কমিউনিটি রেডিওতে ক্রীড়া বিষয়ক অনুষ্ঠান সম্প্রচারে নারী উপস্থাপক বাড়াতে হবে

552

প্রতিভা ব্যানার্জী

আজ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে বিশ্ব রেডিও দিবস। দিবসটির এবারের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে রেডিও এবং খেলাধূলা। রেডিও সারা বিশ্বে এবং বাংলাদেশে খেলাধূলায় উৎসাহ প্রদান করার ক্ষেত্রে এখনো শক্তিশালী গণমাধ্যম হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। তবে একটি গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্বব্যাপী রেডিও কর্তৃক সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাত্র ৪শতাংশ অনুষ্ঠান নারীদের খেলাধূলা নিয়ে সম্প্রচারিত হয়। ১২শতাংশ খেলাধূলা বিষয়ক সংবাদ নারীদের দ্বারা উপস্থাপিত হয় যা হতাশাজনক।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জনগণের দোরগোড়ায় স্থাপিত বর্তমান ১৭টি কমিউনিটি রেডিও দরিদ্র এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে তাদের নিজেদের কথা সরাসরি বলার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। এই নয়া গণমাধ্যম রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং পরিবেশের ক্ষেত্রে পল্লী অঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠীকে তথ্য এবং যোগাযোগের অধিকার এনে দিয়েছে। সুশাসন নিশ্চিতকরণে জনপ্রতিনিধি, সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তাদের সাথে জনসাধারণের সংলাপ আদান প্রদানের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এই গণমাধ্যম স্থাপিত হবার ফলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার প্রধান খাতগুলোর সাথে জনসাধারণের সরাসরি সংযোগ স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে জনগণের নিকট প্রকৃত তথ্য সরবরাহ করে জনগণের প্রাণহানী ও সহায় মানুষের সম্বল রক্ষায় এটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। ঘূর্ণিঝড় মহাসেন, কোমেন এবং রোয়ানুর সময় স্থানীয় প্রশাসন সরাসরি এই রেডিওর মাধ্যমে তাদের নির্দেশাবলী জানাতে পারায় স্থানীয় জনগণ সতর্ক হতে পেরেছে। ফলে দুর্যোগে ঝুঁকি হ্রাস হচ্ছে।
গত কয়েক বছর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে শতর্কতামূলক বার্তা সম্প্রচার করায় চরাঞ্চলের বন্যাকবলিত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ অনেকটা উপকৃত হয়।
তবে উল্লিখিত গবেষণার অনুরূপ স্থানীয় ও ঐতিহ্যবাহী খেলাধূলা বিষয়ক সম্প্রচারে নারী এবং পুরুষের মধ্যে সমতা এবং শান্তি ও উন্নয়ন উদ্যোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমাদের দেশের কমিউনিটি রেডিগুলোর অবস্থান এখনও আশা ব্যঞ্জক নয়।
সম্প্রতি বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশন (বিএনএনআরসি)-র এক সংক্ষিপ্ত জরিপে দেখা গেছে, ১৭টি কমিউনিটি রেডিও দৈনিক সর্বমোট ১৪৪ ঘন্টা অনুষ্ঠান ও সংবাদ সম্প্রচার করছে। যেখানে খেলার (স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক) সংবাদ সম্প্রচারিত হয় মাত্র ২ ঘন্টা ৩৭মিনিট। অন্যদিকে ১২টি রেডিওতে (৫টি রেডিও-রেডিও পদ্মা, রেডিও নাফ, রেডিও সুন্দরবন, রেডিও মেঘনা এবং রেডিও সাগরদ্বীপ বাদে) সাপ্তাহিক ভিত্তিতে খেলাধুলা বিষয়ক অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয় মাত্র ৬ ঘন্টা। খেলার মাঠ, গ্যালারি, মহানন্দা স্পোর্টস, খেলাধুলা আপডেট, সারাবেলা স্পোর্টস ইত্যাদি নামের খেলাধুলা বিষয়ক অনুষ্ঠানগুলোর সবকটিই পুরুষ কণ্ঠে উপস্থাপনা করা হয়। মূলত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনুষ্ঠিত খেলাধুলা বিষয়ক এই অনুষ্ঠানগুলোতে সাধারণত স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠনের প্রতিনিধি, স্থানীয় সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়, কোচ, প্রশাসনের কর্মকর্তা, শিক্ষক (শারীরিক চর্চা), ক্রীড়া সাংবাদিক, শিক্ষার্থী এবং ক্রীড়া প্রেমী সাধারণ জনগণ অংশগ্রহণ করে থাকেন। যাদের মধ্যে নারীর অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে।
এমতাবস্থায় সমাজে অহিংসা, সহনশীলতা, একাত্মতা এবং পারিবারিক মূল্যবোধকে জাগ্রত করার পাশাপাশি জে-ার সম্পর্কিত প্রচলিত নিয়মনীতি ও ধারনাকে পরিশুদ্ধ করার জন্য কমিউনিটি রেডিওতে স্থানীয়, ঐতিহ্যবাহী ও দেশীয় খেলাধূলা বিষয়ক অনুষ্ঠানের সময়, আঙ্গিক বাড়ানো এবং ক্রীড়া বিষয়ক অনুষ্ঠানগুলোতে নারীদের উপস্থাপনা এবং নারীদের কেন্দ্র করে খেলাধূলা বিষয়ক অনুষ্ঠান সম্প্রচারের আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে।
তাই সকল রেডিওর দায়িত্ব হবে শীঘ্রই ঐতিহ্যবাহী খেলাধূলা বিষয়ক সম্প্রচার জোরদার, ক্রীড়া সম্প্রচারে নারী এবং পুরুষের মধ্যে সমতা আনায়ন এবং শান্তি ও উন্নয়ন উদ্যোগ বৃদ্ধির জন্য ক্রীড়া বিষয়ক অনুষ্ঠান সম্প্রচার জোরদার করা। এর ফলে নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সাধারণ মানুষের পুনর্মিলন ঘটবে, সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তির মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতার সুযোগ সৃষ্টি হবে, ক্রীড়া বিষয়ক অনুষ্ঠান সম্প্রচারে নারী ও পুরুষের মধ্যকার বৈষম্য দ্রুত হ্রাস পাবে এবং সম্প্রচারে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হবে।

লেখক- কর্মসূচি কর্মকর্তা, বিএনএনআরসি