ঢাকার চলচ্চিত্র গল্প সংকটে

199

ব্যাপক মন্দাবস্থায় নিমজ্জিত এখন দেশীয় চলচ্চিত্র। বেশিরভাগ ছবির দুর্বল কাহিনী, চিত্রনাট্য এর জন্য দায়ী বলে মনে করছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেকে। একটি চলচ্চিত্র দাঁড়ায় একটি গল্পের ওপর। আর সেই গল্প যদি দর্শকদের না টানে তাহলে সেই চলচ্চিত্র এমনিতেই লসের খাতায় নাম লেখাবে এটাই স্বাভাবিক। ১৯৭৬ সালে পরিচালক এ জে মিন্টুর ‘মিন্টু আমার নাম’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লেখা শুরু করেন জনপ্রিয় পরিচালক, সংলাপ ও চিত্রনাট্যকার ছটকু আহমেদ। ‘প্রতীজ্ঞা’, ‘নাতবৌ’, ‘জিদ্দি’, ‘সত্য মিথ্যা’, ‘পিতা মাতা সন্তান’, ‘রক্তের বদলা’, ‘বাংলার বধূ’, ‘জজ ব্যারিস্টার’, ‘দেনমোহর’, ‘কালিয়া’, ‘স্ত্রী হত্যা’, ‘স্বামী কেন আসামি’, ‘সত্যের মৃত্যু নেই’, ‘আমি সেই মেয়ে’সহ অনেক হিট ছবির গল্প তিনি লিখেছেন। ছটকু আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, আসলে গল্প ভালো হলে একটি চলচ্চিত্র মার্কেট পাবে এটাই স্বাভাবিক। যা এখন দেখা যাচ্ছে না।
‘মিন্টু আমার নাম’ ছবি দিয়ে আমার লেখা শুরু হলেও পেশাগতভাবে ১৯৮৭ সালে পরিচালক মোতালেব হোসেনের ‘অশান্ত সংসার’ ছবিতে কাজ করি। মূলত এই ছবির গল্প লিখে প্রথম পারিশ্রমিক পাই। এরপর তো অসংখ্য ছবিতে গল্প লিখেছি এবং ১৯৮৯ সালে ‘সত্য মিথ্যা’ ছবিতে গল্প লিখে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছি। বর্তমান সময়ের ছবির গল্প নিয়ে তিনি আরো বলেন, এখনকার ছবিতে ভালো গল্প না থাকার কারণে দর্শক টানছে না। এখন যারা লিখছে তাদের গল্প ঠিকমত হচ্ছে না। চার-পাঁচ বছর ধরে আমিও তেমন গল্প লিখছি না। কারণ আমাদের সময় মাসের পর মাস একটা স্ক্রিপ্ট নিয়ে কাজ চলতো, আর্টিস্টের সঙ্গে কথা হতো। এখন তো একদিনের মধ্যে গল্প রেডি করে চিত্রনাট্য জলদি করে দিতে বলা হয়। এভাবে কি আসলে ভালো ছবির গল্প হতে পারে? একটা সময় সৈয়দ শামসুল হক, কাজী আজিজ, মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানসহ অনেক মেধাবী মানুষ ছবির গল্প লিখতেন। উপযুক্ত পারিশ্রমিক দিতে হবে ভেবে বর্তমান সময়ের নির্মাতারা আমাদের মতো সিনিয়র মানুষদের কাছে এখন আসেন না। নির্মাতা মালেক আফসারী পরিচালনার বাইরে ‘ঘরের বউ’, ‘গীত’, ‘গোলমাল’, ‘ক্ষমা’, ‘ঠেকাও মাস্তান’, ‘বোমা হামলা’, ‘আমি জেল থেকে বলছি’, ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘লাল বাদশা’সহ বেশ কিছু ছবির চিত্রনাট্য করেছেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রযোজক ভালো চিত্রনাট্যের জন্য অবশ্যই বাজেট দেয়। কিন্তু বর্তমানে পরিচালক সেভাবে ছবিটা স্ক্রিনে প্রেজেন্ট করতে পারছে না। একটা দৃশ্যের পর পরের দৃশ্যে কি হবে সেই রহস্য চিত্রনাট্যে রাখতে হবে। এটা পুরোপুরি পরিচালকের উপর নির্ভর করে। আর এটা পরিচালক না জানলে সে প্রযোজককে কিভাবে বাজেট দেবে। ধরা যাক, একটা কবরস্থানের দৃশ্যে যদি নায়িকাকে লাল টকটকা শাড়ি পড়ে বসে থাকতে দেখা যায় তাহলে তো দর্শক মেনে নেবে না। সেখানে অবশ্যই কালো বা সাদা শাড়ি থাকতে হবে। অর্থাৎ সিচুয়েশন অনুযায়ী ড্রেস ম্যানের সঙ্গে বসে চিত্রনাট্য সাজাতে হবে। যা এখনকার ছবিগুলোতে পাওয়া যায় না। আর ভালো চিত্রনাট্যের বাজেট থাকবে কিভাবে? এখন তো বিভিন্ন পাঁচতারকা হোটেলে নায়িকাদের ডেকে মিটিং করতে করতে প্রযোজকের বাজেট শেষ করে ফেলছেন নির্মাতারা। এদিকে, ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই নকল ছবির বিষয়ে অভিযোগ করে থাকেন এবং আবদুল্লাহ জহির বাবুসহ অনেকের নাম এখন চিত্রনাট্যকার হিসেবে চলে আসে। এ প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ জহির বাবু বলেন, আমার জীবনের প্রথম চিত্রনাট্য বাবার (পরিচালক জহিরুল হক) ছবিতে করা। ছবির নাম ছিল ‘তুমি আমার’। তামিল ছবির কপি ছবি এটা ঝামেলা না, ঝামেলা হচ্ছে অনেকেই এখন কপি করতে গিয়ে টেকনিক্যাল সাইটের বিষয়টি ভুলে যাচ্ছে। আর একটা সময় ইউটিউব এত জনপ্রিয় ছিল না, এখন যতটা জনপ্রিয়। এবং তামিল ছবিগুলোও অনেক দর্শক ইউটিউবে দেখে ফেলছেন। আর একটা সময় প্রযোজকরা প্যাশোনেট ছিল ছবি নিয়ে যা এখন খুব একটা দেখা যায় না। ‘শান্ত কেন মাস্তান’, ‘অগ্নি টু’, ‘স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ’সহ অনেক হিট ছবির এই চিত্রনাট্যকার আরো বলেন, জাজ মাল্টিমিডিয়ার আবদুল আজিজ ভাইকে আলাদা দেখেছি। ছবির গল্প নিয়ে প্রচ- ভাবেন তিনি। সেই ফলশ্রুতিতে ‘পোড়ামন টু’, ‘অগ্নি টু’, ‘শিকারী’ ছবিগুলো দর্শক জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। সামনে ‘দহন’ও ভালো যাবে। তাই আমার মনে হয় সিনেমার প্রতি প্রযোজকের শুধু ব্যবসা না ভালোবাসাও থাকতে হবে। তাহলে ছবির গল্পসহ সব জায়গা শক্তিশালী হবে।