কালের সাক্ষী হাটিকুমরুলের নবরত্ম মন্দির

1011

প্রায় পাঁচশ বছরের পুরনো মন্দির এলাকার ঐতিহ্য ও জনপদের ইতিহাস বুকে নিয়ে দাড়িয়ে আছে এই নবরতœ মন্দির। পর্যটক ও প্রতœতাত্তি¦ক প্রেমীদের পদচারণায় মাঝে মাঝে মুখরিত হয়ে ওঠে এই মন্দির এলাকা। এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে মন্দির। সিরাজগঞ্জ জেলা শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে সলঙ্গা থানার হাটিকুমরুল গ্রামটিতে দাঁড়িয়ে আছে শতাব্দী প্রাচীনতম বিখ্যাত নবরতœ মন্দির। দুই পাশে ধান ক্ষেত আর গ্রামীণ সবুজ জনপদ পেরিয়ে মেঠো পথ দিয়ে আঁকাবাঁকা হয়ে চলে গেছে উত্তর পূর্ব দিকে। এই পথ দিয়ে গেলেই দেখা মিলবে পোড়ামাটির কাব্যে গাঁথা এই প্রততœতাত্বিক নিদর্শন নবরতœ মন্দির। বাংলাদেশে প্রাচীন যেসব মন্দির দেখতে পাওয়া যায় সেগুলোর অন্যতম একটি হাটিকুমরুল নবরতœ মন্দির। নির্মানে দিক থেকে উঁচু একটি বেদীর উপর নবরতœ পরিকল্পনায় নির্মিত মন্দিরের প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্যে ১৫৪ মিটার এবং প্রস্থ ১৩২৫ মিটার। তিনতলা বিশিষ্ট এই স্থাপনার উপরের রতœ বা চূড়াগুলো প্রায় অযন্তে ধ্বংস হয়ে গেছে। মূল মন্দিরের বারান্দায় সাতটি এবং ভেতরের দিকে পাঁচটি প্রবেশপথ আছে। হাটিকুমরুল নবরতœ মন্দির তিনতলা বিশিষ্ট। মূল মন্দিরের আয়তন প্রায় ১৫ বর্গমিটার। পুরো মন্দিরের বাইরের দিক পোড়া মাটির অলঙ্করণে ঢাকা। ফুল, ফল, লতাপাতা আর দেবদেবীর মূর্তি খচিত এই ফলক মর্ধ্যযুগীয় শিল্পকর্মে পরিপƒণ। সংস্কার ও কালের বিবর্তনে ওইসব এখন নেই বললেও চলে। এই মন্দিরে আশ পাশে আরো তিনটি মন্দির রয়েছে। পোড়া মাটির ফলক সমৃদ্ধ ৯টি চূড়া রয়েছে নবরতœ মন্দিরে। বর্তমানে ৯টি চূড়ার প্রায় সবগুলোই ধ্বংস। একসময় মন্দিরের মূল স্তম্ভের উপরে পোড়ামাটির সুশোভিত চিত্র ফলক। জানা যায়, ১৭০৪ থেকে ১৭২৮ খ্রিস্টাব্দে নবাব মুর্শিদকুলির শাসনামলে তার নায়েব জনৈক রামনাথ ভাদুরী স্থাপন করেন এই নবরতœ মন্দিরটি। মথুরার রাজা প্রাণনাথের অত্যন্ত প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন জমিদার রামনাথ ভাদুরী। মথুরার রাজা প্রাণনাথ দিনাজপুর জেলার ঐতিহাসিক কান্তজির মন্দির নির্মাণে বিপুল অর্থ ব্যয় করে সংকটে পড়ে যান তিনি। এতে বাৎসরিক রাজস্ব পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন তিনি। এদিকে রামনাথ ভাদুরী মথুরা থেকে অর্থশূন্য হাতে ফিরে এসে। পরে বন্ধুত্বের খাতিরে নিজ কোষাগার থেকে টাকা দিয়ে রাজা প্রাণনাথের বকেয়া দিয়ে কান্তজির মন্দিরের আদলে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুলে ১টি মন্দির নির্মাণের শর্তে পরিশোধ করে দেন। শর্ত মোতাবেক রাজা প্রাণনাথ কান্তজির মন্দিরের অবিকল নকশায় এ নবরতœ মন্দির নির্মাণ করে দেন। তবে যেভাবেই তৈরি হোক, মন্দিরটি তার স্বরুপে এখনো আলো ছড়াচ্ছে। নবরতœ মন্দিরের উত্তর পাশেই শিব-পার্বতী মন্দির, তার পাশেই রয়েছে দক্ষিণপাশে পুকুরের পাড় ঘেঁষে রয়েছে পোড়া মাটির টেরাকোটা কারু কার্যখচিত শিবমন্দির। স্থানীয় বাসিন্দা নিখিল দাস, জিতেন দাস নরেশ হালদার ও বিশ্বনাথ অধিকারীসহ অনেকেই পরিবর্তন ডটকমকে জানান, দীর্ঘদিন অবহেলা থাকা নবরতœ মন্দিরটি সংস্কারের পর থেকেই ব্যাপক আয়োজনে দুর্গোৎসব পালিত হয়। পূজার সময় শুধু হিন্দু নয়, মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষদের মাঝেও আনন্দ উৎসাহের কোনো কমতি থাকে না। নবরতœ মন্দির পুজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অভিরাম পাল ও সাধারণ সম্পাদক দীলিপ কুমার জানান, দীর্ঘ দিন সংস্কারের অভাবে এখানে কোনো পূজা আর্চনা বন্দ ছিল। সংস্কারের পর থেকে ৭ বছর ধরে এ মন্দিরে নতুন করে পূজা উৎযাপন শুরু হয়েছে।