ভারত-চীন সম্পর্ক উন্নয়নে বাধা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র: বেইজিং

চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের উন্নতিতে যুক্তরাষ্ট্র বাঁধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে বেইজিং। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এমন অভিযোগ এনেছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে যে, চীন ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের উন্নতিকে বাধাগ্রস্ত করতে যুক্তরাষ্ট্র চীনের প্রতিরক্ষা নীতিকে বিকৃত করে উপস্থাপন করছে। ভারতের সঙ্গে বিতর্কিত সীমান্ত এলাকায় উত্তজনা প্রশমনের সুযোগ নিয়ে চীন ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান সম্পর্ককে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে কি না- বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বেইজিংয়ে সংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান এই মন্তব্য করেন। লিন বলেন, “চীন ভারতের সঙ্গে তার সম্পর্ককে একটি কৌশলগত ও দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে।” তিনি আরো যোগ করেন যে, “সীমান্ত ইস্যুটি চীন ও ভারতের মধ্যকার নিজস্ব বিষয় এবং এই বিষয়ে অন্য কোনো দেশের বিচার বা মন্তব্য করার ঘোর বিরোধী আমরা।” গত মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল যে, চীন ‘সম্ভবত এই উত্তজনা হ্রাসের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থিতিশীল করতে চায় এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সম্পর্ক আরো গভীর হওয়া ঠেকাতে চায়।’ দীর্ঘ চার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা সীমান্ত উত্তেজনার পর ভারত ও চীনের সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে। সম্প্রতি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় টহলদারি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা এবং ব্রিকস সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদি-শি জিনপিংয়ের বৈঠক আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে এই উন্নয়নকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে নতুন করে বাদানুবাদ শুরু হয়েছে।
ভারতের জন্য এই পরিস্থিতি একটি সূক্ষ্ম কূটনৈতিক পরীক্ষা। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের অন্যতম প্রধান প্রতিরক্ষা সহযোগী এবং ‘কোয়াড’-এর অংশীদার। অন্যদিকে, চীন প্রতিবেশী দেশ এবং অন্যতম বড় বাণিজ্য সহযোগী। বিশ্লেষকদের মতে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের একাধিপত্য রুখতে ভারতকে একটি প্রধান স্তম্ভ মনে করে ওয়াশিংটন। যদি ভারত ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা পুরোপুরি প্রশমিত হয়, তবে ভারতের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে যে নিঃশর্ত কৌশলগত সমর্থন প্রয়োজন ছিল, তাতে কিছুটা শিথিলতা আসতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্র আশঙ্কা করছে।
ভারত ও চীন উভয়েই আপাতত সংঘাতের চেয়ে স্থিতিশীলতার দিকেই বেশি ঝুঁকছে। তবে এই শান্তি কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে, তা নির্ভর করবে সীমান্তে দুই দেশের সেনা অবস্থানের প্রকৃত চিত্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতার ওপর।