দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের (ভিসি) অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ওঠায় তাদের সচেতন হতে বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। শনিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনে ভাষণে এই প্রসঙ্গটি তোলেন তিনি। রাষ্ট্রপতি বলেন, উপাচার্যগণ হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আপনাদেরকে সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। আপনারা নিজেরাই যদি অনিয়মকে প্রশ্রয় দেন বা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন, তা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা কী হবে, তা ভেবে দেখবেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার আইন মেনে চলতে শিক্ষকদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট খরচের সিংহভাগই আসে সরকরি কোষাগার থেকে, আর কোষাগারে টাকা আসে আপামর জনগণের পকেট থেকে। তাই যে যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করেন সে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
শিক্ষকদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, শিক্ষকতা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ পেশা। আপনারা যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন তারা অত্যন্ত মেধাবী ও বিশেষ গুণে গুণান্বিত ও দক্ষ। তাই কোনো ধরনের লোভ-লালসা বা অন্য কোনো মোহের প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে পেশার মর্যাদাকে সমুন্নত রাখবেন। তাহলেই শিক্ষার্থীরা আপনাদের আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করবে। শিক্ষার্থীদের নকলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, আজকে নকলের বিভিন্ন কথাবার্তা শোনা যায়। আমার লজ্জা হয়, যখন শুনি শিক্ষকরা নকল সাপ্লাই করে। অনেক জায়গায় শোনা যায় ছাত্রদের মা-বাবা পর্যন্ত নকল সাপ্লাই করে। এর চেয়ে কলঙ্কজনক, দুঃখজনক, হতাশাজনক আর কিছু হতে পারে বলে আমি মনে করি না। আসলে তাদের কী করে শায়েস্তা করা যায়, এটা আমি ভাষায় বলতে পারছি না, কী তাদের বলব।
দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা করতে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে হারিয়ে যাচ্ছে বাঙালি জাতিসত্তার পরিচয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চায় আরো বেশি সচেতন হতে হবে। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের হাত থেকে বাঙালি সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে আমাদের সবাইকে তৎপর ভূমিকা পালন করতে হবে। আমাদের সংস্কৃতিই আমাদেরকে খুলে দেবে চেতনার দরোজা। ঐশ্বর্যম-িত করবে আমাদের ইতিহাস। তাই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে রক্ষা করার জন্য সবাইকে জোরালোভাবে এখনই এগিয়ে আসতে হবে।
প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পর গতকাল শনিবার প্রথম সমাবর্তন করল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরুর পর প্রথম সমাবর্তন হওয়ায় এবার বিপুলসংখ্যক সাবেক শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছেন। ৩৬টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউটের ১৮ হাজার ৩১৭ জন নিবন্ধিত সাবেক শিক্ষার্থীর মধ্যে ১১ হাজার ৮৭৭ জন স্নাতক, ৪ হাজার ৮২৯ জন স্নাতকোত্তর, ১১ জন এমফিল, ৬ জন পিএইচডি এবং ১ হাজার ৫৭৪ জন সান্ধ্যকালীন কোর্সের সনদ নেবেন।
পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার ধুপখোলায় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ওই সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তব্য দেন, এমেরিটাস অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাক। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান। খবর এফএনএস।
