গভীর শ্রদ্ধায় ভাষা শহীদ ও ভাষা সৈনিকদের স্মরণ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাবাসীর

127

গভীর শ্রদ্ধায় ভাষা শহিদ ও ভাষা সৈনিকদের স্মরণ করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাবাসী। মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ প্রাঙ্গনে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শহিদ মিনারে একুশের প্রথম প্রহরে এবং প্রত্যুষে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে ভাষা শহিদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জেলাবাসী।
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’… একুশের এ অমর সংগীতের সঙ্গে শিশু, কিশোর, তরুণ, বৃদ্ধÑ সব বয়সের মানুষ এসেছিলেন মায়ের ভাষার জন্য যাঁরা অকাতরে দিয়ে গেছেন প্রাণ তাঁদের শ্রদ্ধা জানাতে।
দিবসটি উপলক্ষে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ, প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করে।
জেলা প্রশাসন : একুশের প্রথম প্রহরে প্রথমেই শ্রদ্ধা জানান জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন, স্থানীয় সরকার শাখার উপপরিচালক ও সরকারের উপসচিব দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, (রাজস্ব) আনিছুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রট আসিফ আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) পাপিয়া সুলতানা, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রওশন আলী। এসময় জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান পুলিশ সুপার এএইচ এম আবদুর রকিব, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপস) আবুল কালাম সাহিদ। এসময় সদর থানার অফিসার ইনচার্জ এ কে এম আলমগীর জাহান, ডিবির অফিসার ইনচার্জ বাবুল উদ্দিন সরদারসহ অন্যান্য কর্মকর্তা।
এপর শ্রদ্ধা জানান মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষে জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাক হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা তরিকুল আলমসহ অন্যরা।
শ্রদ্ধা জানান জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আফাজ উদ্দিন, জেলা পরিষদ সদস্য আব্দুল জলিল মাসুদসহ অন্যরা।
শ্রদ্ধা জানান চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোখলেসুর রহমানসহ কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাবৃন্দ।
শ্রদ্ধা জানান সিভিল সার্জন ডা. এস এম মাহমুদুর রশিদসহ অন্যরা।
শ্রদ্ধা জানান এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোজাহার আলী প্রামানিক, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল আহসান, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ইফতেখার মজিদসহ বিভিন্ন দপ্তর প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ।
এদিকে মঙ্গলবার ভোর ৬ টার পর থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা , জাসদের নেতাকর্মীরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শুদ্ধভাবে বাংলাভাষা চর্চার আহ্বান জেলা প্রশাসকের
মহান ভাষা আন্দোলনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মরহুম ডা. আ.আ.ম. মেসবাহুল হক বাচ্চু ডাক্তার, মরহুম অ্যাডভোকেট ওসমান গণি ও বিশিষ্ট নাট্যকার মমতাজ উদদীন আহমদ ভাষা সৈনিক ছিলেন। তাঁরা সবাই ভাষা সৈনিক, আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন, আন্দোলন সংগঠিত করেছেন। কাজেই ভাষা আন্দোলনে এই জেলার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসনের দুদিনব্যাপী একুশের কর্মসূচির অংশ হিসেবে আয়োজিত আলোচনা পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
জেলা প্রশাসক নতুন প্রজন্মকে বাংলাভাষা ভালোভাবে জানা এবং শেখার আহ্বান জানিয়ে বলেন- তোমাদের মাঝে আমরা বেঁচে থাকব, তোমাদের হাত ধরে একটি উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে উঠবে, তোমাদেরকেই সামনে রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখছেন একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হবে বাংলাদেশ এবং সেই উন্নত স্বপ্নের বাংলাদেশের মূল কাণ্ডারি তোমরা। সুতরাং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং ভাষা আন্দোলনের চেতনা তোমাদের অন্তরে থাকা উচিত। সময় এসেছে বাংলা ভাষাকে শুদ্ধভাবে জানা এবং চর্চা করার।
বিকাল ৪ টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বঙ্গবন্ধু মঞ্চে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, পুলিশ সুপার এ এইচ এম আবদুর রকিব, নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. শংকর কুমার কুন্ডু, সিভিল সার্জন ডা. এস এম মাহমুদুর রশিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রওশন আলী। এসময় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রুহুল আমিন উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা শেষে শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে চিত্রাঙ্কন, রচনা, কবিতা, হাতের সুন্দর লেখাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিবৃন্দ। পরে সন্ধায় স্থানীয় শিল্পিদের নিয়ে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এদিকে, ইসলামিক মিশন পলশার উদ্যোগে একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল, বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ঔষধ বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলোচনা সভায় একুশে ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য নিয়ে প্রধান আলোচক ছিলেন, বালুগ্রাম আদর্শ কলেজের প্রভাষক জাহাঙ্গীর আলম। পরে অনুষ্ঠানে বিনামূল্যে ১০০ জনকে চিকিৎসা ও ওষুধ বিতরণ করা হয়। এছাড়াও গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ শবে মেরাজ উপলক্ষে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।