লেবাননে প্রধানমন্ত্রী সাদকে ফিরিয়ে আনার আন্দোলন বাতিলের ঘোষণা

440

লেবাননে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরিকে ফিরিয়ে আনার আন্দোলন বাতিল ঘোষণা করেছে তার সমর্থকরা। ৫ নভেম্বর পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার পর সৌদি আরবে আটক রয়েছে এমন গুঞ্জনের প্রেক্ষিতে তাকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আন্দোলনে সামতে চেয়েছিলেন তারা। আন্দোলনের একজন আয়োজক ওয়ারেন স্লেইম্যান বলেন, ‘আমরা একটি বার্তা দিতে চেয়েছি, তা হলো আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য কোনও দেশের হস্তক্ষেপ সহ্য করবো না। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যা হয়েছে তা খুবই সম্মানহানিকর।’ মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই এর এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানী বৈরুতে ‘ব্রিং সাদ ব্যাক’ স্লোগানে একটি র‌্যালি হওয়ার কথা ছিলো। হারিরির পদত্যাগের পর এটাই এমন প্রথম ঘটনা ছিলো। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানা যায় যে এই র‌্যালি বাতিল করা হয়েছে। গত সপ্তাহে সৌদি রাজপরিবারে ব্যাপক ধরপাকড়ের মধ্যেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন দেশটিতে সফররত লেবানিজ প্রধানমন্ত্রী। টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে তিনি এ ঘোষণা দেন। এখন পর্যন্ত নিজ দেশে ফেরেননি সাদ হারিরি। তাকে এভাবে আটক রাখার প্রতিবাদেই রাজপথে নামতে চেয়েছিলেন তার সমর্থকরা। তবে শেষ পর্যন্ত তারা সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। স্লেইম্যান বলেন,সেনা কর্মকর্তার কাছ থেকে ফোন পেয়ে তারা আন্দোলন কর্মসূচি বাতিল করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি। এখন দেশে ঐক্য বিরাজ করছে। এমন সময় আন্দোলন নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।’ স্লেইম্যান বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে ফেরত চাই। এই বিষয়টিই আমরা সবাইকে জানাতে চেয়েছি।’ লেবাননের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী নুহাদ ম্যাচোনক বলেন, ২০০৬ সার্কুলার আইন অনুযায়ী সবধরনের আন্দোলন নিষিদ্ধ। এই আইন অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আয়োজকদের সবার তথ্য দিতে হবে। একইসঙ্গে আন্দোলনের ধরণ ও কারণও জানাতে হবে তাদের। এরপর স্থানীয় গভর্নর তাদের অনুমতি দেবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সেনাবাহিনীর নিষেধ করা সত্ত্বেও বৈরুতের মার্টার স্কয়ারে কয়েকজন ব্লগার ও আন্দোলনকর্মী জড়ো হয়েছিলেন। জিহাসান জার্মানো নামে এক আন্দোলনকারী বলেন, ‘আমি এসেছি কারণ আমি বিশ্বাস করি যে আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। কেউ আমাদের এই গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিতে পারে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা কোনও বৈধ সিদ্ধান্ত নয়। তিনি বিশ্বাস করেন, হারিরি ফিরে না আসলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও আরও অনেক মানুষ রাস্তায় নামবে। লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন অভিযোগ করেছেন, হারিরিকে অপহরণ করেছে সৌদি আরব। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘লেবানান তার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এমন আচরণ মেনে নিতে পারে না।’
মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরব ও ইরানের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বলি হয়েছে লেবানন। এর আগে সিরিয়া ও ইয়েমেনসহ বেশ কয়েকটি দেশে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছে মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই পরাশক্তি। আউন বলেন, ‘হারিরির বক্তব্যে বাস্তবতার প্রতিফলন হয়তো নেই। এখানে অনেক ধোঁয়াশা রয়েছে।’ হঠাৎ মধ্যপ্রাচ্য সফরে আসা ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁও আউনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং জানিয়েছেন ফ্রান্সও মনে করেন হারিরি হয়তো স্বাধীন নয়। লেবানন সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও একইরকম মনে করেন। তবে সৌদি আরবের দাবি, হারিরি স্বাধীন ব্যক্তি। তিনি আটক নন। তিনি পদত্যাগ করেছেন কারণ তার সরকারে হিজবুল্লাহই সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলো। পদত্যাগের পর থেকে এখনও কোনও বক্তব্য দেননি হারিরি। বৈরুতে অনেক মানুষের বিশ্বাস, তাকে আটক করে রেখেছে সৌদি আরব। জার্মানোস বলেন, ‘আমাদের মনে হচ্ছে আমরা সৌদি আরবের পুতুল এজন্যই এমন হয়েছে। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে তারা আটক করে রেখেছে যা আমাদের জন্য বিব্রতকর।’