খাদ্যদূষণ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার উদ্বেগ, সংকট মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগের আহ্বান

দেশের খাদ্যপণ্যে দূষণ ও ক্ষতিকর রাসায়নিকের উপস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, খাদ্যে দূষণের বিষয়টি সবার জন্য হুমকিস্বরূপ এবং এ সংকট মোকাবিলায় এখনই সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
রোববার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খাদ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক, জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি ও ভেজাল প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে অনুষ্ঠিত সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের সন্তান, বাবা-মা, পরিবার—সবার স্বার্থেই সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। জরুরি উদ্যোগগুলো তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।”
সভায় কৃষি, খাদ্য, স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিএসটিআই, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
খাদ্যবাহিত রোগে উদ্বেগজনক চিত্র
সভায় বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) জানায়—
-
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা অনুযায়ী প্রতি বছর ১০ জনে ১ জন শিশু খাদ্যবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়।
-
বিশ্বে বছরে আক্রান্ত হয় ৬০ কোটি মানুষ, বাংলাদেশে আক্রান্ত হয় প্রায় ৩ কোটি শিশু।
-
খাবারে ভারী ধাতু, কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ, তেজস্ক্রিয়তা ও জৈব দূষণ—এই চার ধরনের দূষক পাওয়া যায়।
-
পরীক্ষা করা ১৮০টি নমুনার মধ্যে ২২টিতে সীসা শনাক্ত হয়েছে।
-
ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৩ কোটি ৫০ লাখ শিশু সীসার সংক্রমণে ভুগছে।
বিএফএসএ চেয়ারম্যান জাকারিয়া জানান, সীসা মানবদেহে প্রবেশ করে মস্তিষ্ক, কিডনি, যকৃৎ ও হাড়ে জমা হয় এবং শিশুদের মানসিক বিকাশ ব্যাহত করে। তিনি বলেন, ৫ শতাংশ গর্ভবতী নারীর শরীরেও সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
পোল্ট্রি ও কৃষি খাতে অনিয়ম
খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান—
-
অনেক হাঁস–মুরগির খামারে অনিয়ন্ত্রিতভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হয়, যা ৭–২৮ দিন শরীরে থাকে।
-
নির্ধারিত সময়ের আগে এসব মুরগি বিক্রি হলে মানুষের শরীরে অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক প্রবেশের ঝুঁকি থাকে।
-
বড় প্রতিষ্ঠানগুলো কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হলেও কিছু ছোট খামার এখনো গোপনে নিয়ম ভঙ্গ করছে।
জরুরি নির্দেশনা
প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে এক সপ্তাহের মধ্যে খাদ্যদূষণ মোকাবিলায় করণীয় প্রস্তাব লিখিত আকারে জমা দিতে নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, “খাদ্য নিরাপত্তা একটি জাতীয় ইস্যু। কোন কাজটি দ্রুত শুরু করা জরুরি, তা নির্ধারণ করে অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা হবে।”
গবেষণা ও সচেতনতার তাগিদ
সভায় জানানো হয়, দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব ব্যবহার করে দ্রুত জাতীয় পর্যায়ে খাদ্যদূষণ নিয়ে সমন্বিত গবেষণা শুরু করা সম্ভব।
খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, “খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষিত হচ্ছে। গণমাধ্যম ও পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়ানো জরুরি।”