কাগজ থেকে মোবাইলে পত্রিকা

61

সোনিয়া শীল

প্রতিদিন কতশত খবর নিয়ে পত্রিকা বের হয়। সকালের রোদ চনমনে হতে না হতেই চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে পত্রিকা পড়ার অভ্যাস এখনো আছে। বিশেষ করে প্রবীণ ব্যক্তিদের কাছে, আজও সকালে পত্রিকা পড়া চায়। গ্রাম বা শহর যেখানেই হোক না কেন, ২০ বছর আগে একটু ধনী বা সম্ভ্রান্ত পরিবার হলে তাদের বাড়িতেই দেখা মিলত পত্রিকার। অনেকে আবার শখের বশেও পত্রিকা রাখতেন। পাড়ার সবাই জানত, আজ কি হলো সারাদেশে তা অমুক ভাই বা সাহেবের কাছে জানতে পাওয়া যাবে। আর টাটকা সংবাদ শুনতে হলে বাড়ির উঠানে একটি রেডিও বা টেলিভিশন রাখা হতো। যারা দেখতে আসত তারা সবাই সারিবদ্ধভাবে বসে পড়ত। চায়ের দোকানে আসার উদ্দেশ্য তার থেকে আমি বেশি জানি বলে জাহির করা। কিন্তু এখন?
সময়ের সাথে সাথে জীবনযাপনের পদ্ধতিও পাল্টে গেছে। একুশ শতকে এসে প্রায় সব শ্রেণির মানুষের কাছে পত্রিকার সব পাতা পড়ার সময় খুব কম। আসর বসিয়ে আর রেডিও বা টেলিভিশনেও সংবাদ শুনতে হয় না। মোবাইল নামক ছোট একটি যন্ত্রে আজ সব পাওয়া যায়। শহুরে জীবন আরো সহজতর হয়ে গেছে। কিন্তু গ্রামে এখনো পত্রিকার যাতায়াত রয়েছে। হয়তো সকাল সকাল নয়, তবে বেলা গড়িয়ে গেলেও পত্রিকা পৌঁছে যায়।
বিভাগীয় শহরগুলোর মতো চাঁপাইনবাবগঞ্জেও স্থানীয় পত্রিকা রয়েছে, দৈনিক গৌড় বাংলা তাদের একটি। আমি যে বছর রেডিও মহানন্দায় কাজ শুরু করি ফেলো হিসেবে, তখন ফিচারগুলো গৌড় বাংলা পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়েছিল। প্রথম প্রথম এমন হতো যে, পত্রিকায় আমার নাম, ছবি এসেছে; অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করত। এখনো তার ব্যতিক্রম হয়নি। আমি যখন কয়েকজন ফেলোর কাজগুলো দেখি পত্রিকায় প্রকাশ হচ্ছে, তখন সেই ভালো লাগাটা আবারো ফিরে আসে। গ্রাম এলাকায় থাকি বলে অনেক সময় দুপুর গড়িয়ে যায় পত্রিকা পৌঁছাতে। আমার বাবা তখন পত্রিকাগুলো কিনে রাখতেন।
একদিনের ঘটনা বলি, তখন সাজিদ আংকেল নতুন এসেছেন অফিসে। তো একটি সংবাদ নিয়ে কথা বলার জন্য ফোন দিই। ফোনটা আবার রিসিভ করেন সাজিদ আংকেল। আমি না বুঝেই সব বলে ফেলি। সংবাদ দিয়ে দেয়া হয়ে গেছে। সাজিদ আংকেল দেখে দিয়েছেন। প্রায় আধা ঘণ্টা পর শিশির আংকেল জিজ্ঞেস করছেন- কি মা ফোন দিয়েছিলে? আমি তো অবাক। আরে কিছুক্ষণ আগেই তো আপনি আমাকে বললেন সংবাদটি দিতে। আবার আপনি জিজ্ঞেস করছেন? আংকেল কোথাও গ-গোল হয়েছে। পরে তিনি বললেন- সাজিদ ভাই বলেছেন, তাহলে ঠিক আছে। কোনো সমস্যা নাই।
তবে এখন পত্রিকায় যে কোনো আপডেট মোবাইলের নোটিফিকেশনে জানান দেয়। হাতে হাতে স্মার্টফোন হয়তো সব খবরাখবরই আমাদের দিচ্ছে। কিন্তু কাগজের পত্রিকা হাতে নরম রোদে বসে ওম নেয় প্রবীণরা।

সোনিয়া শীল : সহকারী প্রযোজক, অনুষ্ঠান ও নিউজ, রেডিও মহানন্দা