ধান ক্রয়ে দুর্নীতি সহ্য করা হবে না : খাদ্যমন্ত্রী

162

খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে খাদ্যমন্ত্রী সাধনচন্দ্র মজুমদার বলেছেন- সরকারিভাবে ধান ক্রয়ে দুর্নীতি সহ্য করা হবে না। সরকার আপনাদের যে বেতন দেয় তাতেই আপনাদের সংসার বেশ ভালোভাবেই চলে যাবার কথা। কাজেই ঘুষ নেয়ার সুযোগ নেই। সৎ মানুষ হতে হবে। শুধু সৎমানুষ হলেই হবে না, সেইসঙ্গে দেশপ্রেমিক হতে হবে।
শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আমন ধান সংগ্রহ উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
জেলা প্রশাসক এ জেড এম নূরুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় খাদ্যমন্ত্রী আরো বলেন- আপনারা এরই মধ্যে জেনেছেন দেশের বিভিন্ন স্থানে অনিয়ম দুর্নীতির কারণে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ওসিএলএসডিরা যদি সচেতন থাকেন তাহলে কোনো অনিয়ম হওয়ার সুযোগ থাকে না। মনে রাখবেন, কোনো মধ্যস্বত্বভোগীকে সুযোগ দিতে গিয়ে প্রকৃত কৃষক যেন তাদের সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয়। কারণ, সরকার প্রকৃত কৃষকের কথা ভেবে অধিক মূল্যে ধান ক্রয় করছে। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার জন্য প্রায় ২০ লাখ মেট্রিক টন চাল লাগে কিন্তু কৃষকের স্বার্থে সরকার প্রায় দ্বিগুণ ধান চাল ক্রয় করছে।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেই ভেজালমুক্ত নিরাপদ খাদ্য সরবরাহের ওপর গুরুত্ব দেন। যারা খাদ্যে ভেজালকারী, খাদ্য মজুদকারী স্পেশাল অ্যাক্টে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে তাদেরকে সাজার ব্যবস্থা করেন। আমরাও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন এবং সরবরাহ করার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন- আমি চাঁপাইনবাবগঞ্জ আসার পথে গোদাগাড়ীতে নেমেছিলাম। সেখানে কয়েকশ টন টমেটো আটক করেছি। কারণ, তাদেরকে জিজ্ঞেস করে জানা গেছে একই টমেটোতে ৩ বার কেমিকেল মেশানো হয়েছে। এ সময় মন্ত্রী জানান, ঢাকায় খাদ্য বিভাগের বিশেষজ্ঞ টিমকে খবর দেয়া হয়েছে, তারা আজই গোদাগাড়ীতে এসে পরীক্ষা করে দেখবে, যদি স্বাস্থ্যের ক্ষতিকর হয় তাহলে আটককৃত টমেটো ধ্বংস করা হবে।
মন্ত্রী বলেন- কৃষি ও খাদ্য বিভাগ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। আমাদের কৃষিতে উৎপাদন যেমন বৃদ্ধি প্রয়োজন ঠিক তেমনি ভেজালমুক্ত নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ করাও জরুরি। তাই আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন- উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সঠিক তালিকা দিতে না পারায় লটারি করার পরও ধান ক্রয় করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে কৃষক না হয়েও তালিকায় নাম চলে এসেছে। এতে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। ভবিষ্যতে সঠিক তালিকা করার জন্য তিনি কৃষি বিভাগের কর্মকর্তদের আহ্বান জানান। তিনি বলেন- এমন একটা সময় ছিল যখন দেশে খাদ্য ঘাটতি ছিল, বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি না করলে চলত না। কিন্তু দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন। এখন আমরাই খাদ্য রপ্তানি করতে পারি। কিন্তু বিদেশের চাহিদামাফিক আমাদের সরু চাল উৎপাদন কম হওয়ায় সেটা সম্ভব হচ্ছে না। এ সময় তিনি মিলারদের উদ্দেশে বলেন- আপনাদের অনেক সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়েছে। কাজেই গুণগত মানসম্পন্ন চাল আপনরা সরবরাহ দেবেন। এ সময় তিনি জানান, গত নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমন সংগ্রহ চলবে। এরই মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার ৬৬ ভাগ সংগ্রহ সম্পন্ন হয়েছে।
ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি নিয়েও কথা বলেন খাদ্যমন্ত্রী এবং প্রয়োজনে ধান, চাল ক্রয়সহ খাদ্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য তিনি জেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেন।
জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় আরো বক্তব্য দেন জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসন ৩৩৮, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সংসদ সদস্য ফেরদৌসী ইসলাম জেসি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার এ এইচ এম আবদুর রকিব, রাজশাহীর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক রায়হানুল কবীর, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জরুল হুদা, ভারপ্রাপ্ত জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ওবাইদুল ইসলাম।