চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিশ্ব এইডস দিবস পালিত

‘সব বাধা দূর করি, এইডস মুক্ত সমাজ গড়ি’— এই প্রতিপাদ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিশ্ব এইডস দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জন অফিস।
সোমবার সকালে সিভিল সার্জন অফিসের সামনে থেকে র্যালিটি বের হয়ে কোর্ট চত্বর ঘুরে সিভিল সার্জন অফিসের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভায় মিলিত হয়।
আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য দেন— সিভিল সার্জন ডা. এ.কে.এম শাহাব উদ্দীন। এসময় তিনি তার বক্তব্যে বলেন, সাধারণত একটা মানুষের শরীরে সহজে এইডস ধরা পড়ে না। যখন তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে না, সর্দি জ্বর, কাশি, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন অসুখের মাধ্যমে এইডস ধরা পড়ে। অনেকদিন পরে একটা পর্যায়ে গিয়ে কোনো রকম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে না। তখন বিভিন্ন ধরনের অসুখ হয়। এই অবস্থাটাকে বলা হচ্ছে এইডস। তিনি আরো বলেন, এই ভাইরাস হাঁচি-কাশি, বেড শেয়ার, হাত মেলানো এগুলোর মাধ্যমে ছড়ায় না। এই ভাইরাস ছড়ায় অনিরাপদ যৌনতা, রক্তের মাধ্যমে। এছাড়া একটা মায়ের থেকে বাচ্চার সংক্রমণ হতে পারে।
সিভিল সার্জন বলেন, ২০০৭ সালের দিকে বাংলাদেশে মাত্র ৭-৮ হাজার এইডস রোগী ছিল। আস্তে আস্তে এটা অনেক বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমানে এইডস রোগী প্রায় ১৬ হাজার। গতবছর ১ হাজার ৪শ’র উপর রোগী পাওয়া গেছে। ২০২৪ সালে মারা গেছে প্রায় ১৯৫ জন। এই বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত প্রায় ৮শ’র অধিক ডায়াগনোসিস হয়েছে। সিরাজগঞ্জে ২৫৫ জনের ডায়াগনোসিস হয়েছে, এর মধ্যে ৭০ শতাংশের উপরে আক্রান্ত হয়েছে; যারা ড্রাগ ইউজার। রাজশাহী জেলাতে এই বছর ২৮ জনের ডায়াগনোসিস হয়েছে। তিনি বলেন, এই রোগটি নির্দিষ্ট একটি কমিউনিটির মাধ্যমে ছড়াচ্ছ। এগুলো মূলত যারা ড্রাগ ইউজার, ট্রান্সজেন্ডার, সমকামী এদের মধ্যেমে এইডস ছড়াচ্ছে। সচেতন না হলে এই রোগ আগামীতে মহামারী আকার ধারণ করবে। তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে যারা আছে তারা যদি সঠিক চিকিৎসা নেয় তাহলে অনেকদিন পর্যন্ত সমাজে সুস্থভাবে থাকতে পারবে।
সিভিল সার্জন বলেন, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এটাও ভয়াবহ। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে যারা আইসিইউতে ভর্তি আছে তাদের কোনো ওষুধেই কাজ করছে না। আমরা যে কোনো ফার্মেসি থেকে নরমাল সর্দি কাশি হলেই অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খেয়ে নিচ্ছি। যেটার কমপ্লিট ডোজ পূরণ হচ্ছে না, যার ফলে পরবর্তীতে তা আর কাজ করছে না। এটা একটা বৈশ্বিক সমস্যা। তিনি আরো বলেন, আমরা রেজিস্ট্রার্ড ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করব না এবং কোনো ফার্মেসি প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রয় করতে পারবে না। ডাক্তার যেই পরিমাণ বা যেভাবে সেবন করতে বলবেন, সেভাবেই আমরা সেটা ব্যবহার করব।
সিভিল সার্জন আরো বলেন, আমরা টাইফয়েড ক্যাম্পেইন সম্পন্ন করলাম। আমরা ৯৯ শতাংশ ভ্যাকসিন দিতে সক্ষম হয়েছি।
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন— সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার-কো-অর্ডিনেটর ডা. মো. ইনজামাম উল হক, প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটির কনিষ্ঠ সহকারী পরিচালক ফারুক আহমেদ, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের এরিয়া প্রোগ্রাম ম্যানেজার জেমস বিশ্বাস, ব্র্যাকের জেলা ব্যবস্থাপক নাজিম উদ্দিন, চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক শহিদুল ইসলাম, জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামের সদস্য আব্দুর রহিম, জেলা স্বাস্থ্য অধিকার যুব ফোরামের সমন্বয়কারী রাফিউল ইসলামসহ অন্যরা।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিভিল সার্জন অফিসের সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা শামশুন নাহার।
এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন— জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামের সহসভাপতি বাবর আলী, নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনস্ট্রাক্টর সাহিদা খাতুন ও সায়েমা খাতুন, সূর্যের হাসি ক্লিনিকের সিনিয়র ক্লিনিক ম্যানেজার শামীমা খাতুন।
র্যালি ও আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করে প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি, ব্র্যাক, আপস, ফুড ফর দ্য হ্যাংরি, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ, সূর্যের হাসি, সিসিডিবি, সমতা নারী উন্নয়ন সংস্থা।
উল্লেখ্য, বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সচেতনতা ক্যাম্পেইন-২০২৫ উপলক্ষে র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করে সিভিল সার্জন অফিস। এতে সহযোগিতা করে জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরাম, প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি ও বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ।