ফুল চাষ

906

ফুল মানুষের আত্মিক এবং মানসিক বিনোদনের আকর্ষণীয় মাধ্যম। ফুল মানুষকে শুধু আনন্দই দেয় না একই সঙ্গে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকেও নানা দিক থেকে সম্ভাবনাময় করে তোলে। তাই ফুলের স্নিগ্ধ পরশের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে ফুলচাষীরাও। চাষের পর উৎপাদিত ফুলকে যথার্থভাবে সংরক্ষণ করে বাজারজাতকরণেও ফুলচাষীদের অনবদ্য অবদান অনস্বীকার্য। ফুলে এর চাহিদা প্রতিদিনের। আর বিশেষ বিশেষ দিনের তাৎপর্যে এই ফুলের আবেদন হয়ে ওঠে আরও যুগান্তকারী, ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিকে ফুলের অঞ্জলি নিবেদনের এক বিশেষ পর্যায় বললে বেশি বলা হবে না। পহেলা ফাগুন ফুলে ফুলে ভরে উঠা ঋতুরাজ বসন্তের আবাহনের এক সূচনাপর্ব। রঙিন বসন্তের সময়জুড়ে থাকে ফুলের সমারোহে দীপ্ত হওয়া এক মনোমুগ্ধকর আবহ। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালবাসা দিবস তো ফুলের আবেশে নিমগ্ন হওয়া এক আচ্ছন্নতা। আর ২১ ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদদের স্মরণ আর সম্মান জানানোর যথার্থ মাধ্যমই তো ফুলের গুচ্ছ। ফুলের স্নিগ্ধ আর শৈল্পিক সম্ভারে মানুষ সম্মোহিত হয়, আর্থিক সাফল্যেও দেশের সম্ভাবনার পথ উন্মুক্ত হয়।আমাদের কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থায় ফুল চাষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফুলের চাহিদার কারণের ফলন বৃদ্ধিও বিবেচনায় চলে আসে। বছরওয়ারী সমীক্ষায় দেখা যায়, প্রতিবছরই এর উৎপাদন বাড়তে থাকে। ফলে বেড়ে যায় এর মুনাফার অংশটাও। ফুল চাষে অনেক কম পুঁজিতে বেশি উৎপাদন সম্ভব বলে উদ্যোক্তারাও ফুল চাষে বিশেষ আগ্রহ পায়। ফলে তরুণ উদ্যোক্তারা এই ব্যবসায় অনেক বেশি উৎসাহী এবং আশাবাদী। ১৯৮৩ সাল থেকে মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এই বিশেষ স্নিগ্ধ, সুরভিত উপকরণটির শুরু। উৎপাদন করা বাহারি ফুলের মধ্যে গ্লাডিওলাস, গোলাপ, রজনীগন্ধাসহ আরও অনেক ফুল রয়েছে। বলা হচ্ছে প্রতি হেক্টর ফসলি জমিতে খাদ্যশস্য এবং অর্থকরী ফসলের চাইতে ফুল চাষ অধিক লাভজনক। যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গাসহ ২৪টি জেলায় ১০ হাজারেরও অধিক হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ করা হচ্ছে। যার প্রায়ই ৭০ ভাগ উৎপান্ন হয় ফুলরাজ্য হিসেবে খ্যাত যশোরের গদখালী অঞ্চলে। মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে উৎপাদিত ফুল প্রতিবছরই প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। ক্রমান্বয়ে আর্থিকভাবে এগিয়ে যাওয়া এই ফুলের উৎপাদন ২০১৩-১৪ সালে ছিল ৫০ হাজার টন। ২০১৪-১৫ সালে তা পৌঁছে যায় ৫৭ হাজার টনে। যার বিক্রয় মূল্য ৮০০ কোটি টাকা। নতুন বছর ১৪২৪ বঙ্গাব্দকে বরণ করতে ও বর্ণিল ফুলের বিশাল আয়োজনে সারাবাংলা নতুন সাজে সজ্জিত হয়। বিশেষ করে মেয়েরা শুধু খোঁপায়ই নয়, ফুলের অলঙ্কারে নিজেকে রাঙিয়ে নেয়। এই চাহিদা সমৃদ্ধ সুন্দর উপকরণটির আরও প্রসার বাড়াতে গেলে ফুলচাষকে উৎসাহিত করা অত্যন্ত জরুরী। শুধু ক্ষেতে খামারে নয়, বসত বাড়িতে, ভবনের ফাঁকা ছাদে, সড়কের বিশেষ বিশেষ স্থানে ফুলের সমারোহ বাড়ানো খুবই দরকার। আকর্ষণীয় পুষ্পের নির্মল সৌরভ পরিবেশকে শান্ত, স্নিগ্ধধ এবং মনোহর করতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে ফুলের উৎপাদন বৃদ্ধি যেমন অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে তেমনই পরিবেশবান্ধব সুন্দর আবহ তৈরিতে অবদান রাখবে। ফুলের উৎপাদন বাড়ানোর মতোই জরুরী এর সংরক্ষণ এবং সুরক্ষা। ফুলের পচনশীলতা রোধ করার ব্যাপারেও সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেষ্ট থাকতে হবে। সুন্দর ও সুরভিত ফুলই চিত্তকে আনন্দে অভিভূত করে দিতে পারে।