কী ঘটেছিল মহাবিস্ফোরণের পর?

70

আদি নেই অন্ত নেই, সময়ের বালাই নেই। বস্তু তো নেই-ই। হঠাৎ এক বিস্ফোরণ। সময়ের শুরু।

শুরু গণিত-পদার্থবিজ্ঞানেরও। সময়ের শুরু তখন, কিন্তু সে সময় বোধহয় অনেক অনেক বেশি ধীরে চলেছিল। কারণ তখনকার ঘটনার ঘনঘটার হিসাব মেলাতে গেলে তা-ই মনে হয়। এক সেকেন্ড আর কতইবা সময়! একে আমরা কত টুকুরো করতে পারি, হ্যাঁ ন্যানো সেকেন্ড পিকো সেকেন্ডের মাপ বিজ্ঞানীরা করেছেন, অত্যন্ত শক্তিশালী ঘড়ির সাহায্যে। যে ঘড়িকে বলে অ্যাটমিক ওয়াচ। কিন্তু কম্পিউটারে হিসেব-টিসেব না করে আমাদের নিজেদের দুটি চোখ আর মাথা কাজে লাগিয়ে কতটুকু সময় মাপতে পারি? সেকেন্ডে দশ ভাগের এক ভাগ সময়ের মধ্যে পর পর দুটো ঘটনা ঘটে গেলে, সেই ঘটনাদুটোর মাঝখানের পার্থক্য আমাদের মগজ ধরতে পারে না। সিনেমা দেখা সময় তাই আমরা ফ্রেমের পর ফ্রেম চলে যায় মাঝখানের ব্যবধান ধরতে পারি না। অনেকগুলো স্থিরচিত্র আমাদের পর পর আমাদের সামনে দিয়ে আসে-যায়, কিন্তু আমরা বুঝতে পারে না পারি না সেই যাওয়া-আসাটাকে। কিন্তু বিগ ব্যাংয়ের পর পরই হিসাবটা ছিল একদম অন্যরকম। তখন এ কয়েক মিনিটে যত ঘটনা ঘটেছে, সেটা অবিশ্বাস্য। শুধু মিনিটই বলি কেন? নবজাতক মহাবিশ্ব যেন ছুটেছে পাগলা ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে। মহাবিশ্বের শুরুর সময়টাকে বলে প্ল্যাঙ্ক যুগ। সেই যুগটার ব্যাপ্তীকাল কতটা ছিল, জানলে আপনার চোখ কপালে উঠে যাবে।

প্ল্যাঙ্ক যুগের সমাপ্তি মহাবিশ্বের বিগ ব্যাংয়ের পর ১০-৪৩ সেকেন্ড পরে। প্ল্যাঙ্ক যুগ যত ক্ষণস্থায়ীই হোক, যত ক্ষুদ্রই হোক সেই যুগের মহাবিশ্বের আকার, সেই মহাবিশ্বের কিন্তু রণচন্ত্মী মূর্তি ছিল। সেটা এর তাপমাত্রায়। ১০৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নরক গুলজার করা মহাবিশ্ব যাকে বলে। এই তাপমাত্রাকেই বলে প্ল্যাঙ্ক তাপমাত্রা। আর ওই যুগের ব্যাপ্তীকাল, যেটাকে আমরা ১০-৪৩ সেকেন্ড দিয়ে প্রকাশ করছি, এই সময়টাকেই বলে প্যাঙ্ক সময়। প্ল্যাঙ্ক যুগের পরেই মহা একীভবন যুগ। ইংরেজিতে যাকে বলে গ্রান্ড ইউনিফিকেশন এরা। এই যুগে এসেই চারটি বল আলাদা হয়ে যায়। উল্টো দিক থেকে যদি হিসেব করি তাহলে এই যুগ মহাকর্ষ বল অন্য তিন বলের থেকে আলাদা হয়ে স্বতন্ত্র চরিত্রে আত্মপ্রকাশ করে। এই যুগের ব্যাপ্তী বিগ ব্যাংয়ের পরের ১০-৪৩ থেকে ১০-৩৬ সেকেন্ড পর্যন্ত। এরপরের যুগটা অনেক ঘটনাবহুল। মাত্র ১০-৪ সেকেন্ডে সময় মাত্র। এরমধ্যেই ফুঁলে-ফেঁপে বিরাট আকার ধারণ করে মহাবিশ্ব। এই যুগকে বলে স্ফীতি যুগ। এই যুগে মহাবিশ্বের আকার বেড়ে যায় ১০২৬ গুণ। একের পিঠে ছাব্বিশটা শূন্য বসালে যে সংখ্যা পাওয়া যায়, সেই পরিমাণ বেড়ে গিয়েছিল মহাবিশ্বের আকার। তাই বলে ভাববেন বিশাল প্রসারণ ঘটেছিল বলেই মহাবিশ্ব বিশাল দানবে পরিণত হয়েছিল। এই সময় মহাবিশ্বের আকার দাঁড়িয়েছিল একটা আঙুর ফলের সমান। তবু মহাবিশ্বের জন্য এটা বিশাল এক লাফ। মহাবিস্ফোরণের ১০-৩৬ থেকে ১০-৩২ পর্যন্ত ছিল স্ফীতি যুগের মেয়াদকাল। এর পর শুরু দুর্বল নিউক্লীয় যুগের। এই যুগের ব্যাপ্তী আগের যুগগুলোর তুলনায় বরং অনেক অনেক বেশি। ১০-২০ সেকেন্ড স্থায়ী হয় এই যুগ। এই যুগে সবল নিউক্লীয় বল আলাদা হয়ে যায়। তবে দুর্বল নিউক্লীয় বল আর বিদ্যুৎচুম্বকীয় বল তখনো একসঙ্গে রয়ে যায়। এই যুগেই জন্ম হয় বেশ কিছু মৌলিক কণাদের। এই কণাগুলো আমাদের পরিচিত সুলভ কণা নয়। ডাবিব্লও, জেড ও হিগস বোসন কণাদের জন্ম এই যুগে। এই যুগের সমাপ্তি হয় মহাবিস্ফোরণের ১০-১২ সেকেন্ড পরে।

এর পরেই পরিচিত বস্তুকণাদের যুগ শুরু। এই যুগকে বলে কোয়ার্ক যুগ। কোয়ার্ক তৈরি হয় সবচেয়ে পরিচিত কণা কোয়ার্ক আর ইলেকট্রনের। আর জন্ম হয় রাশি রাশি নিউট্রিনো কণার। মহাবিশ্বের তাপমাত্র কমে নেমে আসে ১০১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এই যুগে এসে মৌলিক বলগুলো আর কোনোটাই কোনোটার সাথে থাকে না। সবগুলো আলাদা হয়ে যায়। তাঁদের সেই আলাদা হওয়াটা আজও বজায় রয়েছে। এ যুগে শুধু কোয়ার্ক আর ইলেকট্রনই তৈরি হয়নি। তৈরি হয়েছির এদের প্রতিকণাও। যেমন ইলেকট্রনের প্রকিকণা পজিট্রন আর কোয়ার্কের প্রতিকণা অ্যান্টি-কোয়ার্কও। কোয়ান্টাম মেকানিক্স বলে, কণা আর প্রতিকণাদের সংঘর্ষ ঘটলে দুটো কণা পরস্পরের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে দুটোই ধ্বংস হয়ে যায়। আইনস্টাইনের ভর-শক্তি সমীকরণ অনুসারে পড়ে থাকে শুধু। কোয়ার্ক যুগে যেসব কণা আর প্রতিকণারা তৈরি হচ্ছিল, তারা একে অন্যের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল। সেটাই যদি হত, কণা আর প্রতিকণাদের মিলনে সংঘর্ষে সব কণাই যদি ধ্বংস হয়ে যেত তাহলে এই মহাবিশ্ব গঠনের জন্য এত্ত এত্ত পদার্থ কোত্থেকে এলো? আমরাই বা কীভাবে জন্ম নিলাম? এটা একটা মস্ত রহস্য।

