ত্বকের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে যা করবেন শীতকালে

ত্বকের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে যা করবেন শীতকালে শীতকালে ত্বকের প্রাকৃতিক সুরক্ষামূলক স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ত্বক শুষ্ক, রুক্ষ ও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। শীতকালে তাই ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয়। এ সময় ত্বকের বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। শীতকালে প্রায় সবারই ঠোঁট ফেটে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। শুষ্ক বাতাস ও পানিশূন্যতার কারণে ঠোঁট রুক্ষ ও ফেটে যায়। এ সমস্যা এড়াতে প্রচুর পানি পান করা, ঘরে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা এবং নিয়মিত পেট্রোলিয়াম জেলি বা মোমযুক্ত লিপবাম লাগানো জরুরি। বাইরে বের হলে সানস্ক্রিনযুক্ত লিপবাম ব্যবহার করা উচিত। ঠোঁট চাটা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এতে সাময়িক স্বস্তি মিললেও পরে সমস্যা আরও বেড়ে যায়। শীতকালে ফাটা হিল বা গোড়ালির সমস্যাও খুব সাধারণ। শুষ্ক ত্বকের কারণে গোড়ালিতে ফাটল সৃষ্টি হয়, যা অনেক সময় ব্যথাদায়ক হয়ে ওঠে। রাতে ঘুমানোর আগে ফাটা হিলে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে প্লাস্টিকের মোড়ক দিয়ে ঢেকে মোজা পরলে আর্দ্রতা ধরে রাখা যায় এবং উপকার পাওয়া যায়। শীতের ঠাণ্ডা বাতাস ও ঘন ঘন হাত ধোয়ার ফলে হাতের ত্বক খুব সহজেই শুষ্ক হয়ে যায়। এ সমস্যা এড়াতে দিনে একাধিকবার, বিশেষ করে সকালবেলা ও রাতে ঘুমানোর আগে গ্লিসারিনভিত্তিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। বাইরে বের হলে ঠাণ্ডা ও বাতাস থেকে হাত রক্ষার জন্য গ্লাভস পরা অত্যন্ত উপকারী। অ্যাকজিমা হলো ত্বকের একটি প্রদাহজনিত রোগ। এর লক্ষণ হিসেবে শুষ্ক, লালচে ও চুলকানিযুক্ত ত্বক দেখা যায়। শীতকালে এ সমস্যা বেড়ে যায়। অ্যাকজিমা নিয়ন্ত্রণে রাখতে তেলভিত্তিক মলম দিয়ে ঘন ঘন ময়েশ্চারাইজ করা দরকার। অতিরিক্ত ঘাম বা গরম এড়াতে স্তরে স্তরে পোশাক পরা উচিত। প্রয়োজনে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সোরিয়াসিস সাধারণ শুষ্ক ত্বকের চেয়ে বেশি জটিল একটি সমস্যা, যা ইমিউন সিস্টেমের ভারসাম্যহীনতার কারণে হয়। শুষ্ক বাতাস, ঠাণ্ডা আবহাওয়া ও সূর্যালোকের অভাব শীতকালে এ রোগকে আরও তীব্র করে তোলে। এ ক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য হালকা গরম পানিতে গোসল করা, নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা এবং ঘরে হিউমিডিফায়ার রাখা উপকারী। সঠিক চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। শীতকালে শুষ্ক ত্বকের কারণে চুলকানির সমস্যাও বেড়ে যায়। এ সময় স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ ও পর্যাপ্ত তরল পান করা অত্যন্ত জরুরি। গোসলের সময় হালকা গরম পানি ও মৃদু সাবান ব্যবহার করা উচিত এবং গোসলের পর ত্বক আলতোভাবে মুছে গ্লিসারিনভিত্তিক ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। প্রয়োজনে দিনের মধ্যে একাধিকবার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে। দীর্ঘ সময় রোদ ও ঠাণ্ডা বাতাসে থাকা এড়িয়ে চলা উচিত।শীতকালে খুশকি ও মাথার ত্বকের চুলকানি অনেকের জন্য বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণে অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করা উপকারী। তবে অতিরিক্ত শ্যাম্পু করা থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ এতে মাথার ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা নষ্ট হয়। প্রতিদিনের পরিবর্তে প্রতি দুই থেকে তিন দিন পর পর চুল ধোয়া ভালো। চুল নরম ও আর্দ্র রাখতে নিয়মিত কন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিত এবং অতিরিক্ত হিট স্টাইলিং এড়িয়ে চলতে হবে। বাইরে বের হলে টুপি ব্যবহার করে চুল শীতের প্রভাব থেকে রক্ষা করা যেতে পারে। ডা. তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী লেখক : চর্ম, যৌন ও এলার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ
৩ প্রাকৃতিক পানীয় ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দূর করে

৩ প্রাকৃতিক পানীয় ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দূর করে ফ্যাটি লিভার এমন একটি রোগ যা বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষকে সমস্যায় ফেলে। যদিও ৯০-১০০% অ্যালকোহল ব্যবহারকারীদের মধ্যে এটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, তবে অন্যান্য বিপাকীয় এবং জীবনযাপনের ধরন সংক্রান্ত কারণও এর পেছনে দায়ী হতে পারে। আমেরিকান লিভার ফাউন্ডেশনের মতে, প্রায় ১০ কোটি আমেরিকানের অ্যালকোহলবিহীন ফ্যাটি লিভার রোগ রয়েছে। যদিও পরিপূরক এবং ওষুধ গ্রহণ সমস্যার সমাধান করতে পারে, তবে সেসব বেশ ব্যয়বহুলও। ফ্যাটি লিভার মোকাবিলা করার সবচেয়ে সহজ উপায়ের মধ্যে একটি হলো যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক পদ্ধতি বেছে নেওয়া। এর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যকর খাওয়া, ব্যায়াম করা এবং আরও অনেক কিছু। প্রতিদিনের খাবারের রুটিনে কিছু স্বাস্থ্যকর পানীয় যোগ করলে তা ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দ্রুত কমাতে সাহায্য করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক- গ্রিন টি : গ্রিন টি একটি স্বাস্থ্য পাওয়ার হাউস যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অসংখ্য উপকারিতা প্রদান করে। এটি ক্যাটেচিন নামক একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর যা অত্যন্ত শক্তিশালী। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিভারের কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে, যা ফ্রি র্যাডিকেলকে নিউট্রাল করে। এটি প্রদাহও কমায় যা ফ্যাটি লিভার রোগের অনুঘটক বলে মনে করা হয়। ২০১৫ সালে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড এক্সপেরিমেন্টাল মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে গ্রিন টি পানকারীদের লিভারে ফ্যাট জমা হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। গ্রিন টি খাবার থেকে ফ্যাট শোষণকারী এনজাইম, যেমন প্যানক্রিয়াটিক লিপেজের হজমে বাধা দেয়, যা ওজন কমাতেও সাহায্য করে। আদা চা : আদা ৪০০ টিরও বেশি জৈব সক্রিয় যৌগ এবং ৪০টি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ দিয়ে ভরপুর। হেপাটাইটিস মান্থলিতে প্রকাশিত ২০১৬ সালের একটি গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের বারো সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন দুই গ্রাম আদার সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়েছিল এবং দেখা গেছে যে এটি ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে এবং লিভারে প্রদাহের চিহ্ন হ্রাস করে। সুতরাং, দিনে অন্তত এক কাপ আদা চা খেলে তা কেবল ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করতে পারে না, বরং এটি রক্তচাপ এবং বমি বমি ভাবও কমায়। সেইসঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। অ্যাপল সাইডার ভিনেগার : অ্যাপল সাইডার ভিনেগার এমন একটি পানীয় যা কারও কারও জন্য সত্যিই ভালো কাজ করে। যারা ফ্যাটি লিভারের মাত্রা কমাতে চান, তাদের জন্য এটি সম্পূর্ণ উপকারী। পানীয়টি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ। ২০২১ সালে BMC কমপ্লিমেন্টারি মেডিসিন অ্যান্ড থেরাপিজে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, আপেল সাইডার ভিনেগার টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের প্লাজমা গ্লুকোজ কমাতে বেশ কার্যকরী। গ্লুকোজ এবং ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করলে তা ফ্যাটি লিভারের জন্য অত্যন্ত উপকারী হতে পারে। তবে এটি সঠিকভাবে পাতলা করতে এবং স্ট্র দিয়ে পান করতে ভুলবেন না, কারণ এটি এনামেলের ক্ষতি করতে পারে।
কখন আক্কেল দাঁত তোলা উচিত

