নিরাপদ আমিষ খাদ্য উৎপাদনের আহবান জেলা প্রশাসকের

234

নিরাপদ, মানসম্পন্ন আমিষ খাদ্য উৎপাদনের আহবান জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হাসান। গত কাল সোমবার দুপুরে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর আয়োজিত প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সংশ্লিষ্টদের প্রতি তিনি এ-আহবান জানান।
জেলা প্রশাসক বলেন, ১৯৭০ সালে বাংলাদেশে জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি কিন্তু তখন অভাব ছিল, দারিদ্র্যতাও ছিল। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার হিসেবে তখন বাংলাদেশে শতকরা প্রায় ৭৮-৮০ ভাগ মানুষ দরিদ্র ছিল। বর্তমান বাংলাদেশে জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। তবু দারিদ্র্যের হার তখনকার চেয়ে অনেক কমেছে। এটা সম্ভব হয়েছে কয়েকটি সেক্টরের নিরলস প্রচেষ্টায়।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন-১৯৭০ সালে বাংলাদেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল মোটামোটি ১ কোটি মেট্রিক টোনের কাছাকাছি। এখন বাংলাদেশে খাদ্যশস্যের উৎপাদন প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি মেট্রিক টন। তবে জনসংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে কৃষি উৎপাদনের জন্য জমির পরিমাণও কমেছে। কিন্তু তারপরও খাদ্য উৎপাদন ৩ গুণের বেশি বেড়েছে।
জেলা প্রশাসক বলেন-গত ২০ বছরে বাংলাদেশে মাছের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৬ গুণের মতো। ফলে মাছের চাহিদা পূরণ হয়েছে। অন্যদিকে ২০-২৫ বছর আগে বাংলাদেশে ডিমের ঘাটতি ছিল, ফলে প্রচুর পরিমাণে ভারতীয় ডিম আসতো কিন্তু এখন বাংলাদেশে প্রচুর ডিম উৎপাদন হচ্ছে এবং ডিমের দামও কম রয়েছে।
শহরের হুজরাপুর পাওয়ার হাউস মোড়ে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর চত্বরে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক আরো বলেন- দেশে গরুর উৎপাদন, দুধের উৎপাদন, ছাগল বা ভেড়ার উৎপাদন অনেক বেড়েছে এবং প্রাণিসম্পদে নতুন নতুন জাত সংযোজন হয়েছে। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশে ৩৬ শতাংশ শিশু খর্বাকৃতির হচ্ছে, দরিদ্র পরিবারের এ-সব শিশু এখনও অপুষ্টিতে ভুগছে, তাদের বয়সের তুলনায় কম উচ্চতা ও ওজন কম হচ্ছে। এমন আকৃতি নিয়ে যদি তারা বেড়ে ওঠে তাহলে তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে শয়ংসম্পন্ন হবে না, ফলে তারা জাতীয় উৎপাদনে তেমন ভূমিকাও রাখতে পারবে না। এ-সব শিশুকে খর্বাকৃতি রেখে,অপুষ্টিতে রেখে আমরা কিন্তু কাঙ্খিত লক্ষে পৌঁছুতে পারবো না। কাজেই আমরা যদি একটি স্বাস্থ্যবান, বুদ্ধিমান, কর্মঠো আগামী প্রজন্ম গড়ে তুলতে চাই তাহলে মায়েদের বিশেষ করে গর্ভবর্তী মা, কিশোরী, তরুণী এবং ছোট বাচ্চারা পর্যাপ্ত পরিমাণ আমিষ যেন পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। দেশের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে উৎপাদন বাড়াতে হবে, উৎপাদন ব্যবস্থায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করতে হবে, তাহলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, দারিদ্র্যতা থেকে, অপুষ্টি থেকে আমাদের দেশ ও জাতি মুক্ত হবে। তিনি নিরাপদ মানসম্পন্ন আমিষ খাদ্য উৎদনের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এরশাদ হোসেন খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুব আলম খান, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলমগীর হোসেন, রাজাবাড়ি হাটের আঞ্চলিক পোল্ট্রি ফার্মের উপ-পরিচালক সাব্বির আহম্মেদ, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শামসুল আলম শাহ, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আনন্দ কুমার অধিকারী, প্রয়াসের নির্বাহী কর্মকর্তা হাসিব হোসেনসহ অন্যান্যরা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন, সদর উপজেলা ভেটেনারি সার্জন শরীফ বীন আব্দুল বাসেত।
স্বাগত বক্তব্যে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আনন্দ কুমার অধিকারী জানান, আজ মঙ্গলবার সদর উপজেলার ভগবানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বারঘরিয়া নতুনবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং কর্মসূচির আওতায় শিশুদের মাঝে দুধ ও ডিম বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া ২৪ জানিয়ারি প্রত্যন্ত কোনো একটি গ্রামে গরু, ছাগলসহ বিভিন্ন প্রাণিকে বিনামূল্যে ঔষধসহ চিকিৎসা প্রদান করা হবে।
আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক হাসিব হোসেন জানান, প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি চাঁপাইনবাবগঞ্জকে প্রতিনিধিত্ব করছে। এ-প্রতিষ্ঠানটি চাঁপাইনবাবগঞ্জে জন্ম নিলেও বর্তমানে বিভিন্ন জেলায় কাজ করছে। তিনি জানান-ব্লাক বেঙ্গল ছাগল নিয়ে প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি ২০১৩ সাল থেকে কাজ করছে। আমরা প্রায় ৩ শ পরিবারকে ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের সহায়তা দেয়া হয়েছে, বিনামূল্যে ছাগল সরবরাহ করা হয়েছে। প্রায় ১ হাজার ৫ শ পরিবারে আমরা মাচা পদ্ধতিতে ছাগল উৎপাদনে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সুবিধা দেয়া হয়েছে। এ কাজে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকতারা সহযোগিতা করে চলেছেন। এছাড়াও প্রায় ৩ হাজার পরিবারকে ছাগল ঋণ সহায়তা দেয়া হয়েছেছ। তিনি আরো জানান, প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি পিএসএফ ও বিভিন্ন ব্যাংকের সহযোগিতায় প্রাণিসম্পদ, কৃষিসম্পদ, মৎস্যসম্পদসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করছে। মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালন, গরু পালন এবং মোটা তাজাকরণ বিষয়গুলোতে আমরা প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
আলোচনা শেষে প্রাণিসম্পদ নিয়ে কর্মরত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
এর আগে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়।
অপর দিকে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর চত্বরে প্রাণিসম্পদ বিষয়ক মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
মেলায় প্রাণিসম্পদ দপ্তরসহ প্রাণিমসম্পদ খামারি, ঔষধ কোম্পানি, ঔষধ বিক্রেতা ও পশুখাদ্য বিক্রতারা স্টল স্থাপন করেছেন। মেলায় ছাগল ও ভেড়াসহ বিভিন্ন প্রাণিও হাজির করা হয়।