দু’মাসে শতাধিক ডেঙ্গু রোগি হাসপাতালে,জেলায় নেই আইসিইউ সাপোর্ট


চাঁপাইনবাবগঞ্জেও বাড়ছে ডেঙ্গু। বছরের প্রথম ৭ মাস  মোটামুটি ভাল কাটলেও গত মধ্য আগষ্ট থেকে জেলায়  সরকারিভাবে বেশি শনাক্ত হতে শুরু করে রোগি। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, জেলায় এডিসের লার্ভা বা মশা সংক্রান্ত কিছু তথ্য চলতি অক্টোবর মাগেন প্রথম পাওয়া গেছে। তবে হাসপাতালে  ভর্তি বেশিরভাগ রোগির তথ্য বিশ্লেষন করে জানা গেছে, বেশিরভাগেরই মূলত: ঢাকা বা দেশের অনান্য  অঞ্চল ভ্রমণের  ইতিহাস রয়েছে। এদিকে জেলার প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের জন্য জেলা হাসপাতাল বা জেলার কোন হাসপাতালেই এখনও নেই আইসিইউ সাপোর্ট। নেই সেল সেপারেটর মেশিন। রোগিকে প্রয়োজনে দেয়া যায় না প্লাটিলেট। ফলে হেমোরেজিক বা শক সিনড্রোমে আক্রান্ত্র কোন ডেঙ্গু রোগিকে জেলায় চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়।

স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, শুক্রবার(১৮অক্টোবর) সকাল ৮টা  পর্যন্ত চলতি বছর জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ১০৯ জন ডেঙ্গু রোগি শনাক্ত হয়েছেন। এছাড়াও বছররব্যাপী বর্হি:বিভাগে শনাক্ত হয়ে বাড়িতে বা অন্যত্র চিকিৎসা নিয়েছেন অনেকে। শুক্রবার পর্যন্ত সরকারিভাবে শনাক্তদের মধ্যে শুধু জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৭ জন। শুক্রবার পর্যন্ত জেলা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ৭ রোগি। গত মঙ্গলবার(১৫ অক্টোবর) জেলায় মৌসুমের সর্বাধিক ১৭ জন রোগি জেলার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।  তবে জেলায় এখনও কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যায় নি।
সিভিল সার্জন ডা.মাহমুদুর রশিদ বলেন, জেলা হাসপাতাল ছাড়াও জেলার  ৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু শনাক্ত ও  চিকিৎসার ব্যবস্থাা রয়েছে।  জেলা হাসপাতালে ১৫ শয্যার ডেঙ্গু কর্ণার চালু রয়েছে। অনান্য সরকারি হাসপাতালে নির্ধারিত শয্যায়  মশারি টাঙ্গিয়ে রোগি রাখা হয়। পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে ডেঙ্গু চিকিৎসার মূল হাতিয়ার আইভি স্যালাইনের (ফ্লুইড)। প্রতিটি ৫০ টাকা  করে ফিস দিয়ে সরকারি সকল হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্তের  ২ প্রকার টেষ্টের ব্যবস্থা রয়েছে।

তবে সকলের দু’ধরণের টেষ্টের দরকার হয় না। প্রতিটি হাসপাতালে টেস্ট কীটের  পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। প্লাটিলেট কাউন্ট রক্তের রুটিন সিবিসি টেষ্টেই করা যায়। মূলত: মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা  ডেঙ্গু রোগির চিকিৎসা দেন। জেলা হাসপাতাল ও জেলার ৩টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ধরণের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। শুধু ভোলাহাট উপজেলায় নেই। জেলার বেসরকারি কয়েকটি হাসপাতালেও  ডেঙ্গু শনাক্ত ও চিকিৎসার সুযোগ থাকলেও তাদের রোগি সংখ্যার পরিসংখ্যান পাওয়া যায় নি। তবে তারা যেন রোগি সংখ্যার হিসাব রাখে সেজন্য তাদের সমিতিকে বলা হয়েছে। এর বাইরে রয়েছে প্রাইভেট  চেম্বারে ডাক্তারের নিকট শনাক্ত হয়ে চিকিৎসা নেয়া রোগিরা। এদের সংখ্যা নির্ণয় অসম্ভব প্রায়। অনকে সরাসরি রাজশাহী বা ঢাকা চলে যায়।
ডা. রশিদ আরও বলেন, জেলায় এখনও ডেঙ্গু  আশংকাজনক পর্যায়ে পৌঁছেনি। তবে  অক্টোবরে ‘পিক সিজন’ যাচ্ছে। গত ১৫ দিনে রোগি দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। যারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন তাদেও অধিকাংশই ক্লাসিকাল ধরণের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। হেমোরেজিক বা শক সিনড্রোমে আক্রান্ত রোগি এখনও তেমন পাওয়া যায় নি। জেলা থেকে কিছু রোগিকে এখন পর্যন্ত বাইরে রেফার্ড করতে হয়েছে মূলত: আইসিইউ সাপোর্ট না থাকার কারণে।
জেলা হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা.মাসুদ পারভেজ বলেন,হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসিইউ  ও ২০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ডের ভৌত অবকাঠামো (হাই ডিপেনডেন্সি  ইউনিট-এইচডিইউ) নির্মাণ একেবারে শেষ পর্যায়ে। এটি চালু হলে জেলায় চিকিৎসা ব্যবস্থার একধাপ উন্নতি হবে। তবে  এটি জনবল ও অনান্য লজিষ্টিক সাপোর্টসহ কবে চালু হবে তা  নিশ্চিত নয়। তবে এটি দ্রæত চালু হওয়া দরকার বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সিভিল সার্জন বর্ষা ও বর্ষা পরবর্তী  বছরের এই সময়টা নিয়ে সতর্ক থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপর জোর দিয়েছেন।  বিশেষ করে জেলা সদরের দিকে নজর দেবার কথা বলেছেন। তথ্য অফিস, ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে দিয়ে  মাইকিং থেকে শুরু করে লিফলেট বিতরণ, মসজিদে পর্যন্ত যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে সে ব্যাপারেও বলেছেন। ভবিষ্যতে আরও প্রতিরোধ প্রচারণার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।