বাংলাদেশে পালিয়ে আসার আশঙ্কা ৩ লাখ রোহিঙ্গার

449

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা থেকে বাঁচতে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এক জাতিসংঘ কর্মকর্তা। ১২ দিন আগে শুরু সহিংসতায় এরইমধ্যে পর্যন্ত ১ লাখ ৪৬ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশে করেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চলে কাজ করা জাতিসংঘ কর্মীরা। তবে এই সংখ্যাটি নিশ্চিত কোনও পরিসংখ্যান নয়। একপর্যায়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৩ লাখে পৌঁছাতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির বাংলাদেশ অঞ্চলের প্রধান দীপন ভট্টাচার্য। এতে ভয়াবহ খাদ্য সংকট হতে পারে বলেও আশঙ্কা জানিয়েছেন তিনি। সাম্প্রতিক ক্লিয়ারেন্স অপারেশনের লক্ষ্যে রাখাইন রাজ্যে সেনা মোতায়েন শুরুর কয়েকদিনের মাথায় ২৪ আগস্ট ২৪টি পুলিশ চেকপোস্টে ‘বিদ্রোহী রোহিঙ্গা’দের সমন্বিত হামলা এবং রাতভর সংঘর্ষে বিদ্রোহী-পুলিশ-সেনাসদস্য মিলে অন্তত ১০৪ জন নিহত হয়েছে বলে জানায় সেনাসূত্র। হামলার পর থেকে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান জোরদার হয়। আর অভিযান জোরদারের পর বাংলাদেশের সীমান্তে জোরালো হয় রোহিঙ্গা-¯্রােত। সেনাদের নির্যাতন-নিপীড়নের হাত থেকে রেহাই পেতে গত দুই সপ্তাহে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তবে জাতিসংঘ কর্মকর্তারা মনে করেন ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে। অনেকেই রোহিঙ্গাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে। কিন্তু ইতোমধ্যে বাংলাদেশে লাখের উপর রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়ে ছিলো। আরও বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার আসায় স্বাভাবিকভাবেই ত্রাণ কার্যক্রম কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেকেরেই মাথার উপর ছাঁদ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ত্রাণ সংস্থা গুলো খাবার, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে হিমশিম খাচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাতকারে দীপন বলেন, ‘তারা প্রত্যেকেই অপুষ্টিতে ভুগছে। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তারা ঠিকমতো খেতে পারছে না। তাদের অনেকেই আহত কিংবা অসুস্থ।’
বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে তাদের অনেক ঝক্কি পোহাতে হচ্ছে। প্রথমে ফাঁকি দিতে হচ্ছে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী বাহিনীকে। এরপর বিজিবিকে। রয়টর্সের মতে, ২৫ আগস্ট সহিংসতার পর এখন পর্যন্ত দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। তাদের কেউ নদীপথে, কেউ সাগরপাড়ি দিয়ে কিংবা কেউ স্থল দিয়েই এসেছেন। অনেকেই পথেই প্রাণ হারিয়েছেন। কেউ পড়েছেন পাচারকারী চক্রের হাতে। কিন্তু সবারই লক্ষ্য ছিলো কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে আসার।
দীপন ভট্টাচার্য বলেন, শরণার্থীরা আগে শুধু নৌকায় আসতো। আর এখন অনেকগুলো পয়েন্ট দিয়ে ঢুকছে। ওই অঞ্চলে দায়িত্বপালন করা আরেকজন জাতিসংঘ কর্মী বলেন, এটা অনুমাণ করা কঠিন কিছু নয়। মিয়ানমারে এখন সামরিক অভিযান চলছে। ফলে অনেক রোহিঙ্গাই প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে চলে আসবে। বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরতে না দিতে তৎপর মিয়ানমার। বাংলাদেশ সংলগ্ন সীমান্তে মিয়ানমার ভূমিমাইন পুঁতে রাখছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ সরকার সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দিতেই এই উদ্যোগ। রয়টার্স জানিয়েছে, সীমান্ত পরিস্থিতির সঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই দুই সূত্রের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাংলাদেশি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে মাইন স্থাপনের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। এদিকে এ বিষয়ে মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্টদূতকে তলব করে বাংলাদেশ প্রতিবাদ জানিয়েছে বলে জানা গেছে।