কখন আক্কেল দাঁত তোলা উচিত আক্কেল দাঁত ওঠার যন্ত্রণা অনেকর ক্ষেত্রেই ভয়াবহ হয়ে দাঁড়ায়। অনেকের আবার আক্কেল দাঁত তুলে ফেলারও প্রয়োজন হয়। মুখের ভেতরে বেকায়দায় কোনো জায়গায় দাঁত ওঠা, ব্যথা, ক্যাভিটি, প্রদাহ, আক্কেল দাঁত সংলগ্ন অন্য কোনো দাঁত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ইত্যাদি কারণে এই দাঁত তুলে ফেলার প্রয়োজন হয়। কিন্তু এ ধরনের কোনো সমস্যা দেখা দেওয়ার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে আক্কেল দাঁত তুলে ফেলা প্রয়োজন কিনা তা পর্যাপ্ত পরীক্ষা নিরীক্ষার পর একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিশেষত মেক্সিলোফেসিয়াল সার্জন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। আক্কেল দাঁত কি: অনেকে মনে করেন ‘আক্কেল দাঁতের’ সঙ্গে জ্ঞানবুদ্ধি বা আক্কেলের সম্পর্ক রয়েছে। তবে এর সঙ্গে কোনো বিশেষ সম্পর্ক নেই। সাধারণত ১৭-২৫ বছরের মধ্যে উপরের ও নিচে উভয় চোয়ালের তৃতীয় বা দাঁতগুলো উঠে। এমন দাঁতের সংখ্যা ৪টি যাদের মেডিকেলের পরিভাষায় বলা হয় ‘থার্ড মোলার টুথ’। কখন ব্যথা হয়: বেশিরভাগ দাঁত ওঠার সময় ব্যথা অনুভূত না হলেও আক্কেল দাঁত বা থার্ড মোলার টুথ ওঠার ক্ষেত্রে অনেকের ব্যথার অনুভূতি হয়। প্রতিটি দাঁত উঠতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গার প্রয়োজন হয়। অনেকের ক্ষেত্রে দাঁত ওঠার সময় জায়গায় অভাব হয় যেমন-চোয়াল ছোট বা অতিরিক্ত দাঁতের উপস্থিতি বা সঠিক স্থানে দাঁত না ওঠা ইত্যাদি কারণে প্রয়োজনীয় স্থান সংকুলান না হলে দাঁত ওঠার সময় তার চারপাশে যে চাপ প্রয়োগ করে তাতে ব্যথা অনুভূত হয়। অনেক ক্ষেত্রে ব্যথা স্বাভাবিক মাত্রার ভেতর থাকে তবে ক্ষেত্রবিশেষে ইনফেকশন বা প্রদাহজনিত পরিস্থিতিতে আরও গুরুতর করে তোলে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি হয়ে পড়ে। দাঁত কখন তোলা হয়: যে কোনো দাঁত তোলার ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। কেননা সময়ের আগে দাঁত পড়ে যাওয়া বা দাঁত তুলে ফেলার ফলে ভবিষ্যতে বিভিন্ন জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। যেমন- দাঁত আঁকাবাঁকা হওয়া, সঠিক স্থানে দাঁত না ওঠা অথবা প্রয়োজনীয় স্থান সংকুচিত হয়ে দাঁত উঠতে বাধাগ্রস্থ হওয়া ইত্যাদি। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ, পর্যাপ্ত বয়স, ইনফেকশন বা প্রদাহের উপস্থিতি এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা সম্পন্নের পর দাঁত তোলা যেতে পারে। আক্কেল দাঁত কখন তোলা হয় : আক্কেল দাঁত বা যেকোন দাঁত উঠতে সমস্যা হওয়া, ইনফেকশন বা প্রদাহের উপস্থিতি, প্রয়োজনীয় স্থানের অভাব বা কোন টিউমার বা সিস্টের উপস্থিতি থাকলে সাধারণত দাঁত তুলে ফেলার প্রয়োজন হয়। দাঁত তোলার দুটি পদ্ধতি আছে। সার্জিকাল এবং নন সার্জিকাল। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে একজন অভিজ্ঞ ডেন্টাল সার্জন উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা সঠিকভাবে মেনে চলার দ্বারা চিকিৎসা পরবর্তী যেকোনো জটিলতা সহজেই এড়ানো যায়। কখন আক্কেল দাঁত সার্জারির প্রয়োজন হয় : যেকোনো দাঁত তোলার ক্ষেত্রেই সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে। দাঁতের গঠন কাঠামো অস্বাভাবিক হলে, স্বাভাবিক পন্থায় (নন সার্জিকাল) দাঁত তোলা না গেলে অথবা দাঁত যদি অর্ধেক বা পুরোপুরি মাড়ি বা চোয়ালের হাড়ের ভেতর অবস্থান করে তখন দাঁত তুলতে সার্জারির প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে বিজ্ঞ চিকিৎসকের পাশাপাশি রোগীকেও সার্জারির পূর্বে ও পরে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা আন্তরিকতার সঙ্গে মেনে চলা জরুরি। দাঁত তোলার পরবর্তী করণীয় : সাধারণত দাঁত তোলার পর ২৪ ঘণ্টা নরম খাবার খাওয়া, গরম খাবার এড়িয়ে চলা, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা লবন পানি দিয়ে কুলকুচি করা বা মাউথওয়াশ ব্যবহার করা ও অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের দ্বারা অধিকাংশ জটিলতা কেটে যায়। তবে সার্জিকাল এক্সট্রাকশনের ক্ষেত্রে সাময়িক সময়ের জন্য মুখ পরিপূর্ণ হা করতে বা জোরে হাসতে নিষেধ করা হয়। কারণ তাতে করে সেলাই ছুটে যাওয়া বা পুনরায় রক্তপাত হবার আশঙ্কা থাকে। তবে জটিলতা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় সেক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যেমন ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জনের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। লেখক: ডা. মেহেদী হাসান শিবলী, ওরাল এন্ড ডেন্টাল সার্জন, বিডিএস, বিসিএস
খেজুরের গুড় শীতে কেন খাবেন

খেজুরের গুড় শীতে কেন খাবেন শীতের দারুণ একটি খাবার গুড়। কম বেশি সবার কাছেই এ গুড় অনেক পছন্দের। নানা ধরনের পিঠা কিংবা মিষ্টিজাতীয় কোনো খাবার বানাতে এ গুড়ের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। কিন্তু আপনি কি জানেন, শীতের এ গুড় নিয়মিত ১ চামচ খেলে শরীরে কেমন পরিবর্তন আসে? পুষ্টিবিদরা জানান, চিনির চেয়ে গুড় খাওয়া অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। আর নানা ধরনের গুড়ের মধ্যে খেজুর গুড়ের পুষ্টি অনেক বেশিই বলা যায়। খেজুর গুড়ে রয়েছে ফসফরাস, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়ামজাতীয় খনিজ উপাদান। যারা নিয়মিত এক চামচ গুড় খান, তারা পাবেন খেজুর গুড়ের নানান উপকারিতা। খেজুর গুড় ওজন কমাতে দারুণ কাজ করে। যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে, তারা নিয়মিত ডায়েটে রাখতে পারেন এক চামচ খেজুর গুড়। খেজুর গুড় কোল্ড অ্যালার্জি থেকে অনেকটাই আপনাকে দূরে রাখে। রক্তাল্পতায় ভুগলেও খেতে পারেন খেজুর গুড়। কারণ, এই গুড় শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও খেতে পারেন এই গুড়। কাবোহাইড্রেট, আয়রন কিংবা গ্লুকোজের ঘাটতি হলেও খেজুরের গুড় শরীরে ভালো কাজ করে। গুড়ে থাকা প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট কাজে লাগাতে পারেন সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও। কেন না, এই গুড় ত্বক সতেজ রাখে, পাশাপাশি ব্রণ হওয়ার প্রবণতা কমায়। শীতে শরীর গরম রাখতে কিংবা সর্দি-কাশি ও জ্বরের মতো রোগ থেকেও নিজেকে দূরে রাখতে খেতে পারেন খেজুরের গুড়। তবে খেয়াল রাখবেন, একমাত্র খাটি গুড় থেকেই এসব উপকারিতা আপনি পাবেন। ভেজাল গুড় খেলে শরীরে উপকারিতার চেয়ে অপকারিতাই বেশি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আমাদের সময়
২৭০০ বছর আগের সূর্যগ্রহণের হিসাব সংশোধন করলেন গবেষকেরা

২৭০০ বছর আগের সূর্যগ্রহণের হিসাব সংশোধন করলেন গবেষকেরা প্রাচীন চীনা নথি বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন সূর্যগ্রহণের নতুন তথ্য পেয়েছেন। তাদের মতে, এই তথ্যগুলো পৃথিবীর ঘূর্ণনগতির ইতিহাস বুঝতে সহায়তা করবে। গবেষণাটি ২ ডিসেম্বর অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স-এ প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, খ্রিষ্টপূর্ব ৭০৯ সালের ১৭ জুলাই ঘটে যাওয়া সূর্যগ্রহণের বর্ণনা পাওয়া যায় ‘স্প্রিং অ্যান্ড অটাম অ্যানালস’ নামের একটি প্রাচীন নথিতে। তবে এই নথি সূর্যগ্রহণের প্রায় দুই থেকে তিন শতাব্দী পরে লেখা হয়েছিল। পরে ‘বুক অব হান’-এ আরও একটি মন্তব্য যোগ করা হয়, যেখানে সূর্যকে ‘উপরে-নিচে পুরো হলুদ’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। গবেষকদের ধারণা, এটি সম্ভবত সূর্যের বাইরের উজ্জ্বল বৃত্তের প্রাচীনতম লিখিত বর্ণনা। গবেষকেরা আধুনিক গণনা পদ্ধতি ব্যবহার করে নথির তথ্য যাচাই করেছেন। প্রথমদিকে দেখা যায়, নথিতে উল্লেখ করা স্থান কুফু শহর থেকে ওই গ্রহণটি দেখা সম্ভব ছিল না। পরে ঐতিহাসিক মানচিত্র ও প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য মিলিয়ে জানা যায়, আগের গবেষণায় কুফুর প্রকৃত অবস্থান থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার ভুল জায়গার সমন্বয় (কোঅর্ডিনেট) ব্যবহার করা হয়েছিল। এ ভুল সংশোধন করলে পৃথিবীর সে সময়কার ঘূর্ণনগতির আরও সঠিক হিসাব পাওয়া যায়। একই সঙ্গে সূর্যের অবস্থান ও গ্রহণের সময় করোনা কেমন দেখা যেত, তারও নির্ভুল মডেল তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। জাপানের ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনোমিক্যাল অবজারভেটরির মিতসুরু সোামা বলেন, নতুন হিসাব আগের বহু গবেষণার ভুল সংশোধন করেছে। এতে অতীতের জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনাগুলোর তারিখ নির্ধারণ আরও নির্ভুল হবে। প্রাচীন যুগে মানুষ আকাশে ঘটতে থাকা ঘটনাকে শুভ–অশুভ লক্ষণ মনে করত। তাই তারা সূর্যগ্রহণ, অরোরা, ধূমকেতু—এসব ঘটনা খুব যত্ন করে লিখে রাখত। লকহিড মার্টিন সোলার অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স ল্যাবের গবেষক মেং জিন বলেন, প্রাচীন নথির পর্যবেক্ষণ আর আধুনিক গণনার সমন্বয়ে আমরা হাজার বছরের পুরোনো পৃথিবী ও সূর্যের অবস্থা সম্পর্কে নতুন ধারণা পাচ্ছি।
