ইউরোপে অ্যালকোহল পানে প্রতি বছর ৮ লাখ মানুষের মৃত্যু

ইউরোপে অ্যালকোহল পানে প্রতি বছর ৮ লাখ মানুষের মৃত্যু ইউরোপে অ্যালকোহল বা মদপানের কারণে প্রতি বছর প্রায় ৮ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এটি এ অঞ্চলে প্রতি ১১টি মৃত্যুর মধ্যে একটির কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর রুশ সংবাদমাধ্যম আরটির।  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বে মদ্যপানের হার সবচেয়ে বেশি ইউরোপ মহাদেশে। এই অভ্যাসটি অকাল মৃত্যু ও শারীরিক আঘাতের পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে। ২০১৯ সালের তথ্য (সবচেয়ে সাম্প্রতিক সহজলভ্য তথ্য) বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ইউরোপে অ্যালকোহলজনিত কারণে প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার মানুষ শারীরিক আঘাত পেয়ে মারা গেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণগুলো হলো- আত্মহত্যা, সড়ক দুর্ঘটনা এবং উচ্চতা থেকে পড়ে যাওয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মদ্যপানের সঙ্গে আন্তঃব্যক্তিগত সহিংসতা, যেমন- আক্রমণ এবং পারিবারিক নির্যাতনের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। পুরো ইউরোপ অঞ্চল জুড়ে সহিংসতাজনিত মৃত্যুর পেছনে মদ্যপানকে একটি অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অ্যালকোহল তরুণ প্রজন্মের জন্য বিশেষ ঝুঁকি তৈরি করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, মদ্যপান স্মৃতিশক্তি ও শেখার ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি, যেমন- অ্যালকোহল আসক্তি এবং অন্যান্য মানসিক সমস্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। কিশোর ও তরুণদের মধ্যে শারীরিক আঘাতজনিত পঙ্গুত্ব এবং অকাল মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে অ্যালকোহলকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইউরোপে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অ্যালকোহল, অবৈধ মাদক ও কারাগার-স্বাস্থ্য বিষয়ক আঞ্চলিক উপদেষ্টা কারিনা ফেরেরা বোর্হেস বলেন, “অ্যালকোহল একটি বিষাক্ত পদার্থ যা কেবল সাত ধরনের ক্যানসার এবং অন্যান্য অসংক্রামক ব্যাধির সৃষ্টি করে না, বরং এটি মানুষের বিচারবুদ্ধি ও আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, প্রতিক্রিয়ার গতি ধীর করে দেয় এবং ঝুঁকিপূর্ণ আচরণে উৎসাহ যোগায়। এই কারণেই এত বিপুল পরিমাণ প্রতিরোধযোগ্য দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর সঙ্গে মদ্যপানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।” তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে মৃত্যু সংখ্যার প্রায় অর্ধেকের জন্য অ্যালকোহলজনিত দুর্ঘটনা দায়ী, যেখানে পশ্চিম ও দক্ষিণ ইউরোপে এই হার ২০ শতাংশেরও কম।

অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের কঠোর পদক্ষেপ

অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের কঠোর পদক্ষেপ অবৈধ অভিবাসী ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের ফেরত না নেওয়ার অভিযোগ ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর (ডিআর কঙ্গো) ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাজ্য। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) গভীর রাতে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে এই কঠোর পদক্ষেপের কথা জানায়। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, অ্যাঙ্গোলা ও নামিবিয়া তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা জোরদার করতে সম্মত হয়েছে। খবর বিবিসির। গত মাসে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ ঘোষিত ব্যাপক সংস্কার নীতির অধীনে এই চুক্তিগুলোই প্রথম বড় ধরনের পরিবর্তন। এই সংস্কারের লক্ষ্য হলো, শরণার্থী মর্যাদাকে অস্থায়ী করা এবং যুক্তরাজ্যে কাগজপত্র ছাড়াই আগতদের নির্বাসন দ্রুত করা। এই বিষয়ে আফ্রিকান তিন দেশ ডিআর কঙ্গো, অ্যাঙ্গোলা বা নামিবিয়ার পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, ডিআর কঙ্গো যুক্তরাজ্যের সহযোগিতার শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের জন্য ‘ফাস্ট-ট্র্যাক’ ভিসা পরিষেবা এবং ভিআইপি ও নীতিনির্ধারকদের দেওয়া বিশেষ সুবিধাগুলো বাতিল করা হয়েছে। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ বলেন, “সহযোগিতার দ্রুত উন্নতি না হলে ডিআর কঙ্গোর নাগরিকদের জন্য সম্পূর্ণ ভিসা বন্ধ করে দেওয়ার মতো আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে যুক্তরাজ্য।” তিনি বলেন, “আমরা প্রত্যাশা করি দেশগুলো নিয়ম মেনে চলবে। যদি তাদের কোনো নাগরিকের এখানে থাকার অধিকার না থাকে, তবে তাদের অবশ্যই ফিরিয়ে নিতে হবে।” তিনি আরো বলেন, “আমি অ্যাঙ্গোলা ও নামিবিয়াকে তাদের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানাই। এখন ডিআর কঙ্গোর সঠিক কাজটি করার সময়। আপনাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিন অথবা আমাদের দেশে প্রবেশের বিশেষ অধিকার হারান।” ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন মধ্য-বামপন্থি সরকার গত মাসে যুক্তরাজ্যের আশ্রয় (অ্যাসাইলাম) ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তনের ঘোষণা দেয়। এর মধ্যে শরণার্থীদের এবং তাদের সন্তানদের সুরক্ষা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। মূলত অনিয়মিত অভিবাসীদের আগমন রোধ করার লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ, যা দেশটির কট্টর-ডানপন্থিদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৩৯ হাজারেরও বেশি মানুষ ছোট নৌকায় করে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন। এই সংখ্যা ২০২৪ সালের মোট সংখ্যার চেয়ে বেশি, তবে ২০২২ সালের রেকর্ড সংখ্যার চেয়ে কম। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে তার বক্তব্যে বলেছিলেন, ডেনমার্কের কঠোর আশ্রয় ব্যবস্থার আদলে নতুন সংস্কারগুলো শরণার্থী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের ফ্রান্স থেকে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করতে নিরুৎসাহিত করবে। তিনি বর্তমান ব্যবস্থাকে ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে’ উল্লেখ করে বলেন, “এটি একটি অস্বস্তিকর সত্য যা সরকারকে মোকাবিলা করতে হবে।” স্বরাষ্ট্র দপ্তরের নতুন সংস্কার নীতির আওতায় শরণার্থী মর্যাদা সাময়িক হবে এবং প্রতি ৩০ মাস পর এটি পর্যালোচনা করা হবে। এছাড়া স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদনের জন্য এখন ৫ বছরের পরিবর্তে ২০ বছর অপেক্ষা করতে হবে। গত বছরের জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজারেও বেশি অনুমোদনহীন অভিবাসীকে বহিষ্কার করেছে যুক্তরাজ্য, যা পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেশি। তবে, এই নীতির সমালোচনাও হচ্ছে তীব্রভাবে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের সাবেক উপদেষ্টা মার্ক ডেভিস এটিকে ‘লজ্জাজনক’ এবং ‘শরণার্থীদের সহায়তা করার জন্য ব্রিটেনের ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতি’ থেকে বিচ্যুতি বলে অভিহিত করেছেন। সাবেক লেবার নেতা জেরেমি করবিন এটিকে ‘বর্বর’ বলে বর্ণনা করেছেন এবং কট্টর বর্ণবাদী শক্তিকে তুষ্ট করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। তার মতে, একই সঙ্গে এটি জাতিসংঘের মানবাধিকার কনভেনশনকে ক্ষুণ্ন করে। যুক্তরাজ্যের শরণার্থী কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী এনভার সলোমন সরকারকে নতুন নীতিটি পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এই পরিকল্পনা অভিবাসীদের সমুদ্র পাড়ি দেওয়া থেকে বিরত করতে পারবে না। তার মতে, কঠোর পরিশ্রমী শরণার্থীদের ‘নিরাপদ, স্থায়ী জীবন’ গড়ে তুলতে সক্ষম হওয়া উচিত। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন অনুসারে, যুক্তরাজ্যে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরে প্রায় ১ লাখ ১১ হাজার আশ্রয়ের আবেদন জমা পড়েছে, যা একটি রেকর্ড। বেশিরভাগ আশ্রয়প্রার্থী এবং শরণার্থী বৈধভাবে যুক্তরাজ্যে আসেন। দেশটিতে মোট অভিবাসীর সংখ্যা ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত রেকর্ড ৯ লাখ ৬ হাজারে পৌঁছানোর পর ২০২৪ সালে অংশিকভাবে কঠোর ভিসানীতি বাস্তবায়নের ফলে অভিবাসীর সংখ্যা ৪ লাখ ৩১ হাজারে নেমে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে শীতকালীন ঝড়ের আশঙ্কায় হাজারো ফ্লাইট ব্যাহত

