অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে আটকা ১৫৭ তিমি, মৃত ৬৭, ঝুঁকিতে আরও ৯০

অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়া রাজ্যের একটি সমুদ্র সৈকতে ১৫৭টি তিমি আটকা পড়েছে। এর মধ্যে ৬৭টি ইতোমধ্যেই মারা গেছে, বাকি ৯০টি তিমিও মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে। আটকে পড়া তিমিগুলোকে উদ্ধারে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। আজ আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। তিমিগুলো ১৮ ফেব্রুয়ারি তাসমানিয়ার উত্তর-পশ্চিম উপকূলে আর্থার রিভারের কাছে সৈকতে আটকে পড়ে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অঞ্চলটি রাজ্যের রাজধানী হোবার্ট থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে। আটকে পড়া তিমিগুলো মাঝারি আকারের ‘ফলস কিলার হোয়েল’, যা বৃহত্তম ডলফিন প্রজাতির একটি অংশ। প্রাপ্তবয়স্ক ফলস কিলার হোয়েল প্রায় ৬ মিটার লম্বা ও ১ দশমিক ৫ টন ওজনের হতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ার ডিপার্টমেন্ট অব ন্যাচারাল রিসোর্স অ্যান্ড এনভাইরনমেন্ট জানিয়েছে, উদ্ধারকাজ অব্যাহত রয়েছে এবং সামুদ্রিক প্রাণী বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত। ব্রেন্ডন ক্লার্ক, তাসমানিয়া পার্কস অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিসের কর্মকর্তা, জানিয়েছেন, ‘তিমিগুলো সম্ভবত ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা ধরে আটকা পড়ে আছে। এর মধ্যে মাত্র ৯০টি জীবিত রয়েছে।’ তিমিগুলোকে সমুদ্রে ফেরত পাঠানো সম্ভব কি না, তা বিশেষজ্ঞ ও পশু চিকিৎসকরা পরীক্ষা করছেন। তবে ব্রেন্ডন ক্লার্ক বলেছেন, ‘এটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ, এবং কর্মকর্তাদের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ।’

সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে জনসাধারণের প্রবেশ সীমিত করেছে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সেখানে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা জোসেলিন ফ্লিন্ট অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনকে (এবিসি) বলেন, ‘বুধবার সকালে আমার ছেলে মাছ ধরার সময় তিমিগুলোকে দেখতে পায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে, অসংখ্য তিমি আটকা পড়েছে। তাদের মধ্যে ছোট বাচ্চা তিমিও রয়েছে… তারা আমাদের দিকে তাকাচ্ছিল, যেন সাহায্য চাইছে।’ অস্ট্রেলিয়ায় তিমি আটকে পড়ার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে তাসমানিয়ার উপকূলে। বিশেষ করে রাজ্যের পশ্চিম উপকূল এ ধরনের ঘটনার জন্য কুখ্যাত। ২০২০ সালে, তাসমানিয়ার ম্যাককোয়ারি বন্দরের কাছে ৪৭০টি পাইলট তিমি আটকা পড়ে। উদ্ধারকর্মীদের চেষ্টা সত্ত্বেও ৩৫০টির বেশি তিমি মারা যায়। ২০২২ সালেও, একই বন্দরে ২০০টি তিমি আটকা পড়ে।

তিমি অত্যন্ত সামাজিক স্তন্যপায়ী প্রাণী, যারা দলবদ্ধভাবে চলাফেরা করে। সৈকতে আটকা পড়ার একাধিক কারণ থাকতে পারে— খাদ্যের সন্ধানে ভুল দিক নির্দেশনা – উপকূলে ছোট মাছ শিকারের সময় তারা দিকভ্রান্ত হয়ে তীরে উঠে আসতে পারে। গোষ্ঠীগত আচরণ – দলের একটি তিমি ভুল করলে পুরো দল অনুসরণ করতে পারে। পরিবেশগত পরিবর্তন – সমুদ্রের জোয়ার-ভাটা বা অন্য প্রাকৃতিক কারণেও তিমিরা আটকে পড়তে পারে। অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে তিমি আটকে পড়া নতুন নয়, তবে একসঙ্গে এতগুলো ফলস কিলার হোয়েল আটকা পড়ার ঘটনা গত ৫০ বছরে ঘটেনি। এখন উদ্ধারকর্মীদের প্রাণপণ প্রচেষ্টাই নির্ধারণ করবে বাকি তিমিগুলো বাঁচবে কি না।