বিশ্বে ১০০ কোটিরও বেশি নারী সহিংসতার শিকার

বিশ্বে ১০০ কোটিরও বেশি নারী সহিংসতার শিকার বিশ্বজুড়ে ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ১০০ কোটিরও বেশি নারী শৈশবে যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ২০২৩ সালে প্রিয়জনের কাছ থেকে সহিংস আচরণের শিকার হয়েছেন প্রায় ৬০ কোটির বেশি নারী।গতকাল চিকিৎসা বিষয়ক জার্নাল দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, সাব-সাহারান আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ সংখ্যক নারী সঙ্গীর কাছে নিগৃহীত হয়েছেন। এসব অঞ্চলে এইচআইভি ও দীর্ঘমেয়াদী রোগের হার বেশি হওয়ার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও তীব্র হয়ে ওঠে। ভারতে ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী অন্তত ২৩ শতাংশ নারী সঙ্গীর দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আবার ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী নারীদের ৩০ শতাংশের বেশি এবং পুরুষদের ১৩ শতাংশের শৈশবে যৌন সহিংসতার অভিজ্ঞতা রয়েছে বলেও গবেষণায় উল্লেখ করা হয়। গবেষকেরা গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ (জিবিডি) স্টাডি ২০২৩-এর তথ্য বিশ্লেষণ করেছে। এটি ‘সময় ও ভৌগোলিক প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য ক্ষতির সবচেয়ে বড় ও ব্যাপক পরিমাপক’ হিসেবে বিবেচিত। জিবিডি স্টাডিটি সমন্বয় করে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষকরা জানান, বিশ্বব্যাপী ২০২৩ সালে ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ৬০ কোটি নারী কখনো না কখনো আইপিভির শিকার হয়েছেন। আর ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ১০০ কোটিরও বেশি নারীর শৈশবে যৌন সহিংসতার অভিজ্ঞতা হয়েছে। যৌন সহিংসতার ফলে নারীদের মধ্যে প্রচণ্ড উদ্বেগ ও বিষণ্নতা তৈরি হয়। শৈশবে যৌন সহিংসতার অভিজ্ঞতা নারীদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, মাদক ব্যবহারজনিত ব্যাধি এবং দীর্ঘমেয়াদী রোগসহ অন্তত ১৪টি মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। গবেষকেরা বলেন, নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা মোকাবিলা করা শুধু মানবাধিকারের বিষয় নয়; এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য অগ্রাধিকার। এর মাধ্যমে লাখো মানুষের জীবন বাঁচানো যেতে পারে। নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়া হলে তা একটি সহনশীল সমাজ গড়ে তুলতে সহায়ক হতে পারে। গবেষকরা বলেছেন, নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা মোকাবেলা কেবল মানবাধিকারের বিষয় নয় বরং জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার যা লক্ষ লক্ষ জীবন বাঁচাতে পারে, মানসিক স্বাস্থ্যের ফলাফল উন্নত করতে পারে এবং স্থিতিশীল সম্প্রদায় গড়ে তুলতে পারে। তারা বলেছেন, সহিংসতার কারণে স্বাস্থ্যগত ক্ষতি কমাতে আইনি কাঠামো শক্তিশালীকরণ, লিঙ্গ সমতা প্রচার এবং ভুক্তভোগীদের জন্য সহায়তা পরিষেবা সম্প্রসারণের মতো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জরুরি প্রয়োজনীয়তার উপর এই গবেষণার ফলাফল জোর দেয়। সূত্র: এনডিটিভি।
রাতের খাবারের কতক্ষণ পর ঘুমানো উচিত?

রাতের খাবারের কতক্ষণ পর ঘুমানো উচিত? রাতের খাবার খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়া শরীরের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। ধীরে ধীরে এতে নানা জটিল অসুখ দেখা দিতে পারে। বদহজম, বুকজ্বালা, অ্যাসিডিটি, অতিরিক্ত ওজন এমনকি স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়ে। তাই রাতে খাওয়া ও ঘুমের মাঝে ঠিক কতটা বিরতি রাখা প্রয়োজন, তা জানা খুবই জরুরি। হজমে সমস্যা: খাওয়ার পরই শুয়ে পড়লে প্রথমেই ক্ষতি হয় হজমশক্তির। ঘুমের সময় খাবার ঠিকমতো ভাঙতে শরীরকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। নিউট্রিশনিস্ট রূপালী দত্তের মতে, খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে গেলে খাবার ধীরে হজম হয় এবং অন্ত্রে সঠিকভাবে পৌঁছাতে পারে না। ফলে গ্যাস, অ্যাসিডিটি, বুকজ্বালা দেখা দেয়। আবার ঘুমও ঠিকমতো হয় না, আর ঘুম কম হলে ওজন বাড়তে থাকে। ঘুমে ব্যাঘাত: ঘুমানোর কিছুক্ষণ আগে খাবার খেলে ঘুমের মান নষ্ট হয়। বিশেষ করে মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে শরীরে বাড়তি এনার্জি তৈরি হয়, যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। ওজন বৃদ্ধি: ধীর হজম ও খারাপ ঘুম দুটিই ওজন বাড়ার প্রধান কারণ। দিনের শেষে মেটাবলিজম ধীরে চলে, ফলে তখন খাওয়া ক্যালরি সহজে বার্ন হয় না। শরীর সূর্যের কার্যক্রমের ছন্দে কাজ করে, তাই তাড়াতাড়ি খেলে পুষ্টিগুণ ভালোভাবে শোষিত হয়। কিন্তু দেরি করে খেলে সেই পুষ্টিগুণ ঠিকমতো না মেটাবলাইজ হয়ে শরীরে চর্বি হিসেবে জমে। বুকজ্বালা ও অ্যাসিডিটি: খাওয়ার পরপরই শুয়ে পড়লে বুকজ্বালা আরও বেড়ে যায়। পেটে চাপ পড়ার ফলে অস্বস্তি ও অ্যাসিডিটি বাড়ে। গবেষণাগুলোতে দেখা গেছে, অ্যাসিডিটি থেকে স্লিপ অ্যাপনিয়া হতে পারে, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। বদহজম থেকে কোলেস্টেরল ও রক্তচাপও বেড়ে যায় যা হার্টের জন্য ক্ষতিকর। খাওয়া ও ঘুমের মধ্যে কতক্ষণ বিরতি রাখা উচিত? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাতের খাবার ও ঘুমের মধ্যে অন্তত ৩ ঘণ্টা বিরতি রাখা ভালো। এতে বদহজম, বুকজ্বালা এবং ঘুমের সমস্যা কমে। ভরা পেটে ঘুমালে মেটাবলিজম শ্লথ হয়ে যায়, ফলে ওজন বাড়া ও স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ে।
পোশাকে বিজয়ের লাল-সবুজ

পোশাকে বিজয়ের লাল-সবুজ পোশাকে চেতনা ধারণ করার ভাবনাটি নতুন নয়। দুটি রঙের মিশেলে দেশের জন্য ভাবনাকে ফুটিয়ে তুলতে পারা যায় অনায়াসে। তবে পোশাকের নকশা, কাট, ডিজাইন যেমনই হোক, লাল-সবুজ মানেই একটি চেতনা। সব পরিচয় ছাপিয়ে যেখানে বড় হয়ে ওঠে নিজেদের বাংলাদেশি পরিচয়টাই। তাই প্রতিবারের মতো এবারও দেশীয় হাউসগুলো সেজেছে লাল-সবুজে। বিস্তারিত লিখছেন নিশাত তানিয়া লাল-সবুজ রঙটি আজও আমাদের চেতনার প্রতীক, বলছিলেন রঙ বাংলাদেশের কর্ণধার সৌমিক দাশ। এবারও তারা আয়োজন করেছেন বিজয় উৎসবের। এবারের থিম মানচিত্র, পতাকা ও জাতীয় সংগীত। তিনি আরও বলেন, লাল ও সবুজের সমন্বয়ে প্রতিটি পোশাক যেন কথা বলে আত্মবিশ্বাসের, গর্বের, স্বাধীনতার। কটন হাইব্রিড, জ্যাকেট কটনের আরামদায়ক পোশাক রেখেছেন তারা যে কোনো বয়সের ক্রেতাদের জন্য। স্কিন আর ডিজিটাল প্রিন্টের কাজে প্রতিটিতে থাকছে নানন্দিকতার ছোঁয়া। বাংলাদেশের উৎসব আর দিবসভিত্তিক পোশাকে বিজয় দিবস উল্লেখযোগ্য। তাই তো ফ্যাশন হাউসগুলোর ভাবনায় একঘেয়েমি থেকে বেরিয়ে সময়োপযোগী করার তাগিদ থাকে প্রতিটি বিজয় উৎসবেই। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। বরাবরই ফ্যাশন হাউসগুলো নতুন প্রজন্মকে পোশাকের দিক থেকে করেছে স্বদেশমুখী। তাদের ডিজাইনের একটা বড় অংশজুড়ে রয়েছে দেশাত্মবোধের চেতনা। এবারের বিজয় দিবসে লাল-সবুজের প্রত্যয়ে আবারও সে চেষ্টাই চলছে। মূলত ফ্যাশনের ধারাটা সময়কে ধারণ করে। ফ্যাশন হাউসগুলো ঘুরে দেখা গেল বিজয় দিবস উপলক্ষে ডিজাইন করা শাড়িতে জাতীয় পতাকার লাল-সবুজ রঙের পাশাপাশি আছে কালো, সাদা ও কমলারও নিপুণ সমন্বয়। ফ্যাব্রিক হিসেবে এখানে ব্যবহার করা হয়েছে ক্রেপ সিল্ক ও হ্যান্ডলুম কটন বা হাতে বোনা সুতি কাপড়। ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় এখন ফ্যাশন স্টাইলের অনুষঙ্গ হিসেবে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। এ ফ্যাশন-স্টাইলে উৎসবী আমেজ থাকলেও তার থেকে বেশি থাকে দেশাত্মবোধ তথা দেশপ্রেম। আর সে কারণেই বিজয়, স্বাধীনতা কিংবা ভাষা দিবসের ফ্যাশনের প্রথম চিত্রকল্প হিসেবে পোশাকে, শোপিসে কিংবা গহনায় উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধের স্থিরচিত্রের চিত্রকর্ম, ’৭১-এর আত্মত্যাগের বাঙালি ধরনটা যেমন হৃদয়ছোঁয়া, মর্মস্পর্শী, আবেগঘন; তেমনি আনন্দময়তার রেশটাও কম নয়। আর এ ফ্যাশন বোধের মর্মকথাটা চিত্রে ও কবিতার পঙ্্ক্তির মাধ্যমে পোশাকে উৎকীর্ণ করার সফল প্রয়াসটা প্রতিবছরের এ বিশেষ দিনগুলোতে করে থাকেন প্রতিষ্ঠিত হাউসগুলোর পক্ষে নিজ নিজ ডিজাইনাররা। এবারের বিজয় দিবসও এর ব্যতিক্রম নয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ডাকটিকিট, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক কবিতা, ছবি, আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা ও স্মৃতিসৌধ এবারের আয়োজনের অনুপ্রেরণা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। আমাদের পতাকার রঙ লাল ও সবুজ রঙ পোশাক ডিজাইনে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। এবারের আয়োজনে শাড়ি, পাঞ্জাবি, মেয়েদের টপস, সালোয়ার-কামিজ, টি-শার্ট পাওয়া যাবে। এ ছাড়া শিশু-কিশোরদের জন্য থাকছে পাঞ্জাবি, শাড়ি, টি-শার্ট, সালোয়ার-কামিজ ইত্যাদি। মহান বিজয়ের এই দিনটি সুন্দরভাবে উদযাপন করার জন্য পোশাকগুলোর মূল্যও তুলনামূলকভাবে কম রাখা হয়েছে।’ শীতের আগমনে এ আয়োজনে বিজয় দিবসে কিছুটা ভিন্নতা আনা হয়েছে। পোশাকগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে মোটা সুতি ও খাদি কাপড়। শাড়ি, থ্রিপিস, ফতুয়া, পাঞ্জাবি, ছেলেমেয়েদের কুর্তা, টি-শার্ট ইত্যাদিতে তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশ লেখা এবং লাল-সবুজ রঙের মাধ্যমে উঠে এসেছে দেশীয় ভাবনা। পাশাপাশি দেশীয় সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান এসেছে ডিজাইনের অনুষঙ্গ হিসেবে। কাজের মাধ্যম হিসেবে এসেছে টাইডাই, ব্লক, বাটিক, অ্যাপলিক, ক্যাটওয়াক, স্ক্রিনপ্রিন্ট ইত্যাদি। আর পোশাকের দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই। দেশপ্রেমের চেতনা ধারণ করে এগিয়ে চলার আত্মপ্রত্যয়ে আপনিও যদি এমন পোশাক পরতে চান, তাহলে ঘুরে আসতে পারেন দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো থেকে। রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেটের বিভিন্ন শোরুমে পাবেন এমন পোশাকের খোঁজ। অনলাইনভিত্তিক কেনাকাটার সুযোগও রয়েছে। চাইলে বানিয়েও নিতে পারেন নিজের পছন্দমতো পোশাক। বিজয় দিবস থিমে আপনার পোশাকটির মূল রঙ হতে পারে সবুজ; বুকে থাকতে পারে লাল নকশা, এমনকি পতাকার লাল বৃত্তটাই। পোশাকের হাতা আর কলারে থাকতে পারে লাল রঙের ব্যবহার। আবার মূল রঙ লাল রেখে সবুজের বৈচিত্র্যময় ব্যবহারও হতে পারে। চাইলে এই রঙের ভিন্নতাটুকু অ্যাপ্লিকের কাজ দিয়েও করিয়ে নিতে পারেন পোশাকে। থাকতে পারে দেশের ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো পঙ্ক্তি। জাতীয় সংগীতের লাইন, একাত্তরে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু হয়ে ওঠা জর্জ হ্যারিসনের গানের লাইনও লেখা আছে বাজারের কিছু পোশাকে। নারীরা চাইলে লাল রঙের কো-অর্ডের সঙ্গে সবুজ শাল পরতে পারেন কিংবা সবুজ কো-অর্ডের সঙ্গে টকটকে লাল ওড়না বা কটি। আর ব্যান্ডানা তো পথেও বিক্রি করেন পতাকার ফেরিওয়ালারা। পোশাক কিংবা অনুষঙ্গে লাল-সবুজের পরশ রাখা যায় নানাভাবেই। লাল-সবুজের চেতনা অন্তরে নিয়েই হোক সবার পথচলা।
মশা তাড়ানোর ঘরোয়া কিছু উপায়

মশা তাড়ানোর ঘরোয়া কিছু উপায় সারাদেশে মশার উপদ্রব বেড়েছে। মশার কামড়েই এ বছর চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। সুস্থ ও নিরাপদে থাকতে ঘরের ভেতর-বাহির, ফুলের টব, বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার বিকল্প নেই। পাশাপাশি মশা তাড়াতে ঘরোয়া কিছু উপায় মেনে চলতে পারেন। মশা তাড়াতে কর্পূরের ওপর ভরসা করতে পারেন। একটি ৫০ গ্রামের কর্পূরের টুকরা একটি ছোট পাত্রে রেখে পানি দিয়ে পূর্ণ করুন। এরপর এটি ঘরের কোণে রেখে দিন। দুদিন পরপর পানি পরিবর্তন করুন। কর্পূরের গন্ধ মশা একদমই সহ্য করতে পারে না। তাই এটি ঘরে থাকলে মশা দূর