বিজ্ঞানীরা হিসেব কষে দেখেছেন প্রতি এক বিলিয়ন জোড়া কণা-প্রতিকণার জোড়ার মধ্যে মাত্র একটি কণা বেঁচে যায়। সেটা সাধারণ কণা। যেমন কোয়ার্ক বা ইলেকট্রন। তাহলে তো সেই জোড়া কণাদের মধ্যে প্রতিকণাও থাকার কথা ছিল। প্রতি কণারা কেন হারিয়ে গেল, আমাদের নিত্যদিনে চারপাশে তাদের পাই না কেন? প্রতিকণারা কোনো এক রহস্যময় করণে হারিয়ে গেছে। কেন গেছে সে খবর কেউ বলতে পারে না। তবে ভাগ্যিস ওরা হারিয়ে গিয়েছিল। তাহলে কোনা কণাই আর থাকতইতটা জোড়ার মিলনে ধ্বংস হয়ে যেত। আমাদের মহাবিশ্বও আর তৈরি হত। আর সেই মহাবিশ্বকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য থাকতাম না আমরাও। কোয়ার্ক যুগের ব্যাপ্তীকাল ছিল মহাবিস্ফোরণের ১০-১২ সেকেন্ড থেকে ১০-৬ সেকেন্ড পর্যন্ত।

কোয়ার্ক যুগ শেষ হওয়ার সাথে সাথে শুরু হয় হ্যাড্রন যুগ। নামের মধ্যেই রয়েছে এই যুগের বৈশিষ্ট্য লুকিয়ে। এই যুগেই হ্যাড্রন কণাদের জন্ম। এই যুগে এসে মহাবিশ্বের তাপমাত্রা আরো কমে যায়। নেমে আসে এক কোটি ডিগ্রিতে। তাপমাত্রা কমে যায়। এই যুগে বেঁচে যাওয়া কোয়ার্ক কণিকারা পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে তৈরি করছে হ্যাড্রন কণিকা। হ্যাড্রন কণিকা আবার কারা রে বাবা? হ্যাড্রন হলো যৌগিক কণিকা। অনেকগুলো কোয়ার্ক যুক্ত তৈরি হয় হ্যাড্রন কণিকা। যেমন দুটো আপ আর একটা ডাউন কোয়ার্ক মিলে তৈরি করে তৈরি করে প্রোটন। তেমনি দুটি ডাউন আর একটি আপ কোয়ার্ক যুক্ত হয়ে তৈরি হয় নিউট্রন। তৈরি হওয়া নিউট্রন, প্রোটনের মতো যৌগিক কণারাই হলো হ্যাড্রন কণা। তাপমাত্রা অনেকটাই কমে গেছে এই যুগে, তাই কোয়ার্কদের ছোটাছুটিও অনেক কমে যায়। কমে যায় কোয়ার্কদের সংঘর্ষ করার মতো শক্তিও। যখন কোনো পাগলা ঘোড়ার গতি কমে যায়, বৃদ্ধ হয়ে যায় ঘোড়াটি, বনের অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা সিংহ তখন তক্কে তক্কে থাকে থাকে, গতি কমে এলেই তার ঘাড়ে লাফ দিয়ে পড়ে। কোয়ার্কদের ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা ঘটে। তাপমাত্রা কমে যাবার দরুণ কোয়ার্কদের গতি যখন অনেকটাই কম, তখন তার ঘাড়ে চেপে বসে গ্লুয়ন কণরা। গ্লুয়ন হলো সবল নিউক্লিয় বলের বাহক। গ্লুয়ন কণারা শক্ত করে জাপটে ধরে তিন তিনটি কোয়ার্ককে। সবল নিউক্লীয় বলের সাহায্যে তাঁদের কে গেঁথে ফেলে এক সূত্রে। ফলে তিন কোয়ার্ক মিলে তৈরি করে প্রোটন অথবা নিউট্রন। আবার নিউট্রন আরেকটু অন্যভাবেই তৈরি হয়। ইলেকট্রন আর প্রোটনের সংঘর্ষ হয়ে। সেই সংঘর্ষ থেকেই জন্ম হয় একটা নিউট্রন আর একটা নিউট্রিনোর। বেশিরভাগ নিউট্রিনোও প্রায় আলোর বেগের কাছাকাছি গতিতে ছুটে বেরিয়ে যায়। সেই ছুটে চলা আজও অব্যাহত রয়েছে।