যুক্তরাষ্ট্রে শীতকালীন ঝড়ের আশঙ্কায় হাজারো ফ্লাইট ব্যাহত যুক্তরাষ্ট্রে অবকাশ যাপনের এই মৌসুমে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শক্তিশালী শীতকালীন ঝড়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর ফলে পুরো যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে কয়েক হাজার ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্বিত হয়েছে।  শনিবার (২৭ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটঅ্যাওয়্যার-এর তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার রাত পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ১ হাজার ৬০০টি ফ্লাইট বাতিল এবং ৭ হাজার ৪০০টি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে। বৈরী আবহাওয়া সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে যেসব বিমানবন্দরে, তার মধ্যে রয়েছে নিউ ইয়র্ক এলাকার জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, নিউয়ার্ক লিবার্টি এবং লাগার্ডিয়া। এছাড়াও বোস্টন, শিকাগো এবং কানাডার টরন্টো শহরেও এর প্রভাব পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা থেকে শনিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত শীতকালীন ঝড়ের সতর্কতা জারি করেছে। নিউইয়র্ক এবং দক্ষিণ কানেকটিকাটে ৯ ইঞ্চি (২৩ সেমি) পর্যন্ত তুষারপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। জেটব্লু এয়ারওয়েজ ২২৯টি ফ্লাইট বাতিল করেছে, আর ডেল্টা এয়ারলাইন্স বাতিল করেছে ২৪১টি ফ্লাইট। রিপাবলিক এয়ারওয়েজ ও সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইন্স যথাক্রমে ১৮০টি ও ১৫১টি ফ্লাইট বাতিল করেছে। আমেরিকান এয়ারলাইন্স ও ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের প্রায় ১০০টি পূর্বনির্ধারিত ফ্লাইটও বাতিল হয়েছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সোশাল মিডিয়া পোস্টে যাত্রীদের তাদের ফ্লাইটের অবস্থা জানতে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছে। শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে মধ্যরাতের মধ্যে ভারী তুষারপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। গাড়িচালকদের বিপজ্জনক পরিস্থিতির বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে এবং সাথে জরুরি সরঞ্জাম রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নিউ ইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোকুল বলেছেন, মানুষ যেন অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়িয়ে চলে। তিনি বলেন, “যদি ভ্রমণ করতেই হয়, তবে আগে থেকে পরিকল্পনা করুন, ধীরগতিতে গাড়ি চালান এবং গন্তব্যে পৌঁছাতে হাতে পর্যাপ্ত সময় রাখুন।”

যুদ্ধবিরতিতে সম্মত থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া

যুদ্ধবিরতিতে সম্মত থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়া গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা তীব্র সীমান্ত সংঘর্ষ বন্ধ করতে আজ শনিবার যুদ্ধবিরতি নিয়ে একমত হয়েছে। খবর রয়টার্সের। স্থানীয় আজ দুপুর ১২টা থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই যুদ্ধবিরতি নিয়ে দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, “উভয় পক্ষই বর্তমানে মোতায়েন করা সেনাদের কোনো প্রকার নড়াচড়া ছাড়াই বিদ্যমান অবস্থানে বজায় রাখতে সম্মত হয়েছে।” সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “যেকোনো ধরনের অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন উত্তেজনাকে আরো বাড়িয়ে তুলবে এবং পরিস্থিতি সমাধানের দীর্ঘমেয়াদি প্রচেষ্টাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে।” থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নাথাপন নাকফানিথ এবং কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী টে সিহা এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এর মাধ্যমে টানা ২০ দিনের লড়াইয়ের অবসান ঘটল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে এটি গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ লড়াই ছিল, যেখানে যুদ্ধবিমান, রকেট ও কামানের গোলাবর্ষণ তীব্র মাত্রায় ছিল। এই সংঘাতে উভয় পক্ষে অন্তত ১০১ জন নিহত এবং পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এর আগে গত জুলাই মাসে চলা আগের দফার লড়াই থামাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছিলেন। ডিসেম্বরের শুরুতে সেই যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর এই সংঘাত পুনরায় শুরু হয়।

উত্তর কোরিয়া-রাশিয়ার সম্পর্ক যুদ্ধের ‘রক্তে’ আবদ্ধ: কিম

উত্তর কোরিয়া-রাশিয়ার সম্পর্ক যুদ্ধের ‘রক্তে’ আবদ্ধ: কিম ইউক্রেন যুদ্ধে ‘একই পরিখায় রক্ত, জীবন ও মৃত্যু ভাগ করে নেওয়ার’ মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে পাঠানো নববর্ষের এক শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি এই কথা বলেন। খবর আল-জাজিরার। এর আগে গত ১৮ ডিসেম্বর কিমকে পাঠানো নববর্ষের শুভেচ্ছা বার্তায় পুতিন রাশিয়ার পশ্চিম কুরস্ক অঞ্চলে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের ‘বীরত্বপূর্ণ’ ভূমিকার প্রশংসা করেন। পুতিন বলেন, এটি দুই দেশের মধ্যে ‘অজেয় বন্ধুত্বেরই এক সুস্পষ্ট প্রমাণ’। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ কিমের এই বার্তাটি প্রকাশ করে। সেখানে কিম ২০২৫ সালকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য একটি ‘সত্যিই তাৎপর্যপূর্ণ বছর’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি মস্কো ও পিয়ংইয়ংয়ের সম্পর্ককে একটি ‘অমূল্য অভিন্ন সম্পদ’ হিসেবে বর্ণনা করেন ‘যা কেবল বর্তমান সময়ে নয়, বরং পরবর্তী প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বজায় থাকবে’। কিম বলেন, “দুই দেশের জনগণের সম্পর্ক এবং তাদের ঐক্যকে কেউ ছিন্ন করতে পারবে না।” দক্ষিণ কোরিয়া এবং পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দাবি, ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোকে সহায়তা করতে উত্তর কোরিয়া হাজার হাজার সেনা পাঠিয়েছে। গত এপ্রিল মাসে উত্তর কোরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করে যে, তারা রাশিয়ার সামরিক অভিযানে সহায়তার জন্য সেনা পাঠিয়েছে এবং তাদের বেশ কিছু সৈন্য যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে। পুতিনকে নববর্ষের বার্তা পাঠানোর আগের দিনই কিম তার কর্মকর্তাদের ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বৃদ্ধি এবং যুদ্ধাস্ত্র তৈরির জন্য আরো কারখানা স্থাপনের নির্দেশ দেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উত্তর কোরিয়া ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার হার বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার হুমকি মোকাবিলায় নিজেদের স্বল্প, মধ্যম এবং দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের নির্ভুলতা যাচাই করতেই এই পদক্ষেপ। এছাড়া, এই ঘনঘন পরীক্ষা রাশিয়ার কাছে অস্ত্র রপ্তানির সঙ্গেও সম্পর্কিত হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। সেনা মোতায়েনের পাশাপাশি পিয়ংইয়ং মস্কোকে আর্টিলারি শেল, ক্ষেপণাস্ত্র এবং দূরপাল্লার রকেট সিস্টেম সরবরাহ করেছে বলে ধারণা করা হয়। এর বিনিময়ে রাশিয়া উত্তর কোরিয়াকে আর্থিক সহায়তা, সামরিক প্রযুক্তি এবং খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ করছে।

ইরান উপসাগরে তেলবাহী বিদেশী ট্যাংকার জব্দ করেছে ইরান

ইরান উপসাগরে তেলবাহী বিদেশী ট্যাংকার জব্দ করেছে ইরান ইরান উপসাগরের কৌশলগত এলাকায় ১৬ জন নাবিকসহ একটি বিদেশি তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করেছে ইরান। কেশম দ্বীপের কাছে ওই ট্যাংকারটি আটক করা হয়। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ট্যাংকারটিতে প্রায় ৪০ লাখ লিটার বা ২৫ হাজার চোরাই জ্বালানি বহন করা হচ্ছিল। ইরানি কর্তৃপক্ষ জব্দকৃত ট্যাংকারটির নাম কিংবা সেটি কোন দেশের মালিকানাধীন— সেই বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। তবে ফৌজদারি অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৬ জন বিদেশি নাবিককে আটক করা হয়েছে বলে জানানো হয়। দেশটির বিচার বিভাগের প্রাদেশিক প্রধান মোজতবা ঘরামানি বলেছেন, জব্দ হওয়া ট্যাংকারটি চোরাকারবারীদের জন্য একটি বড় ধরনের প্রদক্ষেপ। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, ট্যাংকারটি গত বুধবার জব্দ করা হয়। এর আগেও গত সপ্তাহে ওমান উপসাগরে ৬০ লাখ লিটার চোরাই ডিজেল বহনকারী আরেকটি বিদেশি ট্যাংকার আটক করার দাবি করেছিল তেহরান। সেক্ষেত্রেও ট্যাংকারের পরিচয় বা দেশের নাম প্রকাশ করা হয়নি।

