এই মৌসুমে সেন্টমার্টিন

60

সেন্টমার্টিন! অসীম নীল আকাশের সাথে সমুদ্রের নীল জলের মিতালি, সারি সারি নারিকেল গাছ এ দ্বীপকে করেছে অনন্য, যা ভ্রমণপিয়াসী মানুষকে দুর্নিবার আকর্ষণে কাছে টেনে নেয়। এরই মধ্যে সেন্টমার্টিনে পর্যটন মৌসুম শুরু হয়েছে। প্রবাল দ্বীপটিতে ভ্রমণে যাওয়ার আগে যেসব তথ্য জেনে নেওয়া জরুরি, সেসব উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি আমরা—

জাহাজ, ট্রলার ও স্পিডবোট
কক্সবাজারের টেকনাফের দমদমিয়া ঘাট থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে এখন প্রতিদিন সকাল ৯টায় কেয়ারি সিন্দাবাদ, কেয়ারি ক্রুজ এন্ড ডাইন, এম ভি বার আউলিয়া জাহাজ চলাচল করছে। এছাড়া দ্য আটলান্টিক ক্রুজ, বে ক্রুজ, গ্রিন লাইন, এমভি পারিজাত, এমভি ফারহানসহ বেশ কিছু জাহাজ চলাচলের অপেক্ষায় রয়েছে। এসব জাহাজের আসা-যাওয়া ভাড়া ১০০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। চট্টগ্রাম থেকে এমভি বে ওয়ান রাত ১০টায় এবং কক্সবাজার থেকে ভোর ৫টা থেকে ১০টার মধ্যে (জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভরশীল) কর্ণফুলী এক্সপ্রেস চলাচল করে। চট্টগ্রাম থেকে (আপ-ডাউন) সর্বনিম্ন ভাড়া ৪৫০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ভাড়া ৪৫,০০০ টাকা। এছাড়া কক্সবাজার (আপ-ডাউন) থেকে সর্বনিম্ন ভাড়া ৩০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ভাড়া ২২,০০০ টাকা। টেকনাফ থেকে জাহাজ না পেলে ট্রলার ও স্পিডবোটে সেন্টমার্টিন যাওয়া যায়। তবে পানিভীতি থাকলে ট্রলার ও স্পিডবোটে ভ্রমণ না করাই উত্তম। কারণ সমুদ্রের ঢেউয়ে সমস্যা হতে পারে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ১টার মধ্যে ট্রলার ও স্পিডবোট ছেড়ে যায়। ট্রলার ভাড়া জনপ্রতি ৩৫০ টাকার মধ্যে এবং স্পিডবোট ভাড়া ৮০০টাকা থেকে শুরু হয়।

হোটেল, রিসোর্ট ও তাঁবু
সেন্টমার্টিনে রাত্রিযাপন অনেকে কাছে অনেকের কাছে স্বপ্নের মতো। আবার অনেকে প্রতি বছরই জ্যোত্স্নাবিলাস করেন প্রবাল এই দ্বীপে। একসময় সেন্টমার্টিনে সীমিত কিছু রিসোর্ট থাকলেও, বর্তমানে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে হোটেল, রিসোর্ট, কটেজ! এর ফলে জীববৈচিত্র্য ও দ্বীপের অস্তিত্ব হুমকির মুখে হলেও হাজার হাজার পর্যটকের ঠাঁই হচ্ছে সেসব হোটেলে।এত এত হোটেল-রিসোর্টের ভিড়েও বর্তমানে সেন্টমার্টিনে বেশ কয়েকটি রিসোর্ট বেশ পরিচিতি পেয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম- দ্বীপান্তর বিচ রিসোর্ট, আটলান্টিক রিসোর্ট, জ্যোত্স্নালয় বিচ রিসোর্ট, গোধূলী ইকো রিসোর্ট, ব্লু মেরিন রিসোর্ট, ফ্যান্টাসি হোটেল এন্ড রিসোর্ট, কিংশুক ইকো রিসোর্ট, মিউজিক ইকো রিসোর্ট, নীল দিগন্ত রিসোর্ট, দ্যা বিচ ক্যাম্প রিসোর্ট ইত্যাদি। এসব রিসোর্টে থাকতে গেলে খরচ করতে হবে ১৮০০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে মোটামুটি মানে ভালো কটেজে থাকতে ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। যারা বাজেট ট্রাভেলার, তারা বাজারের আশেপাশের রিসোর্ট কিংবা হোম-স্টেগুলোতে থাকতে পারেন। এসব রিসোর্টে ৮০০ থেকে ৫০০০টাকার মধ্যে রুম পাবেন। এছাড়া সেন্টমার্টিনে তাঁবুতে থাকতে পারেন।

সেন্টমার্টিনে রসনাবিলাস
প্রবাল দ্বীপ ভ্রমণে গিয়ে সামুদ্রিক মাছ না খেলে বারো আনাই বৃথা! দুপুর কিংবা রাতে বাজারে সব হোটেলেই মাছ সাজিয়ে রাখা হয়, যেটা যেভাবে বলবেন সেভাবেই আপনাকে পরিবেশন করা হবে। এছাড়া মূল বিচে সন্ধ্যার পরে বসেই চিংড়ি, ক্র্যাব ফ্রাই কিংবা আপনার পছন্দের মাছ বারবিকিউ করতে পারেন। দুপুর ও রাতের খাবারে ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা বাজেট রাখতে পারেন। এছাড়া বারবিকিউ প্যাকেজ ৩০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যেই থাকে। নারকেলগাছে ভরপুর সেন্টমার্টিন দ্বীপের আরেক নাম ‘নারকেল জিঞ্জিরা’। পর্যটকরা এখানে এলেই ডাবের পানিতে তৃষ্ণা মেটান। কয়েক বছর আগেও এই দ্বীপে প্রতিটি ডাব বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। যদিও বর্তমানে সেন্টমার্টিনে ডাব বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৫০ টাকায়।

কী আছে দেখার মতো
পুরো সেন্টমার্টিন-ই দেখার মতো। অফুরন্ত প্রাণের ভাণ্ডার এই দ্বীপ। তবু বিশেষভাবে পশ্চিম বিচে বসে সূর্যাস্ত দেখতে পারেন। সাইক্লিং করে যেতে পারেন দ্বীপের উত্তর পাশের নারিকেল জিঞ্জিরা ও পশ্চিম পাশের কোরাল দ্বীপ। এছাড়া খুব সকালে জেটি ঘাটে সূর্যোদয়, এরপর দেশের সর্ব দক্ষিণের শেষ স্থলভাগ ছেঁড়াদ্বীপ ঘুরে আসতে পারেন। বিকেলে জেটির বাম পাশের বিচে জেলেদের সাথে জাল টেনে মাছ ধরার অপরূপ দৃশ্য দেখতে পারেন। ভাগ্য ভালো হলে ফ্রি মাছও পেয়ে যেতে পারেন। স্কুবা ড্রাইভিং কিংবা স্নোরকেলিং করতে চাইলে দিনের যেকোনো সময় করতে পারেন। সন্ধ্যায় মূল বিচে বসে বারবিকিউ করতে পারেন। রাতের পরিষ্কার আকাশে দেখবেন লাখ লাখ তারা, ভরা পূর্ণিমা এবং শুনবেন উত্তাল সমুদ্রের গর্জন।