ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই আবুল হায়াত যাকে কৃতিত্ব দিলেন

আবুল হায়াতের অভিনয় দেখে বড় হয়েছে কয়েকটি প্রজন্ম। এখনও অভিনয় করে যাচ্ছেন তিনি। আশি পার হওয়া মানুষটি সর্বদা প্রাণবন্ত থাকেন আজও। তিন বছর ক্যানসারের সঙ্গে লাড়াই করা মানুষটি আজও অষ্টপ্রহর ডুবে থাকেন কাজে। অসীম প্রাণশক্তিতে ভরপুর এ মানুষটির আজ (৭ সেপ্টেম্বর) জন্মদিন। কে বলবে তিনি ৮১ বছরে পা রেখেছেন! ২০২১ সালে ক্যানসার ধরা পড়ে আবুল হায়াতের। চিকিৎসক, পরিবারের সহায়তা আর নিজের অসীম মনোবলের কারণে তিনি ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছেন। তিনি এখনো মাসের অর্ধেক সময় নাটক নির্মাণ ও অভিনয়ে ব্যস্ত থাকেন। তিন বছর ধরে ক্যানাসরের সঙ্গে লড়াই করলেও সম্প্রতি বিষয়টি প্রাকাশ্যে এসেছে। গত বছর আত্মজীবনী ‘রবি পথ’ প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘ডাক্তার বললেন, আমার ক্যানসার হয়েছে। আমি জানতে পারলাম, আমি ক্যানসারের রোগী। হাসপাতাল থেকে বাসা পর্যন্ত আর কথা বলতে পারিনি। জীবনের কঠিন সময়ে মানসিক শক্তি ধরে রাখার সব কৃতিত্ব আবুল হায়াত দিয়েছেন স্ত্রী শিরিন হায়াতকে। স্ত্রী সারাক্ষণ তাকে বলতেন, ‘আরে কী হয়েছে। এটা কোনো ব্যাপার নাকি? আমরা আছি, চিকিৎসা করাবো। যেখানে যা লাগে, আমরা করবো। তুমি ভালো হয়ে যাবে। স্ত্রীর অবদানের বর্ণনা দিতে গিয়ে আবুল হায়াত আরও বলেন, ‘রাতে খাবার খেয়েছি কি খাইনি, জানি না। বিছানায় শুয়ে পড়েছি। অন্ধকারে একা কাঁদছি। হঠাৎ টের পেলাম, উনি (তার স্ত্রী শিরিন হায়াত) পাশে এসে শুয়েছেন। আমি তখনো নিঃশব্দে কাঁদছি। হঠাৎ ওনার একটা হাত আমার গায়ে এসে পড়ল। আমি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম। তখন তিনি বলতেন, “আল্লাহ তায়ালা এই রোগটা তোমাকে কেন দিল, আমাকে দেখতে পেল না?” বলে হাউমাউ করে কেঁদে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।’ ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পর আবুল হায়াতের মেয়েরাও (বিপাশা ও নাতাশা) শক্তি জুগিয়েছেন। স্ত্রীকে সহযোদ্ধা উল্লেখ করে আবুল হায়াত বলেন, ‘সারাটা জীবন আমার সঙ্গে, আমার দুঃখ, কষ্ট, বেদনা, আনন্দ-সবকিছুতে সে ছিল। আজ আমি এই যে তিনটা বছর ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করছি, শুধু তার কারণে সম্ভব হয়েছে। সে আমার সবচেয়ে বড় সহযোদ্ধা।

ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই, যাকে কৃতিত্ব দিলেন আবুল হায়াতগত বছর ২ নভেম্বর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আবুল হায়াতের আত্মজীবনী ‘রবি পথ’র প্রকাশনা উৎসবে অভিনেতা ও তার স্ত্রী শিরিন হায়াত। আবুল হায়াত ১৯৪৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ভারতের মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে ‘ইডিপাস’ নাটকে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে প্রথমবারের মতো টিভিপর্দায় তার অভিষেক ঘটে। তারপর থেকে টিভি নাটক, সিনেমা আর বিজ্ঞাপনে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। জনপ্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদ রচিত অনেক নাটকে আবুল হায়াত অভিনয় করেছেন। ‘মিসির আলি’ চরিত্রে অভিনয় তার একটি বিশেষ কাজ। এর বাইরে ‘আজ রবিবার’, ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’ ধারাবাহিকগুলোতে আবুল হায়াত ছিলেন অনবদ্য। তার বহু খণ্ড নাটকও মুগ্ধ করেছে দর্শকদের।পরিচালনাতেও সফল আবুল হায়াত। বেশ কিছু খণ্ডনাটক নির্মাণ করে তিনি প্রশংসা পেয়েছেন। তার পরিচালনায় বিটিভিতে ‘জোছনার ফুল’ নাটকটি দর্শকপ্রিয় হয়েছিল। মঞ্চ অভিনেতা হিসেবেও আবুল হায়াত পেয়েছিলেন প্রশংসা। তার বেশ কিছু নাটক নতুনদের সৃষ্টিশীল অভিনয়ে উৎসাহ দেয়। আসাদুজ্জামান নূরের চিত্রনাট্য ও নির্দেশনায় বিদেশি নাটক অবলম্বনে ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’ নাটকটি অন্যতম। ১৯৭৮ সালে এতে অভিনয় করে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছিলেন আবুল হায়াত। আবুল হায়াতের লেখা প্রথম উপন্যাস বের হয় ১৯৯১ সালে, নাম ‘আপ্লুত মরু’। এরই ধারাবাহিকতায় একে একে বের হয় ‘নির্ঝর সন্নিকট’, ‘এসো নীপ বনে’ (তিন খণ্ড), ‘অচেনা তারা’, ‘জীবন খাতার ফুট নোট’, (দুই খণ্ড) ও ‘জিম্মি’। আবুল হায়াত ১৯৭০ সালে মেজ বোনের ননদ মাহফুজা খাতুন শিরিনকে বিয়ে করেন। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জন্ম নেয় তাদের প্রথম সন্তান বিপাশা হায়াত। ছয় বছর পর জন্ম নেয় নাতাশা হায়াত। তারা দুজনই শোবিজের জনপ্রিয় মুখ।