প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ি পাবার আকুতি সত্তরোর্ধ্ব ফুরকুনি বেগমের

108

আল-মামুন বিশ্বাস, গোমস্তাপুর

সত্তরোর্ধ্ব ফুরকুনি বেগম। ভিক্ষা ও অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান তিনি। নেই কোনো জমি-জমাও। বাস করেন অন্যের জায়গায়। দুঃখ তার নিত্যসঙ্গী। দুখি এই মানুষটি হলেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের দৌলতপুর গ্রামের মৃত ফেলু শেখের বড় মেয়ে।
অল্প বয়সে একই গ্রামের রাশেদ আলীর সাথে বিয়ে হয় তার। স্বামীর তেমন কোনো জমি ছিল না। অন্যের কাঠাখানেক জমির ওপর ভিটেটুকু তৈরি করেন। স্বামীকে নিয়ে স্বপ্নের সংসার গড়ে তোলেন ফুরকুনি বেগম। অর্থসংকট থাকলেও সংসারে সুখের কমতি ছিল না তাদের। একসময় কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে মেয়ে। নাম রাখেন আমেনা।
কিন্তু সুুখের সাথে ফুরকুনির বৈরিতা জন্মসূত্রেই। ১৯ বছরের সংসারে নেমে আসে কালবৈশাখী ঝড়। দুরারোগ্য ব্যাধিতে মারা যান স্বামী রাশেদ আলী। স্বামীর মৃত্যুতে চোখে অন্ধকার দেখেন তিনি। মেয়েকে নিয়ে কিভাবে সংসার চালাবে, এই দুশ্চিন্তায় বিভোর হয়ে পড়েন।
শুরু হয় শিশুকন্যা আমেনাকে নিয়ে নিরাপত্তাহীন জীবন সংগ্রাম। সংসার চালাতে অন্যের বাড়িতে কাজ করা শুরু করেন। এদিকে মেয়েও বড় হয়। মেয়ের সুখের আশায় মাথাগোঁজার ঠাঁই ভিটেটুকুও বিক্রি করে দেন।
এরপর জলে ভাসা শ্যাওলার মতো ভেসে বেড়িয়েছেন এদিক-ওদিক। রোদে পুড়েছেন, বৃষ্টিতে ভিজেছেন। রাত কাটিয়েছেন অন্যের অনুগ্রহে এখানে ওখানে।
ফুরকুনি বেগম বলেন, “সবাই বাড়ি পাচ্ছে অথচ হামি বাড়ি পাচ্ছি না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাদের বাড়িঘর-জমি-জমা নেই তাদের ইটের বাড়ি করে দিচ্ছে। সাথে জমির দলিল দিয়ে দিচ্ছেন। শুনে খুব খুশি হয়েছি। হামার তো কিছুই নাই। এ বয়সে একটি বাড়ি পাওয়ার জন্য অনেকের কাছে গেছি। কেউ হামাকে সহযোগিতা করছে না। হামি কি পাবার যোগ্য না?”
ফুরকুনির ছোট ভাই শুকুদ্দি বলেন, পিতার জমি ভাগ হলে তার বোন পৈত্রিক সূত্রে পৌনে ১৪ কাঠা জমি পায়। বোনের স্বামী মারা যাওয়ার পর মেয়ে ও নাতনির বিয়েতে জমি বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে যায়। পরে তার আশ্রয়ের একটু জায়গায় টিনের ছাউনি (চালা) তুলে বসবাস করছেন। অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবনযাপন করে থাকেন। শুধুমাত্র ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বয়স্ক ভাতার টাকা পেয়ে থাকেন বলে জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট ২নং ইউপি সদস্য গোলাম মর্তুজা বলেন, বৃদ্ধার আইডি কার্ড নেয়া হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের সকলের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী তালিকায় যেন তার নাম থাকে, সে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
বোয়ালিয়া ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান শুকরুদ্দিন বলেন, ফুরকুনির বিষয়ে তার জানা নেই। তবে গৃহহীনদের নতুন করে তালিকা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যকে বলব খোঁজ নিয়ে তার নামটি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান বলেন, বৃদ্ধ ফুরকুনির বাড়ি না পাওয়ার বিষয়টি আমাদের গোচরীভূত আছে। বাড়ি বরাদ্দের তালিকায় অবশ্যই তার নাম তালিকাভুক্ত করা হবে।