হয়। কর্পূরের মতো নিমের গন্ধও মশা সহ্য করতে পারে না। আশপাশে নিমগাছ থাকলে কয়েকটি নিমপাতা সংগ্রহ করে ঘরের কোণে রেখে দিন। এতে মশার উপদ্রব কমে যাবে। নিম তেল গায়ে মাখলেও মশার কামড় থেকে রেহাই পাবেন। মশা তাড়াতে কয়েকটি রসুনের কোয়া থেঁতলে পানিতে দিয়ে সেদ্ধ করুন। চাইলে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করতে পারেন। এবার রসুন মেশানো পানি ঘরের বিভিন্ন জায়গায় স্প্রে করুন। অল্প সময়েই মশা পালাবে। লেবু মাঝামাঝি করে কেটে, কাটা লেবুর ভেতরের অংশে অনেক লবঙ্গ গেঁথে দিন। লেবুর টুকরাগুলো পাত্রে রেখে ঘরের এক কোণে রেখে দিন। চাইলে লেবুতে লবঙ্গ গেঁথে জানালার গ্রিলেও রাখতে পারেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফল পাবেন। মশাসহ যে কোনো পোকামাকড় তাড়াতে পুদিনা পাতার ওপর ভরসা রাখতে পারেন। একটি গ্লাসে অল্প পানি নিয়ে তাতে পাঁচ থেকে ছয় গাছি পুদিনাপাতা রেখে দিন। তিন দিন পরপর পানি বদলে দেবেন। পুদিনার গন্ধে অনেক ধরনের পোকামাকড় ঘরে আসবে না। মশার হাত থেকে বাঁচতে গায়ে সুগন্ধি, আতর বা লোশন মাখতে পারেন। কেননা মশা সুগন্ধি খুব অপছন্দ করে। রাতে ঘুমানোর আগেও শরীরে লোশন মাখতে পারেন। বাজারে মশা নিরোধক লোশনও পাওয়া যায়। চাইলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে শিশুর গায়ে সে ধরনের লোশন লাগাতে পারেন। ব্যবহৃত চা-পাতা ফেলে না দিয়ে ভালো করে রোদে শুকিয়ে তা দিয়ে মশা তাড়াতে পারেন। চা-পাতা পোড়ালে যে ধোঁয়া হয়, তাতে ঘরের সব মশা, মাছি পালিয়ে যায়। কয়লা বা কাঠকয়লার আগুনে নিমপাতা পুড়িয়েও ঘরের মশা তাড়াতে পারেন।
ত্বকের কোলাজেন বাড়াবে ৬ খাবার

ত্বকের কোলাজেন বাড়াবে ৬ খাবার বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের কোলাজেন কমতে থাকে। এতে ত্বকে বলিরেখা পড়ে, ত্বক ঝুলে যায় এবং উজ্জ্বলতা কমে যায়। খাদ্যাভ্যাস, অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনসহ নানাবিধ কারণে কোলাজেন হ্রাস পায়। আর তখনই চেহারার স্বাভাবিক সৌন্দর্য ম্লান হতে শুরু করে। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে শরীরে কোলাজেন উৎপাদন বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন ছয়টি খাবার। এ খাবারগুলো কোলাজেন বাড়াতে সহায়তা করে। সাইট্রাস জাতীয় ফল কোলাজেন উৎপাদনের জন্য ভিটামিন সি অপরিহার্য। ত্বকের উজ্জ্বলতা ও স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে কমলালেবু, লেবু, আঙুর এবং কিউই জাতীয় সাইট্রাস ফল নিয়মিত খান। এতে কোলাজেন উৎপাদন বাড়ে এবং ত্বক সুস্থ থাকে। ডিম ত্বকের কোলাজেন বাড়াতে নিয়মিত ডিম খান। বিশেষ করে ডিমের সাদা অংশে থাকে প্রোলিন নামের অ্যামাইনো অ্যাসিড যা কোলাজেন তৈরি করতে ভূমিকা রাখে। ডিমের কুসুমে থাকা বায়োটিন চুল-ত্বক-নখকে রক্ষা করে। সামুদ্রিক খাবার শরীরের পর্যাপ্ত পুষ্টির জন্য সামুদ্রিক মাছ মাছ গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্যতালিকায় স্যামন, টুনা, চিংড়ি ইত্যাদি মাছ রাখুন। এগুলো ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের ভালো উৎস, একইসঙ্গে কোলাজেন উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সবুজ শাকসবজি পালং শাক, কলমি শাকের মতো পাতাযুক্ত সবুজ শাকসবজি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও খনিজে সমৃদ্ধ। এগুলোতে উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি রয়েছে, যা কোলাজেন সংশ্লেষণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও সবুজ শাকসবজিতে রয়েছে ভিটামিন ‘এ’ এর মতো নানা পুষ্টিকর উপাদান, যা ত্বকের ক্ষতি হওয়া টিস্যু মেরামত করে। দই প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ দই হজমশক্তি ঠিক রাখে। ত্বকের কোলাজেন গঠনে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে দই। তাই খাদ্যতালিকায় দই রাখুন। বেরি স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি এবং রাস্পবেরির মতো ফলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি আছে। এ দুটি উপাদান কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এই দুই ফল রাখুন।