বোরো ধানের পর এখন বন্যায় তলিয়ে যাচ্ছে আউশ ধান ও আমন বীজতলা

503

অব্যাহত বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যায় আউশ ধান ও আমন বীজতলার ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও চট্টগ্রামের ৪৭টি উপজেলার মধ্যে ২৯টির ৬৬ শতাংশ আউশ ও ৫২ শতাংশ আমন বীজতলা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। গত বোরো মৌসুমে সিলেট বিভাগ ও হাওড় অঞ্চলে আকস্মিক বন্যায় বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বোরোর পর এবার আউশ নিয়েও একই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় ও আঞ্চলিক কৃষি অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি মৌসুমে প্রায় ১০ লাখ ১২ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আবাদ হয়েছে ৯ লাখ ৪১ হাজার ৫০০ হেক্টরে। তা থেকে ২২ লাখ ৬০ হাজার টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আর সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও চট্টগ্রামে আউশের আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৬৬২ হেক্টর জমিতে। তার মধ্যে ১ লাখ ৫ হাজার ৯৪৫ হেক্টরের আউশ ধান বন্যার পানিতে দ-ায়মান অথবা পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় আছে। আর পানিতে দ-ায়মান আউশ ধানের পরিমাণ ৯৬ হাজার ৮২৪ হেক্টর ও নিমজ্জিত ৯ হাজার ১২১ হেক্টর। তাছাড়া চার জেলায় মোট ৯ হাজার ৬৩১ হেক্টর জমিতে আমন বীজতলা তৈরি করা হয়েছিল। তার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫ হাজার হেক্টর। পানিতে দ-ায়মান আমন বীজতলা ৪ হাজার ৫৪৬ ও নিমজ্জিত ৪৯৫ হেক্টর। সূত্র জানায়, বন্যাকবলিত জেলাগুলোর মধ্যে সিলেটে প্রায় ৬৩ শতাংশ আউশ ও ১৭ শতাংশ আমন বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া মৌলভীবাজারে ৫৫ শতাংশ আউশ ও প্রায় ৫০ শতাংশ আমন বীজতলা, সুনামগঞ্জের প্রায় ২১ শতাংশ আউশ এবং চট্টগ্রামের প্রায় ৯৯ শতাংশ আউশ ও আমন বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলায় পানিতে দ-ায়মান আউশের পরিমাণ ৩২ হাজার ৩০০ ও পানিতে নিমজ্জিত ৩ হাজার ৬৯৫ হেক্টর। তাছাড়া পানিতে দ-ায়মান আমন বীজতলা ২ হাজার ৩২৬ এবং পানিতে নিমজ্জিত আমন বীজতলা ৪৫০ হেক্টর। সুনামগঞ্জ জেলায় পানিতে দ-ায়মান আউশ ২ হাজার ৪৬০ ও পানিতে নিমজ্জিত ১৪০ হেক্টর। আর মৌলভীবাজারের ৭টি উপজেলার ৫টিই বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। ওই জেলায় আউশের মোট আবাদি জমির পরিমাণ ৪৮ হাজার ৩৩৭ হেক্টর ও রোপা আমন বীজতলা ৩ হাজার ৩১৭ হেক্টর। জেলায় পানিতে দ-ায়মান আউশের পরিমাণ ২৫ হাজার ৮১০ ও নিমজ্জিত ৯৫৬ হেক্টর। তার বাইরে জেলাটিতে পানিতে দ-ায়মান আমন বীজতলার পরিমাণ ১ হাজার ৬৪০ ও নিমজ্জিত ১০ হেক্টর। তাছাড়া সিলেটের ১২টি উপজেলার মধ্যে ৮টি আক্রান্ত হয়েছে। ওই জেলায় আউশের মোট আবাদি জমি ৬৪ হাজার ৮২৫ হেক্টর ও রোপা আমনের বীজতলা রয়েছে ৩ হাজার ৫২৬ হেক্টর। কিন্তু ওই জেলায় পানিতে দ-ায়মান আউশের পরিমাণ ৩২ হাজার ২৫৪ ও নিমজ্জিত ৪ হাজার ৩৩০ হেক্টর। আর পানিতে দ-ায়মান আমন বীজতলা ৫৮০ ও নিমজ্জিত ৩৫ হেক্টর। এমন পরিস্থিতিতে পানি কমার আগ পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নির্ণয় করা যাচ্ছে না। তবে হয়তো দ্রুত পানি নেমে গেলে তলিয়ে যাওয়া জমি থেকেও কিছু ধান পাওয়া যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. গোলাম মারুফ জানান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকাও তৈরি হচ্ছে। পর্যাপ্ত বীজতলাও তৈরি করা হয়েছে। পানি কমে গেলে নাবি জাতের ধানের আবাদে উপকরণ ও বীজসহায়তা বিনামূল্যে দেয়া হবে। আউশ ও আমন আবাদে কৃষককে প্রয়োজনীয় বীজ এবং উপকরণ সহায়তা ছাড়াও পদ্ধতিগত বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। পরিস্থিতির উত্তরণে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ প্রদানে মাঠপর্যায়ের সব কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।