৩৫ বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টি এবার এপ্রিলে

551

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর এবারের এপ্রিলে দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সোমবার (২৪ এপ্রিল) পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ ছিল এই মাসের স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাতের তুলনায় ১১৯ শতাংশ বেশি।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের  অধিদপ্তরের উপপরিচালক আয়েশা খাতুন জানিয়েছেন, ১৯৮১ সালের এপ্রিলে সারা দেশে স্বাভাবিকের তুলনায় ১৬৭ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছিল। এর ৬ বছর পর একই মাসে প্রায় ৬১ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছিল।

অবশ্য এ বছর অতিবৃষ্টি শুরু হয়েছে মার্চে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, মার্চে সারা দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫২ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এর আগে ২০০৫ সালের মার্চে স্বাভাবিকের চেয়ে ১০৭ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়।

দেশের বাইরে উজানেও এ বছর স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টি হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। পৃথিবীতে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে। সেখানে এ বছর মার্চের শেষ ৯ দিনে ১ হাজার ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা সেখানকার স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। উজানের আরও অনেক স্থানে মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত বৃষ্টি হচ্ছে।

আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, এ সময় বৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। তবে পরিমাণটা অস্বাভাবিক। সমগ্র এপ্রিল মাসের স্বাভাবিক গড় বৃষ্টির পরিমাণ হচ্ছে ৪ হাজার ৫৩ মিলিমিটার। এপ্রিলের ২৪ তারিখ পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৮ হাজার ৯০৪ মিলিমিটার । তিনি বলেন, এ বছর পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাব অনেক বেশি। সেই কারণে দেশের ভেতরে বৃষ্টি বেশি হচ্ছে। নিয়মিত বিরতিতে অব্যাহত বৃষ্টির কারণে সারা দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও এই সময়ের স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম আছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস হচ্ছে, আজ মঙ্গলবার থেকে ঢাকা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে বৃষ্টি কিছুটা কমে আসতে পারে। চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগে আজও দমকা, ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বেশি হতে পারে ।

দমকা, ঝোড়ো হাওয়াসহ অব্যাহত বৃষ্টির কারণে কয়েক দিন ধরে দক্ষিণাঞ্চলে আঞ্চলিক ও দূরপাল্লার নৌযান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। এ সময় ওই অঞ্চলের নৌচলাচল কখনো কখনো সাময়িকভাবে বন্ধও রাখতে হয়েছে। ওই অঞ্চলে আজও একই রকম সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

মার্চ-এপ্রিলের ঝড়-বৃষ্টির সময়গুলোতে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকানো ও অতি উচ্চশব্দে অনেক বেশিসংখ্যক বজ্রপাত হতে দেখা যাচ্ছে, যা অন্য সময় এতটা দেখা যায় না।

এ বিষয়ে কয়েকজন আবহাওয়াবিদ বলেন, আবহাওয়া বিজ্ঞানের ভাষায় এই সময়ের মেঘকে বলা হয় বজ্র মেঘ। অর্থাৎ এই সময়ের মেঘের মধ্যে ইলেকট্রিক চার্জ বেশি তৈরি হয়। এর ফলে মেঘের মধ্যের ধুলাবলি ও পানির অণুকণার পারস্পরিক ঘর্ষণে বেশি পরিমাণ ইলেকট্রিক চার্জ তৈরি হয়। এ অবস্থায় মেঘমালার ভেতরকার ইলেকট্রিক চার্জের মধ্যে পারস্পরিক ঘর্ষণ হয়। এতে প্রচুর তাপও উৎপন্ন হয়। ফলে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাতে দেখা যায়। এতে শব্দও হয় অতি উচ্চ। এ ধরনের ঘটনার সময় বাইরে না থাকা নিরাপদ বলে পরামর্শ দিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা।

অধিদপ্তর বলছে, পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের ওপর পশ্চিমা লঘুচাপ গতকালও বিরাজ করছিল, যার বর্ধিতাংশ উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এ কারণে আজও দেশের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। দেশের চারটি সমুদ্রবন্দর—চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রাকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। দেশের অধিকাংশ নৌবন্দরকে ২ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।