নায়ক মান্না চলে যাওয়ার ১৭ বছর

তিনি ছিলেন সিনেমা অন্তপ্রাণ মানুষ। সবসময় চিন্তা করতেন কীভাবে সিনেমাকে দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়। তিনিই আইয়ূব বাচ্চুকে সিনেমার গানে নিয়ে এসেছিলেন ‌‘আম্মাজান’ সিনেমায়। জেমসকে দিয়ে সিনেমার জন্য গান করিয়ে দর্শকের নজর কাড়তে পানির নিচে করেছিলেন শুটিং।

এভাবেই প্রতিনিয়ত চমক আর নতুনত্ব দিয়ে সিনেমাকে তিনি দর্শকপ্রিয় করে তুলতেন। তার ছিল সাবলীল অভিনয়ের যোগ্যতা, ভরাট কণ্ঠস্বর। সিনেমার পর্দায় নায়ক হয়ে তিনি নিপীড়িত, বঞ্চিত ও সাধারণ মানুষের পক্ষে লড়েছেন। প্রতিবাদের আওয়াজ তুলেছেন। তাই সাধারণ মানুষের কাছে তার জনপ্রিয়তা ছিলো শীর্ষে।

বলছি প্রয়াত নায়ক মান্নার কথা। অমর নায়ক সালমান শাহের মৃত্যুর পর মান্নার অকাল প্রয়াণকেও এ দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির জন্য বিরাট ক্ষতি বলে মানা হয়। অনেকে বলে থাকেন এই দুই নায়ক অকালে চলে না গেলে ঢালিউডের ইতিহাসটা হয়তো অন্যরকম হতে পারতো।

আজ নায়ক মান্নার ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৭ বছর আগে ২০০৮ সালের আজকের দিনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন তিনি। সারাদেশ আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল শোকে। মৃত্যুর পর তাকে সমাধিস্থ করা হয় নিজ গ্রাম টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায়। সেখানেই মায়ের কবরের পাশে ১৭ বছর ধরে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন মান্না।

১৯৬৪ সালের ১৪ এপ্রিল টাঙ্গাইলের কালিহাতীর এলেঙ্গায় জন্মগ্রহণ করেন মান্না। তার পারিবারিক নাম এসএম আসলাম তালুকদার মান্না। নিজ এলাকায় স্থানীয় একটি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করে ঢাকা কলেজে স্নাতকে ভর্তি হন মান্না। ১৯৮৪ সালে তিনি এফডিসির নতুন মুখের সন্ধান কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রের জগতে আসেন।

নায়করাজ রাজ্জাক মান্নাকে প্রথম চলচ্চিত্রে সুযোগ করে দেন। ‘তওবা’র মাধ্যমে সিনেমার জন্য প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। তবে তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘পাগলী’। ১৯৯১ সালে মোস্তফা আনোয়ার পরিচালিত ‌‘কাসেম মালার প্রেম’ চলচ্চিত্রে প্রথম একক নায়ক হিসেবে চম্পার বিপরীতে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়।

তবে নায়ক মান্নার রাজত্বের শুরু আরও কিছু পরে। কাজী হায়াতের ‘তেজি’ সিনেমা সুপারহিট হওয়ার পর ঢালিউডে মূলত মান্না যুগের শুরু। এরপর একের পর এক ব্যবসা সফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করে নিজেকে সেরা নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন মান্না।
অভিনয় জীবনে তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন মান্না। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি হচ্ছে- তেজি, শান্ত কেন মাস্তান, সিপাহী, যন্ত্রণা, অমর, পাগলী, ত্রাস, জনতার বাশা, লাল বাদশা, আম্মাজান, আব্বাজানা, রুটি, দেশ রী, অন্ধ আইন, স্বামী-স্ত্রীর যুদ্ধ, অবুঝ শিশু, মায়ের মর্যাদা, মা-বাবার স্বপ্ন, হৃদয় থেকে পাওয়া ইত্যাদি।

দেশের চলচ্চিত্র যখন অশ্লীলতার সংকটে পড়েছিল, তখন সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণের অঙ্গীকার নিয়ে মান্না গঠন করেন ‘কৃতাঞ্জলী চলচ্চিত্র’ নামে একটি প্রযোজনা সংস্থা। তার প্রযোজনায় তৈরি হয় ‘লুটতরাজ’, ‘স্বামী-স্ত্রীর যুদ্ধ’, ‘দুই বধূ এক স্বামী’, ‘মনের সাথে যুদ্ধ’সহ অনেক ব্যবসাসফল ও প্রশংসিত সিনেমা।
‘বীর সৈনিক’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন মান্না।
বিমানবালা শেলি মান্নার সঙ্গে সুখী দাম্পত্য জীবন ছিলো মান্নার। তাদের একমাত্র পুত্রের নাম সিয়াম ইলতেমাশ। যুক্তরাষ্ট্রে সিনেমা নির্মাণের ওপর পড়াশোনা করছেন তিনি।