একুশে পদক পাচ্ছেন দই বেচে শিক্ষার আলো ছড়ানো জিয়াউল হক

81

লেখাপড়া করেছেন পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত। পরিবারে অভাব জেঁকে বসায় স্কুলের পথ আর মাড়ানো হয়নি। নেমে পড়েন দুধ বিক্রিতে। কিন্তু মনের মধ্যে স্কুলে না যাওয়ার আক্ষেপটা থেকেই যায়। আর তাই তো পরিশ্রমের মজুরি থেকে এলাকার গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীদের বইসহ অন্যান্য উপকরণ কিনে দিতেন। এইভাবে শিক্ষার আলো ছড়ানো শুরু মানুষটির। গড়ে তুলেছেন ‘জিয়াউল হক সাধারণ পাঠাগার’; যেখানে বইয়ের বিশাল ভাণ্ডার।
মানুষটি আর কেউ নন, আলোকিত মানুষ জিয়াউল হক। বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার চামামুশরীভুজা গ্রামে।
‘বেচি দই, কিনি বই’ স্লোগানের রূপকার এই মানুষটি শিক্ষার আলো ছড়ানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি তিনি। ব্যাপকভাবে সমাজসেবায় জড়িয়ে পড়েন। ঘরবাড়ি নির্মাণ থেকে শুরু করে এলাকার খাবার পানি সংকট নিরসনে টিউবওয়েলও স্থাপন করে দেন।
চরম দরিদ্রতাকে জয় করে পথচলা জিয়াউল চাঁপাইনবাবগঞ্জকে আবারো গৌরবান্বিত করেছেন। তিনি একুশে পদক-২০২৪ এর জন্য মনোনীত হয়েছেন। সমাজসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য জিয়াউল হক একুশে পদক পাচ্ছেন।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আইরীন ফারজানা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে। জিয়াউল হক ছাড়াও দেশের আরো বিশিষ্ট ২০ ব্যক্তি একুশে পদক পাচ্ছেন।
এর আগে ২০২০ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক পেয়েছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃতী সন্তান প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ভাষাসৈনিক আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু ডাক্তার।
মরহুম তৈয়ব আলী মোল্লা ও শরীফুন নেসার দম্পতির ছেলে জিয়াউল হকের জন্ম ১৯৩৮ সালে। দুধ বিক্রির পাশাপাশি দইয়ের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। দইয়ের ব্যবসায় লাভ বেশি হওয়ায় প্রতিদিনের পরিবারের খরচ মিটিয়ে বাকি অর্থ দিয়ে নেমে পড়েন সমাজসেবায়।
প্রতিদিন দই মাথায় নিয়ে সাইকেলে করে গ্রামে-গঞ্জে বিক্রি করেছেন। আর দই বিক্রির টাকা থেকে কিনতেন দুই-একটি বই অথবা পত্রপত্রিকা। আর এভাবেই ১৯৬৯ সাল হতে তিল তিল করে গড়ে তোলেন ‘জিয়াউল হক সাধারণ পাঠাগার’।
তিনি শুরুর দিকে অভাবগ্রস্ত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যবই প্রদান করতেন। বর্ষ শেষে আবার ফেরত নিয়ে আসতেন। পরবর্তীতে স্থানীয় হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় পাঠ্যবই, পবিত্র কোরআন মাজিদ ও এতিমদের পোশাক, শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রাখেন। পবিত্র ঈদে দুস্থদের মধ্যে কাপড় বিতরণ করছেন। এছাড়া গ্রামের বিভিন্ন ছিন্নমূল মানুষকে টিনের ঘরও তৈরি করে দেন। এতিমখানায় পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানির খাসি কিনে দেন। এভাবেই তিনি সমাজসেবা করে আসছেন।
তাঁর তৈরি দইয়ের নামডাকও দেশজুড়ে। আপাদমস্তক সততার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত জিয়াউল হকের পাঠাগারে ২০ হাজারের উপরে বই রয়েছে। দেশের খ্যাতিমান ব্যক্তি ও সংস্থা তাঁকে বই ও সেলফ দিয়ে সহায়তা করেছেন।
শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবী জিয়াউল হক তাঁর কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মাননাও পেয়েছেন।
এদিকে জিয়াউল হকের একুশে পদক প্রাপ্তিতে আনন্দে ভাসছে ভোলাহাটসহ পুরো চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা। তাঁকে অনেকেই অভিনন্দন জানাচ্ছেন।