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার উল্টো ঘটনাও ঘটে। সদ্য জন্ম হওয়া নিউট্রন আর নিউট্রিনো কণা আবার পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে প্রোটন আর ইলেকট্রন তৈরি করে। মহাবিস্ফোরণের পর থেকে ১০-৬ সেকেন্ড থেকে ১ সেকেন্ড পর্যন্ত সময়কালই হলো হ্যাড্রন যুগ। হ্যাড্রন যুগের পরেই শুরু হয় লেপটন যুগ। এই যুগটা বেশ বড়। অন্তত আগের যুগগুলোর তুলনায়। এই যুগের ব্যাপ্তীকাল প্রায় তিন মিনিটপ্রথম মহাবিস্ফোরণের পর প্রথম এক সেকেন্ড পর দিয়ে পরবর্তী ২ মিনিট ৫৯ সেকেন্ড হলো লেপটনদের খেলা। এই যুগে লেপটন আর প্রতিলেপটনরা মিলিত হয়ে ফোটনের জন্ম দেয়। তেমনি ফোটনরা উল্টো প্রক্রিয়া জন্ম দেয় লেপটন আর প্রতি লেপটনদের। প্রথম তিন মিনিটের পর যেন সময় ধীর হয়ে যায়। এরপরের যুগগুলোর ব্যাপ্তী বাড়তে থাকে। পরের ১৭ মিনিট ধরে চলে নিউক্লিয় বিক্রিয়া। অবশ্য ফিশন নয় ফিউশন। প্রোটন আর নিউট্রনগুলো পরস্পরের খুব কাছাকাছি চলে আসে। এত কাছে, যে প্ল্যাঙ্ক দৈর্ঘ্যও অতিক্রম করে ফেলে। ফলে সক্রিয় হয়ে ওঠে সবল নিউক্লিয় বল। নিউট্রন আর প্রোটন যুক্ত হয়ে তৈরি করে হাউড্রোজেন নিউক্লিয়াস। অন্যদিকে হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াসের সাথে আরো নিউট্রন, প্রোটন যুক্ত হয়ে তৈরি করে হিলিয়াম ও লিথিয়ামের নিউক্লিয়াস। ১৭ মিনিট ধরে ঘটে এই ঘটনা। তখন মাবিশ্বের তাপমাত্রা নেমে এসেছে ১০০ কোটি ডিগ্রিতে। এই যুগের পরেই সাময়িকের জন্য নিউক্লিয়ার ফিউশন বন্ধ হয়ে যায়।

এর পরের যুগের নাম ফোটন যুগ। অনেক লম্বা এই যুগ। এখন আর সেকেন্ডের ভগ্নাংশ দিয়ে হিসাব নয়। হিসাব মিনিট, ঘন্টা কিংবা দিনেও নয়। এবারকার হিসাব আসবে বছরে। তাও এক-দুই কিংবা শত-সহস্র বছরে নয়, লাখো বছরে। ফোটন যুগের ব্যাপ্তীকাল মহাবিস্ফোরণের তিন মিনিট পর থেকেই শুরু। এর শেষ মহাবিশ্বের বয়স ৩ লাখ ৪০ হাজার বছর পর। এই যুগে মহাবিশ্ব আসলে একটা পাজমা অবস্থার স্যুপ। আছে পরমাণুদের নিউক্লিয়াস আর আছে মুক্ত ইলেকট্রন। সেই সাথে বিকিরণ, অর্থাত্ ফোটনের ছড়াছড়ি। এর অবশ্য কারণ আছে। অধিকাংশ লেপটনই প্রতিলেপটনের সাথে মিথস্ক্রিয়া ঘটিয়ে ভ্যানিশ হয়ে গেছে। রয়ে গেছে ফোটন বা বিকিরণ বা আলোক শক্তি। বিকিরণ আছে ঠিকই, কিন্তু মহাবিশ্ব দৃশ্যমান নয়। যদিও তখন মহাবিশ্বকে দেখার জন্য কোনো প্রাণী এমনকী অণুজীবেরও জন্ম হয়নি। ফোটন অথবা আলো অথবা বিকিরণগুলো তখনো ব্যস্ত মুক্ত ইলেকট্রন, প্রোটন, আর নিউক্লাসদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করতে ব্যস্ত। এসময় মহাবিশ্ব অস্বচ্ছ অবয়ব নিয়ে বেঁচেছিল সে যুগে। এরপরে মহাবিশ্ব দৃশ্যমান হতে শুরু করে। কারণ ততোদিনে ধীরে ধীরে পাজমা অবস্থা থেকে মুক্ত হতে শুরু করেছে মহাবিশ্ব। তাপমাত্রা নেমে এসেছে তিন হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এরপরের ৪০ হাজার বছর হলো পুণর্গঠন যুগ। ইংরেজিতে যাকে বলে রিকম্বিনেশন এপক। এতকিছু ঘটছে, সেইসাথে ঘটছে মহাবিশ্বর প্রসারণও। তাই প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে মহাবিশ্বের তাপমাত্রা। এই সময়ে এসে মহাবিশ্বের তাপমাত্রা দাঁড়ায় মাত্র তিন হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আমরা বোথধহয় সবাই জানি, সূর্যের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা এই তাপমাত্রার কাছাকাছি। এই যুগে এসে অভাবিত একটা ঘটনা ঘটল। তাপমাত্রা অনেক কমে গেছে। তাই নিউক্লিয়ার ফিউশন ঘটার মতো তাপমাত্রা তখন আর অবশিষ্ট নেই। কমে গেছে নিউক্লিয়াসদের ছোটাছুটির হার। তখন এদের ঘাড়ে চেপে বসেছে ফোটন কণিকারা। এরা বিদ্যুৎচুম্বকীয় বলের বাহক। সেই বলের সাহায্যে এরা ধণাত্মক চার্জে চার্জিত নিউক্লিয়াস আর ঋণাত্মক চার্জের ইলেকট্রনের মধ্যে একটা বন্ধন তৈরি করে ফেলে। তৈরি হয় একটা আস্ত পরমাণু। হাইড্রোজেনর নিউক্লিয়াসের সাথে ইলেকট্রন যুক্ত হয়ে তৈরি করে হাইড্রোজেন পরমাণু, অন্যদিকে হিলিয়াম নিউক্লিয়াস আর ইলেকট্রনরা মিলে তৈরি করে হিলিয়াম পরমাণু। হিলিয়াম আর হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াসের পরিমাণ এমন ছিল, মহাবিশ্বের ৭৫ শতাংশ বস্তুর পরিমাণ হাউড্রোজেন আর ২৫ শতাংশ দাঁড়াল হিলিয়ামে। বিগ ব্যাংয়ের তিন লাখ আশি হাজার বছর পর এই যুগের সমাপ্তি ঘটে। তখন ফোটন কণাগুলি মুক্ত হয়ে যায়। ছড়িয়ে পড়ে মাবিশ্বের সর্বত্র। দৃশ্যমান হয়ে ওঠে মহবিশ্ব। ফোটনরা মুক্ত হলো, মহাবিশ্ব আলোকিত হলো, এরপরেও ফোটন যুগের পরের যুগকে বলা হয় ডার্ক এরা বা অন্ধকার যুগ। কারণ আছে নিশ্চয়? কারণটা হলো মহাবিশ্ব প্রসারিত হয়ে ফুলে-ফেঁপে এত বড় হয়েছে গোটা মহাবিশ্বকে আলোকিত করার জন্য সেই মুক্ত ফোটনগুলো যথেষ্ট নয়। এভাবে মহাবিশ্ব অন্ধকার হয়ে থাকল প্রায় ১৫ কোটি বছর। এই সময়টাতেই রহস্যময় ডার্ক ম্যাটাররা রাজত্ব করেছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।