যৌথ প্রযোজনার ছবিতে বাংলাদেশ ও কলকাতার অভিনয়শিল্পীদের সমান অংশগ্রহণ থাকবে, এমনটা নীতিমালাতেই বলা আছে। কিন্তু দেশি ছবির বেলায় ইদানীং কলকাতার অভিনেত্রীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। সম্প্রতি পরপর বেশ কয়েকটি নতুন ছবির ঘোষণা এল, যেখানে মূল নারী চরিত্রে ভারতের টালিউডের নায়িকাদের অভিনয়ের খবর পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে কলকাতার ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, শ্রাবন্তী, প্রিয়াঙ্কা সরকার, মুমতাজ সরকার, পায়েলের ব্যস্ততা বাড়ার কারণ হিসেবে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন নায়িকা-সংকটের কথা। তা ছাড়া নির্মাতাদের বয়ানে, এক ছবিতে দুজন সমসাময়িক নায়িকা কাজ করতে চান না। তাই কাজের সুবিধার্থে একজন নায়িকা পাশের দেশ থেকে নিতে হচ্ছে তাঁদের।
সম্প্রতি ক্যাপ্টেন খান নামের একটি ছবিতে শাকিব খানের দুই নায়িকার একজন হিসবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন কলকাতার পায়েল মুখার্জি। আগামি মাসে ছবির মহরত। ছবির পরিচালক উত্তম আকাশ বলেন, ‘ছবির এক নায়িকা বুবলী। তাঁর সঙ্গে দেশের সমসাময়িক আরেকজন নায়িকা নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দুই নায়িকার কথা শুনে বুবলির সঙ্গে যাকে নিতে চেয়েছিলাম, তিনি রাজি হননি। তাই বাধ্য হয়ে কলকাতার নায়িকাকে নিয়েছি।’
পায়েলকে নেওয়ার আরও একটি কারণ দেখালেন এই পরিচালক। তিনি বললেন, ‘কলকাতার নায়িকারা শুটিংয়ে খুব সময় মেনে চলেন। তাই স্বচ্ছন্দে কাজটি করতে পারি।’
প্রযোজক ও প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘নায়িকা-সংকট তো আছেই, পাশাপাশি আমাদের অভিনেত্রীদের অনেকেই একের অধিক নায়িকা থাকলে ছবিতে কাজই করতে চান না। অনেক সময় শিডিউল নিয়ে ঝামেলা করেন।’
মায়া-দ্য লস্ট মাদার ছবির শুটিংয়ে এখন ঢাকায় আছেন কলকাতার মুমতাজ সরকার। খানিকটা ভিন্নমত পোষণ করে এই ছবির পরিচালক মাসুদ পথিক বলেন, ‘গল্পের প্রয়োজনে আমি কলকাতার নায়িকাকে নিয়েছি। তা ছাড়া শুটিংয়ের শিডিউল ঝামেলামুক্ত ও টানা কাজ করে যাওয়ার জন্যও মুমতাজ সরকারকে নেওয়া।’
বাংলাদেশে কলকাতার নায়িকাদের চাহিদা তৈরির ব্যাপারে এখানকার নায়ক-নায়িকাদের অপেশাদারির কথা বললেন প্রযোজক নাসিরউদ্দিন দিলু। তাঁর ভাষায়, ‘আমাদের চলচ্চিত্রে সংকটের মধ্যেও যে কজন নায়িকা আছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই আবার অপেশাদার। এ কারণেই পরিচালকেরা আজকাল কলকাতার নায়িকা নিয়ে ঝামেলাবিহীন কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছেন।’
দেশি ছবিতে কলকাতার নায়িকাদের কাজের বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন নায়ক ও পরিচালক আলমগীর। তিনি বলেন, ‘শিল্পীদের কোনো সীমানা থাকা ঠিক নয়। আমরা একই ভাষাভাষী। এভাবে কাজ করলে বিশ্ব চলচ্চিত্র সম্পর্কে শিল্পীরা জানতে পারবেন, জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন। পেশাদারি বাড়বে।’
উল্লেখ্য, আলমগীর পরিচালিত একটি সিনেমার গল্প ছবিটি আছে মুক্তির অপেক্ষায়। এ ছবিতে বাংলাদেশের আরিফিন শুভর বিপরীতে অভিনয় করছেন ভারতের ঋতুপর্ণা। তিনি বলেন, ‘গল্পের প্রয়োজনে ঋতুপর্ণাকে নিয়ে কাজ করেছি। তাঁর শুটিংয়ের সময়জ্ঞান, আন্তরিকতা, পেশাদারি আচরণ প্রশংসনীয়। এভাবে দুই দেশের শিল্পীদের মধ্যে কাজের অভিজ্ঞতা আদান-প্রদান হতে থাকলে বাংলা চলচ্চিত্র এগিয়ে যাবে।’
দেশি ছবিতে কলকাতার নায়িকাদের চাহিদা নিয়ে অভিনেত্রী পূর্ণিমা বলেন, ‘আমাদের সময়েও অনেক নায়িকা থাকা সত্ত্বেও রচনা ব্যানার্জি, মনিকা বেদি, ঋতুপর্ণার মতো অভিনেত্রীরা এ দেশের ছবিতে কাজ করেছেন। পাশাপাশি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, মৌসুমী, শাবনূরের সঙ্গেও তো আমি এক ছবিতে কাজ করেছি। তখন এমন কোনো সংকট ছিল না। তবে এখন নির্মাতা-প্রযোজকদের যে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে, এসব নিয়ে আমার মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’