খালেদা জিয়ার দুর্নীতির দুই মামলায় পরবর্তী শুনানি ৬ জুলাই

627

জিয়া চ্যারিটেবল ও অরফানেজ ট্রাস্টে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় হাজিরা দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আদালত আগামি ৬ জুলাই দিন রেখেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আদালতে চত্বরে পৌঁছান। সেখানে দলীয় নেতাকর্মীরা তাঁকে স্বাগত জানান। খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। আইনজীবী জানান, পুরান ঢাকার বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত পঞ্চম বিশেষ জজ ড. আক্তারুজ্জামানের অস্থায়ী আদালতে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য দিন ছিল। খালেদা জিয়া তাতে হাজিরা দিয়েছেন। মামলার শুনানির জন্য আগামি ৬ জুলাই দিন দিয়েছেন আদালত। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত এক কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি। জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১০ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে তেজগাঁও থানায় দুর্নীতির অভিযোগে এ মামলা করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ। ওই মামলার অপর আসামিরা হলেনÑখালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। অন্যদিকে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় আরো একটি মামলা করে দুদক। মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেনÑমাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান। এর আগে ২০১৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালতে হাজির না হওয়ায় জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পরে গত বছরের ৫ এপ্রিল আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন তিনি।
১১ মামলার স্থগিতাদেশ দাখিল ৩১ জুলাই: খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা রাষ্ট্রদ্রোহসহ ১১টি মামলায় স্থগিতাদেশ দাখিলের জন্য ৩১ জুলাই দিন ধার্য করেছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা এই দিন নির্ধারণ করেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের আইনজীবী জয়নুল আবেদিন মেজবাহ বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি জানান, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ১১ মামলার কার্যক্রম হাইকোর্ট স্থগিত করে দিয়েছেন। সে আদেশ দাখিলের জন্য আগামি ৩১ জুলাই দিন ধার্য করা হয়েছে। মেজবাহ জানান, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে মিরপুরের দারুস সালাম থানায় নাশকতার আটটি, রাষ্ট্রদ্রোহের একটি ও যাত্রাবাড়ী থানার বিস্ফোরক ও হত্যা আইনের দুটি। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার নথি থেকে জানা যায়, গত বছরের ২৫ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর হাকিম রাশেদ তালুকদারের আদালতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী বাদী হয়ে এ মামলা করেন। ওই মামলায় গত বছরের ৫ এপ্রিল খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেন। মামলার আরজিতে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, ‘আজকে বলা হয়, এত লক্ষ শহীদ হয়েছে। এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে।’ ওই দিন খালেদা জিয়া আরো বলেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি। তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলে মুক্তিযুদ্ধ হতো না।’ যাত্রাবাড়ী থানার মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি রাতে যাত্রাবাড়ীর কাঠেরপুল এলাকায় গ্লোরী পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাসে পেট্রলবোমা হামলা হয়। এতে বাসের ২৯ যাত্রী দগ্ধ হন। পরে তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ১ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নূর আলম (৬০) নামের এক যাত্রী। এ ঘটনায় ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কে এম নুরুজ্জামান। মামলার উল্লেখ্যযোগ্য আসামিরা হলেনÑবিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন, শওকত মাহমুদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। অন্যদিকে, ২০১৫ সালে দারুসসালাম থানা এলাকায় নাশকতার অভিযোগে আটটি মামলা দায়ের করা হয়। এই আট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আসামি করা হয়। গত বছরে এসব মামলায় ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। অভিযোগপত্রের পর খালেদা জিয়া এসব মামলায় হাজির হয়ে জামিন নেন।