আজ ২২ সেপ্টেম্বর, বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস

66

আজ বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস। গাড়িমুক্ত দিবস পালনের উদ্দেশ্য গাড়িকে রাস্তা থেকে চিরতরে হটিয়ে দেওয়া নয়, মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা। এতে মানুষ তেলচালিত গাড়ির ব্যাপক ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে সচেতন হবে, নতুন দূষণমুক্ত জ্বালানিচালিত গাড়ির সুফল সম্পর্কে জানবে, গাড়ি শিল্পে নতুন নতুন প্রযুক্তি সম্পর্ক অবগত হবে

১৯৭৪ সালে সুইজারল্যান্ডে গাড়িমুক্ত দিবস পালন করা হয়। নব্বইয়ের দশকে এই উদ্যোগের আরো প্রসার ঘটে। যেমন বিশ্বব্যাপী ‘কার ফ্রি সিটি নেটওয়ার্ক’ গড়ে ওঠে। এরপর ১৯৯৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ফ্রান্সে জাতীয়ভাবে ৩৪টি শহরে গাড়িমুক্ত দিবস পালিত হয়। পরের বছর ফ্রান্স ও ইটালির ৯০টি শহরে দিবসটি পালনে ব্যাপক সাড়া পড়ে। ২০০১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্বের ৩৩টি দেশের প্রায় ১ হাজার শহরে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস পালন করা হয়। এখন প্রতি বছর প্রায় ৪ হাজার শহরে দিবসটি পালিত হয়ে থাকে।

দিবসটি পালনের আরো একটি মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে শহরকে দূষণমুক্ত রাখা এবং বাসযোগ্য করে গড়ে তোলা। নগর যাতায়াত পরিকল্পনায় পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যান্ত্রিক বাহনকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে যে বায়ুদূষণ রোধ করা সম্ভব। এই দিবস পালনের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে ব্যক্তিগত গাড়ি পরিহার করে, যান্ত্রিক যান ব্যবহার না করে অযান্ত্রিক যান যেমন—রিকশা, ভ্যান, সাইকেল, স্বল্প দূরত্বে হেঁটে যাতায়াত করতে সচেতন করা হয়। এর ফলে শুধু যানজট নিরসন নয়, জ্বালানি তেলের সাশ্রয়, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ ও বাতাসে কার্বনের মাত্রাও কমিয়ে আনার চেষ্টা চলে। অন্যদিকে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। বর্তমানে ঢাকায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করে। প্রতিদিন যোগ হচ্ছে প্রায় ৪০টি নতুন ব্যক্তিগত গাড়ি। এছাড়া মোটরসাইকেলের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে, এটিও দুর্ঘটনা ও দূষণ বৃদ্ধির জন্য দায়ী। তাই উন্নত গণপরিবহনব্যবস্থার বিকল্প নেই।

বিশ্বের বহু দেশেই এবং অধিকাংশ রাজধানীতে গাড়িমুক্ত হাঁটার সড়ক যেমন আছে, তেমনি থাকে ফুটপাত। আমাদের দেশে সড়ক অনুপাতে ফুটপাতের পরিমাণ খুবই কম। আবার যেটুকু আছে, সেটুকুও অবৈধ স্থাপনা ও ব্যবসার উদ্দেশ্যে ব্যবহারের কারণে বেদখল। ঢাকা মহানগরে বয়সী মানুষের পক্ষে এই শহরের কোনো ফুটপাত ব্যবহার করা সম্ভব নয়। শারীরিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে তো কারোরই মাথাব্যথা নেই। নারীদের জন্যও ফুটপাতে চলাচল করা অত্যন্ত ঝামেলাপূর্ণ, বিব্রতকর, কখনো কখনো হয়রানিমূলক।

মানসম্মত গণপরিবহনের অভাবে অনেকেই ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। ফলে গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি ও ব্যবহারে যানজট বেড়েছে। বর্তমানে যানজটের কারণে প্রতিদিন লাখ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। জ্বালানির অপচয় হচ্ছে, বাড়ছে দূষণ। এসবের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী ব্যক্তিগত গাড়ি। ব্যক্তিগত গাড়ি সড়কে বেশি জায়গা দখল করে ও কম যাত্রী বহন করে। শহর এলাকায় টেকসই পরিবহন নিশ্চিত করার জন্য ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি একটি কার্যকর গণপরিবহন ব্যবস্থা এবং পথচারী ও সাইকেলবান্ধব শহর তৈরি করার এখনই সময়।

দিবসটি উপলক্ষে এক বিবৃতিতে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) জানায়, প্রতি মাসের প্রথম রোববার সব ধরনের ব্যক্তিগত গাড়ি বন্ধ করার রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ প্রয়োজন। আইপিডি জানায়, ২০০৬ সাল থেকে দেশে বেসরকারি উদ্যোগে দিনটি উদযাপন করা হচ্ছে। তবে ২০১৬ সাল থেকে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে এটি পালন শুরু হয়, যেখানে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) মুখ্য সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে এসেছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, বিশ্বের অন্যতম যানজটপ্রবণ ঢাকা শহরে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা থাকা সত্ত্বেও সরকারিভাবে এই দিবসটি পালনের তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশে এই দিবসটি পালনের প্রায় দেড় যুগ পার হতে চললেও ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ও ফলপ্রসূ পরিকল্পনা ও নীতির বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না।

রাজধানীজুড়ে একের পর এক উড়ালসড়ক হয়েছে, কিন্তু কোনোটিই যানজট কমাতে পারেনি বলে মনে করে আইপিডি। সংগঠনটি জানায়, সদ্য আংশিক চালু হওয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েও যানজট কমাতে পারেনি, বরং কিছু জায়গায় বেড়েছে। জনগণের টাকায় এক্সপ্রেসওয়ে হলেও বড় অংশই তা ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে না। ধনী-গরিবের মধ্যে যে বৈষম্য, তা এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে আরও দৃশ্যমান করেছে। জনগণের দাবির কারণে এক্সপ্রেসওয়েতে বিআরটিসির কয়েকটি বাস চালু করা হয়েছে, বিষয়টি ইতিবাচক। তবে এক্সপ্রেসওয়েতে বাস সার্ভিস কীভাবে বাড়ানো যায় তা এখন থেকেই পরিকল্পনা করতে হবে। বর্তমানে গণপরিবহনে যাতায়াতে বেশি সময় লাগে আর ব্যক্তিগত পরিবহনে কম সময় লাগে। এটা ঠিক করতে না পারলে ব্যক্তিগত গাড়ি বাড়তে থাকবে। এতে রাজধানীতে যানজটও বাড়তে থাকবে।

ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবসকে সামনে রেখে আইপিডি দাবি করছে, প্রতি মাসের প্রথম রোববার সব ধরনের ব্যক্তিগত গাড়ি বন্ধ করার রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ প্রয়োজন। এর মাধ্যমে মন্ত্রী-আমলাসহ নীতিনির্ধারকদের গণপরিবহন ব্যবহার ও পায়ে হেঁটে চলার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষেরা যে ধরনের অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছেন, তা উপলব্ধি করবার সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন।