উগ্রপন্থা প্রতিরোধে জনসম্পৃক্তকরণ কর্মসূচি বিষয়ক জেলার অংশীজনদের নিয়ে আঞ্চলিক সংলাপ অনুষ্ঠিত

156

উগ্রপন্থা প্রতিরোধে জনসম্পৃক্তকরণ কর্মসূচি বিষয়ক চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অংশীজনদের নিয়ে আঞ্চলিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা রূপান্তরের অর্থায়নে প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি, বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টা ও অনগ্রসর সমাজ উন্নয়ন সংস্থার আয়োজনে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক হাসিব হোসেনের সভাপতিত্বে আঞ্চলিক সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক এজেডএম নূরুল হক। আঞ্চলিক সংলাপে সকল প্রকার উগ্রপন্থা প্রতিরোধে সকলকে আহ্বান জানিয়ে প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক এজেডএম নূরুল হক বলেনÑ সঠিক সময়ে, সঠিক জায়গায় এ সংলাপ অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয়েছে। যারা এ আয়োজন করেছেন তারা অবশ্যই ধন্যবাদ পাবেন। জঙ্গীবাদ, উগ্রপন্থা এসব অবশ্যই দূর করতে হবে। এসবের ক্ষেত্রে আমাদের এ জেলার অবস্থান কেমন। আমাদের এ জেলায় কোন বড় উগ্রপন্থীর জন্ম হয় নাই, তাই সেই দিক থেকে আমাদের অবস্থান অনেক ভালো। আমাদের জেলায় কোন বিদেশিকে মেরে ফেলা হয় নাই। বাংলাদেশের অন্য জেলার কিছু সরকারি কর্মচারীও ছুটি নিয়ে নির্বোধের মতো আন্তর্জাতিক উগ্রপন্থা সংস্থায় যোগ দিয়েছে। সেরকম কোন ঘটনা তো আমাদের জেলায় ঘটে নাই। কিছু কিছু ছোট ঘটনা থাকলেও আমাদের এ জেলা দেশের অন্যান্য জেলার চাইতে তুলনামূলক জঙ্গীবাদ মুক্ত। তবে বেআইনীভাবে থানা আক্রমণ করা, পুলিশের উপর হামলা করা এসব কর্মকান্ডও উগ্রপন্থার মধ্যেই পড়ে। এগুলো রুখতে হবে। কথায় কথায় মাদ্রাসার ছাত্রদের, হুজুরদের দোষারোপ করা হয় এ বিষয়ে দোষারোপ করা হয়। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে অধিকাংশই দেশের বড় বড় কলেজ, ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা জড়িত। তাই অযথা হুজুরদের দোষারোপ করা উচিত নয়। তিনি আরো বলেন, আমরা অনেকেই আমাদের সন্তানদের প্রতি সঠিক দায়িত্ব পালন করিনা। সন্তান কখন কোথায় যায়, কি করে, কি খায়, কার সাথে ঘুরে, কখন বাসায় আসে ইত্যাদির কোন খোঁজই রাখিনা আমরা। যদি একটা সুন্দর, স্বাভাবিক, স্বতস্ফূর্ত পারিবারিক পরিবেশ থাকে, এক টেবিলে সবাই একসাথে খাওয়া-দাওয়া করি তাহলে বিভিন্ন আলোচনার মাধ্যমে আমাদের সব কিছুরই সঠিক খোঁজ থাকে। তবে আমাদের দেশে আগের তুলনায় জঙ্গীবাদ, দাঙ্গা, হাঙ্গামা অনেক কম। এগুলো দেশের উন্নয়নের ফলেই হয়েছে। আমাদের দেশের র‌্যাব, পুলিশসহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান। কারণ তাদের জন্যই এসব কিছু দূর করা সম্ভব হয়েছে। আমাদের দেশ এখন সামনের দিকে এগোচ্ছে, আমরা নিশ্চয়ই গন্তব্যে পৌঁছাবো। এসময় যদি আমরা জঙ্গীবাদ নির্মূল করে গন্তব্যের দিকে এগোতে না পারি তাহলে কখনই উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমাদের পুলিশ সুপার টি.এম মোজাহিদুল ইসলাম এসব সমূলে নির্মূল করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। আমরা যারা সরকারি কর্মকর্তারা আছি, সকলে যখন যেখানে যাই, প্রাসঙ্গিক কিংবা অপ্রাসঙ্গিকভাবেই হোক আমরা এসব উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে কথা বলি। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমেও এসব দূরীকরণের কথা তুলে ধরা উচিত। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দেবেন্দ্রনাথ উঁরাও বলেন, বর্তশান সময়ে সভ্যতার সদস্য হিসেবে পরিচয় দিতে গিয়ে আমরা একটা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। উগ্রবাদদ- মানবসৃষ্ট দুর্যোগ ছাড়া আর কিছু নয়। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কবি, লেখকের সোনার বাংলা এগিয়ে যাবে। আমি এটাই বলব, উগ্রবাদ নিপাত যাক, বাংলাদেশ এগিয়ে যাক। স্বাগত বক্তব্যে সংলাপের সভাপতি ও প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক হাসিব হোসেন, পীস কন্সোর্টিয়াম প্রকল্পসহ প্রয়াসের চলমান কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, রূপান্তর আমাদের বন্ধু সংগঠন। তাদের আমাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জের সম্পর্ক বিভিন্ন ভাবে। সাংস্কৃতিক যে ঐতিহ্য তা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে, কর্মসূচির মাধ্যমে সম্পৃক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে, তারা চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় কাজ করছে। এছাড়াও বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টা, আসুস-তারাও কিন্তু এই অঞ্চলের প্রতিষ্ঠান। চাঁপাইনবাবগঞ্জে পীস কন্সোর্টিয়ামের সাথে কাজ করছে। ২০১৫ সালের প্রথম দিক থেকে আমরা এই কাজটিতে মনোনিবেশ করেছি। তারও আগে প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির যে কালচারাল টিম বা কালচারাল উইং আছে, ২০০৭ থেকে কাজ করছি। কালচারাল ইস্যুগুলো নিয়ে কাজ করছি। ভায়োলেন্স কীভাবে আমাদের ক্ষতি করছে, কীভাবে হচ্ছে এবং পারিবারিক বন্ধনটাকে কীভাবে টিকিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়- সেই বিষয় নিয়ে গম্ভীরা পরিবেশন করেছি জেলা এবং উপজেলাগুলোতে। প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তুলে ধরে পীস কন্সোর্টিয়াম প্রকল্পের পরিচালক শাহাদাত হোসেন বাচ্চু বলেন, শুরুতেই জনগোষ্ঠীর সাথে কন্সোর্টিয়ামের কোনো সম্পর্ক ছিলনা। পরবর্তীতে জনগোষ্ঠীর মধ্যে সম্ভাব্য মানুষদের শনাক্ত করা হয়েছে এবং সমঝোতা স্থাপন করা হয়েছে। পারস্পারিক বোঝাপড়া ও কার্যক্রমের উন্নয়ন, সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা ও সক্ষমতার সৃষ্টি করেছি। জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছি- প্রশিক্ষণ, ওরিয়েন্টেশন এবং নানান ধরণের ওয়ার্কশপের মধ্য দিয়ে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৭০ টি স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় কর্মসূচি বাস্তবায়নে জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার সরাসরি সম্পৃক্ততা ও সহায়তা আমরা পাচ্ছি। কিছু অর্জন আমাতের আছে। সরকারি- বেসরকারি উদ্যোগুলো এক হতে যাচ্ছে। উগ্রবাদের বিপক্ষে তৃণমূলে শান্তি সম্প্রীতি সৌহার্দময় সমাজ গঠনে একধরণের জনসম্পৃক্ততা ও সক্ষমতা সৃষ্টি হচ্ছে এবং আমরা দেখতে পাচ্ছি। উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন পরিবারের সদস্য, শিক্ষকবৃন্দ ও ইমামসহ ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের আলোচনা ও সঠিক দিক নির্দেশনায় পারে তরুণ প্রজন্মকে উগ্রপন্থা থেকে দুরে রাখতে। সংলাপে আরো উপস্থিত ছিলেন, জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ এসএফএম খায়রুল আতাতূর্ক, জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা আনন্দ কুমার অধিকারী, পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত কবির হোসেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তোফিকুল ইসলাম, রেডিও মহানন্দার ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক গোলাম ফারুখ মিথুন, স্টেশন ম্যানেজার আলেয়া ফেরদৌস, অনগ্রসর সমাজ উন্নয়ন সংস্থার প্রকল্প সমন্বয়কারী আয়েশা খাতুন, বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টার প্রকল্প সমন্বয়কারী সাইফুল ইসলাম, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ।