল্পের মনিটরিং কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ সাইদুর রহমান, কৃষক সাদিকুল ইসলামসহ কৃষি বিভাগের অন্য কর্মকর্তারা।
গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের সাগরইল ব্লকের কৃষি প্রণোদনা প্রাপ্ত ৬০ জন কৃষককে তাঁদের দেড়শ বিঘা (৫০ একর) জমিতে এই পদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কৃষির সর্বাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে উচ্চ ফলনশীল একই জাত ব্যবহার, ট্রে-তে বীজ বপন, চারা রোপনে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ব্যবহার, সুষম সার ব্যবহার ও আন্তঃপরিচর্যা, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা, ধান কর্তনে কম্বাই- হারভেস্টার ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো, উৎপাদন খরচ সাশ্রয় করা, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ভরা মৌসুমে কৃষি শ্রমিকের সংকটের সমাধান সম্ভব হবে এই সমলয় চাষাবাদে। রোপণ পদ্ধতি দেখে কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হয়েছে।
কৃষক সাদিকুল ইসলামসহ অন্যকৃষকরা জানান, এই পদ্ধতিতে চারা বপণ ও রোপণ করতে কখনও দেখেনি। প্রথমবারের মত উপজেলা কৃষি বিভাগের তত্বাবধানে ৫০ একর জমিতে তিনিসহ মোট ৬০ জন কৃষক সমলয় পদ্ধতিতে ধান চাষাবাদ করছেন। খরচ কম, শ্রমিক লাগে কম। আশা করছেন ভাল উৎপাদন হবে তাঁদের। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার বলেন সমলয় পদ্ধতিতে ধান চাষে অর্থের অপচয় কম ও সময় সাশ্রয় হয়। সফলভাবে ফলন উৎপাদনের জন্য সমলয়ে চাষাবাদ পদ্ধতিকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। কৃষকরা এই পদ্ধতিতে পাচ্ছেন বীজ,সার ও কৃষি উপকরণ। ট্রে পদ্ধতিতে কৃষক ভাল মানের চারা উৎপাদন করে অল্প সময়ের মধ্যে অধিক জমিতে ফলাতে পারবে। এছাড়া মেশিনের মাধ্যমে ধান রোপণ, কাটা, মাড়াইসহ সকল প্রক্রিয়া মেশিনের সাহায্যে সম্পন্ন হবে। ফলে শ্রমিক সংকট থেকে মুক্তি ও অল্প খরচে ধান রোপণ ও মাড়াই করে ঘরে তুলতে পারবেন কৃষক। খরচ কমবে এবং অধিক লাভবান হবেন বলে জানান তিনি। প্রধান অতিথি হুমায়ুন রেজা বলেন, খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্য ধানের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির প্রয়োজন। সমলয় পদ্ধতিতে ট্রেতে চারা উৎপাদনের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তির প্রসারসহ ধানের উৎপাদন খরচ কমানো সম্ভব। খরচ কম হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হবে। পরে কৃষককের মধ্যে ভর্তুকির রাইস ট্রান্সপ্লান্টারসহ অন্যান্য যন্ত্র বিতরণ করা হয়।