মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকল্পে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মতবিনিময়
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন একটি বাংলাদেশ হয়েছে। এখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না। সামাজিক বৈষম্য কমাতে চায়লে আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে প্রাথমিকের শিশুদের শিক্ষিত করে তোলা।
তিনি বলেন, এখানে সবচেয়ে বেশি শোনা গেছে বৈষম্যহীনতার কথা। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থা খুব একটা ভালো না। বিত্তশালীদের সন্তানরা ভালো স্কুলে চলে যায়। প্রাথমিকে শুধু মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানরা যায়। আমাদের মূল টার্গেট হলো- শিশুদের সাক্ষর করে তোলা। যেন তারা নিজের ভাষাটা লিখতে পারে, নিজের ভাষায় পড়তে পারে ও মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে। এতে করে সমাজের মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানরা সক্ষম হয়ে উঠবে এবং সামাজিক বৈষম্য কমবে।
রবিবার বেলা ১১টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকল্পে জেলা প্রশাসন ও প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন- অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি গণিত ও বিজ্ঞান, এই দুটি বিষয়ে শিশুদের তৈরি করতে হবে। একটি হলো লিটারেসি, আরেকটি হলো নিউমারেসি বা গাণিতিক ভাষা। শিশুরা যেন পড়তে পারে, শিখতে পারে আর গাণিতিক বিষয়টি জানতে পারে, সংখ্যা কী? অঙ্ক কী? যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ করতে পারে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশে খেলা, সংগীত, চিত্রকলা চর্চা ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। শিশুদের মধ্যে অন্যের প্রতি দায় ও দায়িত্ববোধ তৈরি করতে পারলে তাদের পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন হবে।
শিক্ষকদের আরো বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য লাইব্রেরি গড়ে তোলা দরকার বলেও মন্তব্য করেন উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডের দাবি ও আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা একটি সুচিন্তিত মতামত দেয়ার জন্য পরামর্শক কমিটি তৈরি করেছিলাম। সেই কমিটিতে দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ এবং প্রাথমিক শিক্ষার সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের যুক্ত করা হয়েছিল। তারা দীর্ঘ তিন মাস বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন গ্রুপের দাবির বিষয়গুলো শুনেছেন। এরপর তারা আমাদের সুনির্দিষ্ট মতামত দিয়েছেন। তারা পরামর্শ দিয়েছেন, প্রাথমিকে শিক্ষকরা ঢুকবেন ১৩তম বা ১২তম গ্রেডে, এরপর প্রশিক্ষণ নিবেন এবং তাদের চাকরি স্থায়ী হবে ২ বছরে। সবমিলিয়ে ৪ বছর পর তাদের পদোন্নতি হবে। পদোন্নতি পেয়ে জ্যেষ্ঠ বা সিনিয়র শিক্ষক হবেন, এটি ১১ গ্রেড হবে।
উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার আরো বলেন, যখন ১১তম গ্রেড হবে তাদের মধ্যে কেউ কেউ সহকারী প্রধান শিক্ষক হবেন এবং তখন তারা আলাদা বাড়তি একটা ভাতা পাবেন। এখন যারা প্রধান শিক্ষক হন, তাদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ পদোন্নতি ও ৩৫ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ হন। তারা এই পদ্ধতিকে বাতিল করে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ১০০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে করার সুপারিশ করেছে পরামর্শক কমিটি। তবে সেক্ষেত্রে কিছু নিয়ম থাকবে, প্রধান শিক্ষক হতে ন্যূনতম কী যোগ্যতা প্রয়োজন। সহকারী প্রধান শিক্ষক বা সিনিয়র শিক্ষকদের যে কেউ প্রধান শিক্ষক হতে পারবেন। তখন তাদের গ্রেড হবে ১০ম। আবার প্রধান শিক্ষকদেরও পদোন্নতির ব্যবস্থা থাকবে। তারা এটিও হতে পারবেন।
উপদেষ্টা বলেন- পরামর্শক কমিটির এসব প্রস্তাবকে আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। এমনকি শিক্ষকদেরও বেশিরভাগই এটিকে গ্রহণ করেছেন। এটি বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করব।
আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে উপদেষ্টা বলেন, আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য বই ছাপিয়েও শিক্ষক সংকট থাকায় পাঠদান করা যাচ্ছে না। এতে অর্থের অপচয় হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন- সমস্যা সমাধানে ডিজিটাল ক্লাসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যারা এসব ভাষা জানেন, তাদের দিয়ে সুন্দর সুন্দর লেকচার তৈরি করছি। যা দেখে শিক্ষার্থীরা শিখতে পারবে এবং শিক্ষকরাও দেখে দেখে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করতে পারবেন। এটি হলে কিছুটা সমস্যার সমাধান হবে এবং বইগুলো বেকার পড়ে থাকবে না।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, আমাদের একটি বড় সমস্যা হচ্ছে- নির্দিষ্ট ভাষার শিক্ষক নিয়োগ করা। আমাদের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার যে কাঠামো রয়েছে, তাতে আমরা দেখি ওই ভাষার শিক্ষক পরীক্ষায় টিকলেন না। তিনি বলেন- পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োগ প্রক্রিয়া তাদের নিজস্ব। ফলে কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা আছে। শিক্ষকেরও সংকট আছে, খুঁজে পাওয়াও কঠিন। তাই আশু সমাধানের জন্যই ডিজিটাল ক্লাসের ব্যবস্থা করছি। চরাঞ্চলের শিক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন- বিষয়টি আমাদের গোচরে আছে, আমরা চেষ্টা করছি সমস্যা সমাধানের।
সভায় উপস্থিত ছিলেন- জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. নাকিব হাসান তরফদার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. জেছের আলীসহ প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের জেলা-উপজেলা কার্যালয়ের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা।
পরে উপদেষ্টা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন।