ইজের হ্যাটট্রিকে টটেনহ্যামকে উড়িয়ে দিল আর্সেনাল

এবেরেচি ইজের দুর্দান্ত হ্যাটট্রিক আরো একবার আর্সেনালকে উল্লাসের উপলক্ষ্য এনে দিল। শনিবার রাতে টটেনহ্যামকে ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত করে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থানও আরও পাকাপোক্ত করল। দ্বিতীয় স্থানে থাকা চেলসির চেয়ে এগিয়ে থাকল ৬ পয়েন্টে। আগের দিন শিরোপা প্রতিদ্বন্দ্বী লিভারপুল ও ম্যানচেস্টার সিটির পরাজয় যেন মিকেল আর্তেতার দলের সামনে দরজা খুলে দিয়েছিল। আর আঘাত-প্রত্যাঘাতে জর্জরিত স্কোয়াড নিয়েও আর্সেনাল দেখিয়ে দিল এদিন তারা ছিল টটেনহ্যামের তুলনায় কয়েক ধাপ এগিয়ে। ব্যথা আরও গভীর এ কারণে যে, যিনি আর্সেনালের জয়ের মূল কারিগর, সেই ইজে সহজেই টটেনহ্যামের জার্সি গায়ে চাপাতে পারতেন!
গত আগস্টে ক্রিস্টাল প্যালেস থেকে স্পার্সের সঙ্গে চুক্তির খুব কাছাকাছি ছিলেন ইজে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে তাকে দলে তুলে নেয় আর্সেনাল। নতুন ক্লাবে ধীরগতির শুরু হলেও ডার্বির মঞ্চে নিজেকে নতুন করে পরিচয় দিলেন ইংলিশ মিডফিল্ডার। ৪১ মিনিটে প্রথম গোল, তার আগেই লেয়ান্দ্রো ট্রোসারের দারুণ ফিনিশ, আর দ্বিতীয়ার্ধে পরপর দুটি গোল করে ম্যাচ বল তুলে নিলেন তিনি। দুই দলের ইনজুরি তালিকা নিয়েই পুরো সপ্তাহ জুড়ে আলোচনা ছিল। আর্সেনাল পায়নি ৫৫ মিলিয়ন পাউন্ডের ফরোয়ার্ড ভিক্টর গিয়কেরেসকে। তবুও স্পার্স কোচ থমাস ফ্রাঙ্ক তিন ডিফেন্ডারের ফর্মেশনই বেছে নেন। শুরুর দিকেই ইজের চমৎকার পাস থেকে ডিক্লান রাইস সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তার শট ব্লক করে দেন গুগলিয়েলমো ভিকারিও। আর্সেনাল বল দখলে এগিয়ে থাকলেও প্রথম ৩০ মিনিটে খেলার গতি ছিল ভারসাম্যপূর্ণ। বুকায়ো সাকা দুটো ফ্রি কিক থেকে চেষ্টা করেছিলেন। একটি ওপর দিয়ে যায়, আরেকটি ঠেকিয়ে দেন ভিকারিও। কিন্তু স্পার্সের রক্ষণভাগের স্থিরতা টিকল মাত্র এক মুহূর্তের জন্য। ৩৬ মিনিটে মিকেল মেরিনোর নিখুঁত পাসে দৌড়ে ঢুকে পড়েন ট্রোসার্ড। মিকি ফান দে ভেনের পায়ের ছোঁয়া বলকে সামান্য দিক বদল করালেও ভিকারিওকে পরাস্ত করলেন বেলজিয়াম তারকা। ডেসটিনি উদোগির ভুলে অফসাইড ফাঁদও ভেঙে যায়। চার মিনিট পর আসে দ্বিতীয় ধাক্কা। জুরিয়েন টিম্বারের ক্রস হেড করে ফিরিয়ে দেন কেভিন ডানসো। কিন্তু সেই বল থেকেই রাইস এক টাচে পাস বাড়িয়ে দেন একেবারে ফাঁকা থাকা ইজেকে। দু’জন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে নিচু শটে জাল খুঁজে নেন তিনি। ভিএআর দ্রুত অফসাইড পরীক্ষা করলেও কোনো সমস্যা না থাকায় গোলেই মেলে অনুমোদন। এমিরেটস তখন কানফাটা উদযাপনে গর্জে ওঠে। বিরতির আগে আর গোল হজম না করলেও দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হতেই আবার দিশাহারা স্পার্স। শুরু হওয়ার মাত্র ৩৫ সেকেন্ড পরই ইজে আবার গোল করে ৩-০ করেন। টিম্বারের পাস ধরে ঘুরে দাঁড়িয়ে ১৬ গজ দূর থেকে দারুণ নিখুঁত ফিনিশ। এই গোলেই তার আগের ১৭ ম্যাচের গোলসংখ্যা ছুঁয়ে ফেলেন! টটেনহ্যাম পুরোপুরি হতচকিত। তবে ঠিক ৫৫ মিনিটে এক ঝলকে ম্যাচে ফেরেন তারা। মাঝমাঠে পালহিনার ট্যাকল থেকে বল পেয়ে রিচার্লিসন দেখেন গোলরক্ষক ডেভিড রায়া অনেকটা এগিয়ে এসেছেন। ৪০ গজ দূর থেকে লব করে অসাধারণ এক গোল করেন তিনি। এরপর সার, র্যান্ডাল কলো মুয়ানিকে নামান কোচ ফ্রাঙ্ক। ভিকারিও সাকার একটি বাঁকানো শটও ঠেকান। কিন্তু এরপরই নিশ্চিত করে নেয় আর্সেনাল জয়ের পথ। ট্রোসার্ড ডান দিক থেকে দারুণ পাস বাড়ান ইজের জন্য। উদোগিকে পাশ কাটিয়ে ৭৬ মিনিটে বাঁ পায়ের নিখুঁত শটে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন তিনি, উত্তর লন্ডন ডার্বির ইতিহাসে মাত্র চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে।