উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তির করোনা পজিটিভ, আরো এক শনাক্ত : করোনা ঝুঁকিতে গোমস্তাপুর

56

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলা করোনা ঝুঁকিতে রয়েছে। সীমান্তবর্তী এ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত ১৭ এপ্রিল থেকে করোনা শনাক্তে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত র‌্যাপিড টেস্টে ৮ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট কার্যকর প্রমাণে এ টেস্টে শনাক্তদের নমুনা রাজশাহী মেডিকেল কলেজের আরটি-পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। এতে ৩ জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে।
গতকাল বুধবারও উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের একজন করোনা শনাক্ত হয়েছেন। এই নিয়ে দ্বিতীয় ঢেউয়ে গোমস্তাপুরে ৯ জন করোনা শনাক্ত হলেন। এদের মধ্যে একজন মৃত্যুবরণ করেছেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, বোয়ালিয়া ইউনিয়নের ৫৫ বছর বয়সী ওই প্রবীণ জ্বর, নাকে ঘ্রাণ না পাওয়া, দুর্বলতা, শরীর ব্যথা উপসর্গ নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য এলে তার র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করানো হয়। টেস্টে তার ফলাফল পজিটিভ আসে। তাকে চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে আইসোলেশনে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে গত ২৪ এপ্রিল শনিবার ভোরে করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকারী মোখলেসুর রহমানের রিপোর্টে করোনা পজিটিভ এসেছে। পঁচাত্তর বছর বয়সী মোখলেসের বাড়ি উপজেলার গোমস্তাপুর ইউনিয়নে। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে গোমস্তাপুর উপজেলায় প্রথম করোনা রোগীর মৃত্যু হলো।
গত ২৭ এপ্রিল মঙ্গলবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ল্যাব থেকে আসা তিনিসহ আরো তিনজনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে করোনা পজিটিভ এসেছে।
এদিকে প্রায় প্রতিদিনই একজন করে শনাক্ত হওয়ায় গোমস্তাপুর উপজেলা করোনার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি, সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া অপ্রয়োজনীয় জনসমাগম এড়াতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনা মনিটরিং কর্মকর্তা ডা. হাসান আলী জানান, করোনার দ্বিতীয় টেউয়ে গত ১৭ এপ্রিল হতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালু হয়। পরীক্ষা চালুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৭ জন করোনা শনাক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাদের নমুনা পুনরায় আরটি-পিসিআর পরীক্ষার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ল্যাবে পাঠানো হয়। মঙ্গলবার রাতে এদের মধ্যে ৩ জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। তারা হলেন- রফিকুল (৫০), আব্দুর রশিদ (৫৫) ও জিল্লুর রহমান (৫৯)।
ডা. হাসান আরো বলেন, গত বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) গোমস্তাপুর ইউনিয়নের মোখলেসুর রহমান নামে এক বৃদ্ধ জ্বর ও কাশি নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাৎক্ষণিকভাবে তার র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করান। পরীক্ষায় তার নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। আরেকটি স্যাম্পল পিসিআর পরীক্ষার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ল্যাবে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ওই রোগী গত শনিবার বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। মঙ্গলবার রাতে নমুনা পরীক্ষায় তার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। ফলে করোনায় মোখলেসুর রহমানের মৃত্যু হয়েছে।
করোনা মনিটরিং কর্মকর্তা জানান, গোমস্তাপুর উপজেলা ভয়াবহ করোনার ঝুঁকিতে আছে। এমতাবস্থায় সকলকে সচেতন থাকতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনুরোধ জানান তিনি। এছাড়া জ্বর-কাশি হলে দ্রুত হাসপাতালে যোগাযোগ করে র‌্যাপিড আ্যান্টিজেন টেস্ট করানোর আহ্বানও জানান। তিনি বলেন, র‌্যাপিড টেস্টের মাধ্যমে ৩০ মিনিটেই করোনা শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে।
সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরীও গোমস্তাপুরে উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তির করোনা পজিটিভের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ১৭ এপ্রিল থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করে গোমস্তাপুর উপজেলায় ৭ জন ও নাচোল উপজেলার ১ জন এবং পিসিআর টেস্টে ১ জনসহ মোট ৯ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেও পরে তার রিপোর্টে করোনা পজিটিভ এসেছে।