মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ নিতে বাধা

432

মিয়ানমারের রাখাইনে ‘জাতিগত নিধন’ অভিযানের শিকার মুসলিম রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণসামগ্রী নিতে বাধা দিয়েছে একদল বৌদ্ধ বিক্ষোভকারী। গত বুধবার রাখাইনের রাজধানী সিত্তের বন্দরে প্রায় ৫০ টন ত্রাণসামগ্রী নৌকায় বোঝাই করার সময় লাঠি ও ধাতব দ- হাতে নিয়ে কয়েকশ মানুষ বাধা দেয় বলে সরকারি সূত্র উদ্ধৃত করে রয়টার্স এই খবর দিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের জন্য নিয়ে যাওয়া ঠেকাতে বিক্ষোভকারীরা নৌকা উদ্দেশ্য করে পেট্রল বোমা ছুড়ে।পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আকাশে ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এবিষয়ে রাজ্য সরকারের সচিব তিন মং সোই বলেন, “বিক্ষোভকারীরা ভেবেছিল, ওই ত্রাণসামগ্রী শুধু বাঙালিদের জন্য নেওয়া হচ্ছিল।” রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী কয়েকশ বছর ধরে মিয়ানমারে বসবাস করে এলেও তাদেরকে নাগরিক মানতে নারাজ দেশটির সামরিক বাহিনী।আশির দশক থেকে তারা রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ বলে নিপীড়ন চালচ্ছে, যার ফলে অন্তত চার লাখ রোহিঙ্গা আগে বিভিন্ন সময় পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সরকারের দমন অভিযানে সমর্থন জানিয়ে রাখাইনে জাতীয়তাবাদীদের মিছিল। সম্প্রতি উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নতুন করে দমন অভিযানে নামে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। নিপীড়নের মুখে টিকতে না পেরে প্রাণভয়ে আরও প্রায় সাড়ে চার লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে। তারপরও অনেকেই এখনো তাদের ভিটেমাটি ছাড়েননি; নিপীড়নের ভয়ে তারা লুকিয়ে রয়েছেন। যারা এখনো রাখাইনে রয়ে গেছেন, তাদের জন্যই ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেড ক্রস (আইসিআরসি) এসব ত্রাণ নিয়ে এসেছে। তারা খাবার ও পানির তীব্র সংকটে রয়েছে বলে মনে করছেন ত্রাণকর্মীরা। প্রত্যক্ষদর্শী ও ওই সরকাররি কর্মকর্তা বলেন, বিক্ষোভকারীরা হাতে লাঠি ও লোহার পাইপ নিয়ে ত্রাণ বোঝাই করতে থাকার ওইসব নৌকার দিকে এগিয়ে যায়। তারা সেগুলোর পেট্রল বোমা ছুড়ে। পরে প্রায় ২০০ পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সেখানে কয়েকজন আহত হয় এবং আটজনকে পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়।তবে ওই ঘটনায় ত্রাণকর্মীরা কেউ আহত হননি বলে আইসিআরসির এক মুখপাত্র জানিয়েছেন। মারিয়া সেসিলিয়া গোইন বলেন, একদল লোক নৌকার কাছ গিয়ে তারা করছে তা জানতে চায়। তখন ত্রাণকর্মীরা বলেন, তারা নিরপেক্ষভাবে সংস্থাটির জরুরি ত্রাণ সরবরাহের কাজ করছেন।পরে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি সামাল হয়। এই বিক্ষোভ মিয়ানমারে বাড়তে থাকা সাম্প্রদায়িক সংঘাতের নজির, যা সহিংসতার শিকার দুর্গত রোহিঙ্গাদের কাছে জরুরি ত্রাণসামগ্রী পাঠানো কঠিন করে তুলেছে।বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত ২৪ অগাস্ট রাতে কয়েকটি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে হামলার পর দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে নতুন করে দমন অভিযানে নামে। সেনাবাহিনীর চলমান অভিযানে গত প্রায় এক মাসে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এপার থেকে আগুন জ¦লতে দেখা যাচ্ছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু এলাকার গর্জনদিয়া, সারাপাড়া, বড়ডিল ও খোনাকারাপাড়া গ্রামে- ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান তারা বলছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ মারছে। রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণএবং গ্রামের পর গ্রাম জ¦ালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই দমন অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূলের’ চেষ্টা হিসেবে চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘ। রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি দেখতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে সেখানে যেতে দিচ্ছে না মিয়ানমার সরকার। এমনকি সেখানে আইসিআরসি ছাড়া অন্য কোনো সংস্থাকে ত্রাণ দিতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে।