রোনাল্ডোর দুই গোলে বার্সেলোনাকে উড়িয়ে দিয়েছে জুভেন্টাস

41

স্পট কিক থেকে পর্তুগীজ তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর দুই গোলে মঙ্গলবার লিওনেল মেসির বার্সেলোনাকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে জি-গ্রুপের শীর্ষ দল হিসেবে নক আউট পর্ব নিশ্চিত করেছে জুভেন্টাস। রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক স্ট্রাইকার রোনাল্ডো ও তার আর্জেন্টাইন প্রতিদ্বন্দ্বী মেসি ২০০৮-২০১৭ পর্যন্ত ব্যালন ডি’অফ ট্রফি নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। স্প্যানিশ দুই জায়ান্ট ক্লাবের হয়ে ক্যারিয়ারের অনেকটাই সময়ই দুজন ছিলেন চির প্রতিদ্বন্দ্বীয় কিন্তু ২০১৮ সালে রোনাল্ডোর জুভেন্টাসে যোগ দেবার পর ক্যাম্প ন্যু’তে এটাই ছিল দুজনের প্রথম সাক্ষাত, যেখানে শেষ পর্যন্ত শেষ হাসি হেসেছে রোনাল্ডোই। আন্দ্রে পিরলোর জুভেন্টাস অক্টোবরে তুরিনে ঘরের মাঠে বার্সার কাছে ২-০ গোলে পরাজয়ের তিক্ত অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল। ঐ ম্যাচে অবশ্য কোভিড-১৯ আক্রান্ত থাকায় খেলতে পারেননি রোনাল্ডো। কালকের ম্যাচটি তার যেন অনেকটাই প্রতিশোধের ম্যাচে পরিণত হয়েছিল। ডায়নামো কিয়েভ ও ফেরেনভারোসকে পিছনে ফেলে গ্রুপের দুই ফেবারিট দল হিসেবে আগেই নক আউট পর্ব নিশ্চিত করে ফেলেছিল দুই দল। কাল শুধু ছিল গ্রুপের শীর্ষ দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার। শেষ পর্যন্ত যাতে সফল হয়েছে ইটালিয়ান জায়ান্টরা। ২০১৩ সালের পর এই প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এ্যাওয়ে ম্যাচে বার্সেলোনার বিপক্ষে জয়ী হলো জুভেন্টাস। গ্রুপ পর্বে উভয় দলই সমান ১৫ পয়েন্ট অর্জণ করলে হেড-টু-হেড রেকর্ডে এগিয়ে থেকে শীর্ষস্থান দখল করেছে জুভেন্টাস। জুভেন্টাস ডিফেন্ডার লিওনার্দো বনুচ্চি স্কাই স্পোর্টস ইতালিয়াকে বলেছেন, ‘রোনাল্ডোর মত একজন খেলোয়াড় দলে থাকলে তখন অনেক কিছুই সহজ হয়ে যায়। বিশেষ করে এই ধরনের ম্যাচে জয় অনেকটাই নিশ্চিত মনে হয়। তোরিনোর বিপক্ষে সিরি-এ ডার্বিতেও আমরা এভাকেবই জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলাম। ঠিক যেভাবে চেয়েছি সেভাবেই জয়ী হয়ে বাড়ি ফিরেছি। পরবর্তী ম্যাচগুলোতেও আমরা এভাবেই এগিয়ে যেতে চাই।’ শনিবার লা লিগায় নবাগত কাডিজের বিপক্ষে ২-১ গোলে পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল রোনাল্ড কোম্যানের বার্সেলোনা। সেই ম্যাচের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে বেরিয়ে আসতে না আসতেই আবারো পরাজয়ের স্বাদ পেল কাতালান জায়ান্টরা। কাডিজের বিপক্ষে ম্যাচ থেকে চারটি পরিবর্তন করে দল সাজিয়েছিলেন কোম্যান। ক্যাম্প ন্যুতে ম্যাচের শুরুটাও মোটেই ভাল হয়নি বার্সার। ১৩ মিনিটে ডেডলক ভাঙ্গেন রোনাল্ডো। ডি বক্সের ভিতর রোনাল্ড আরায়ুজোর চ্যালেঞ্জে পেনাল্টি আদায় করে নেন এই পর্তুগীজ সুপারস্টার। মার্ক টার-স্টেগানকে উল্টো দিকে পাঠিয়ে জুভেন্টাসকে লিড এনে দেন রোনাল্ডো। দ্বিতীয় গোলের জন্য অবশ্য খুব বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি জুভেন্টাসকে। হুয়ান কুয়াড্রাডোর ক্লিপড ক্রসে ২০ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের মিডফিল্ডার ওয়েস্টন ম্যাককেনির দুর্দান্ত ভলিতে ব্যবধান দ্বিগুন করে তুরিনের জায়ান্টরা। দুই গোলে পিছিয়ে থেকে শেষ পর্যন্ত নিজেকে কিছুটা সড়ব করে তুলেন কাতালান অধিনায়ক মেসি। তার প্রথম প্রচেষ্টাটি আটকে দেন মাথিয়াস ডি লিট। এরপর অভিজ্ঞ গোলরক্ষক গিয়ানলুইগি বুফন মেসিকে হতাশ করেন। মিরালেম পিয়ানিজের একটি প্রচেষ্টা অল্পের জন্য বারের উপর দিয়ে চলে যায়। ৫২ মিনিটে ক্লেমেন্ট ল্যাঙ্গেলেটের হ্যান্ডবলে প্রাপ্ত পেনাল্টি থেকে রোনাল্ডোর তার দ্বিতীয় গোল পূর্ণ করেন। প্রথমার্ধে অনেকটাই নিরব থাকা ফরাসি তারকা আঁতোয় গ্রীজম্যান মেসির ফ্রি-কিক থেকে হেড করলে তা ক্রসবারে লেগে ফেরত আসে। জুভেন্টাসের হয়ে বনুচ্চি চতুর্থ গোল করলেও অফসাইডের কারণে তা বাতিল হয়ে যায়। মেরি আরো একটি প্রচেষ্টা ৪২ বছর বয়সী বুফন রুখে দিয়ে আবারো প্রমান করলেন তার প্রয়োজন এখনো ফুরিয়ে যায়নি। ২০০৯ সালের পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বে ঘরের মাঠে এই প্রথম পরাজয়ের মুখ দেখলো বার্সেলোনা। হতাশ গ্রীজম্যান ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘আমরা মোটেই ভাল খেলতে পারিনি। প্রথমার্ধেই তারা মূলত ম্যাচ শেষ করে দিয়েছিল। সব বিভাগেই আজ আমরা ব্যর্থ হয়েছি। নিজেদের মধ্যে জয়ের আকাক্সক্ষা দেখা যায়নি।’ বার্সেলোনা গোলরক্ষক টার স্টেগানও ম্যাচ শেষে হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এই ধরনের পরাজয়ে সাধারণত দুটি বিষয় কাজ করে, একটি হলো ব্যক্তিগত ভুল এবং আরেকটি হলো কিভাবে একটি দল নিজেদের প্রতিরোধ করছে। দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি বিষয়। এই মুহূর্তে যেকোন সুযোগেই প্রতিপক্ষ আমাদের বিপক্ষে গোল করার ক্ষমতা রাখছে। বিষয়টি সত্যিই কঠিন। আমাদের অবশ্যই এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।