বড়দিনে ৬০ বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ভেনেজুয়েলা সরকার

বড়দিনে ৬০ বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ভেনেজুয়েলা সরকার ভেনেজুয়েলার কর্তৃপক্ষ গতকাল অন্তত ৬০ জন বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় এনজিও ফোরো পেনালের সাম্প্রতিক হিসাব অনুসারে জানা গেছে, ভেনেজুয়েলায় কমপক্ষে ৯০২ জন রাজনৈতিক বন্দি রয়েছে। ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর পুনর্নির্বাচনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় এদের আটক করা হয়। রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির জন্য কাজ করা মানবাধিকারকর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত ‘কমিটি ফর দ্য ফ্রিডম অব পলিটিক্যাল প্রিজনার্স’ জানিয়েছে, এই মুক্তি কার্যক্রম ক্রিসমাস দিবসে শুরু হয়।

ভারত-চীন সম্পর্ক উন্নয়নে বাধা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র: বেইজিং

ভারত-চীন সম্পর্ক উন্নয়নে বাধা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র: বেইজিং চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের উন্নতিতে যুক্তরাষ্ট্র বাঁধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে বেইজিং। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এমন অভিযোগ এনেছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।  প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে যে, চীন ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের উন্নতিকে বাধাগ্রস্ত করতে যুক্তরাষ্ট্র চীনের প্রতিরক্ষা নীতিকে বিকৃত করে উপস্থাপন করছে। ভারতের সঙ্গে বিতর্কিত সীমান্ত এলাকায় উত্তজনা প্রশমনের সুযোগ নিয়ে চীন ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান সম্পর্ককে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে কি না- বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বেইজিংয়ে সংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান এই মন্তব্য করেন। লিন বলেন, “চীন ভারতের সঙ্গে তার সম্পর্ককে একটি কৌশলগত ও দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে।” তিনি আরো যোগ করেন যে, “সীমান্ত ইস্যুটি চীন ও ভারতের মধ্যকার নিজস্ব বিষয় এবং এই বিষয়ে অন্য কোনো দেশের বিচার বা মন্তব্য করার ঘোর বিরোধী আমরা।” গত মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল যে, চীন ‘সম্ভবত এই উত্তজনা হ্রাসের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থিতিশীল করতে চায় এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সম্পর্ক আরো গভীর হওয়া ঠেকাতে চায়।’ দীর্ঘ চার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা সীমান্ত উত্তেজনার পর ভারত ও চীনের সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে। সম্প্রতি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় টহলদারি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা এবং ব্রিকস সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদি-শি জিনপিংয়ের বৈঠক আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে এই উন্নয়নকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে নতুন করে বাদানুবাদ শুরু হয়েছে। ভারতের জন্য এই পরিস্থিতি একটি সূক্ষ্ম কূটনৈতিক পরীক্ষা। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের অন্যতম প্রধান প্রতিরক্ষা সহযোগী এবং ‘কোয়াড’-এর অংশীদার। অন্যদিকে, চীন প্রতিবেশী দেশ এবং অন্যতম বড় বাণিজ্য সহযোগী। বিশ্লেষকদের মতে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের একাধিপত্য রুখতে ভারতকে একটি প্রধান স্তম্ভ মনে করে ওয়াশিংটন। যদি ভারত ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা পুরোপুরি প্রশমিত হয়, তবে ভারতের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে যে নিঃশর্ত কৌশলগত সমর্থন প্রয়োজন ছিল, তাতে কিছুটা শিথিলতা আসতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্র আশঙ্কা করছে। ভারত ও চীন উভয়েই আপাতত সংঘাতের চেয়ে স্থিতিশীলতার দিকেই বেশি ঝুঁকছে। তবে এই শান্তি কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে, তা নির্ভর করবে সীমান্তে দুই দেশের সেনা অবস্থানের প্রকৃত চিত্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতার ওপর।

উত্তপ্ত ভারতের আসাম, উপজাতি অঞ্চলে সহিংসতায় নিহত ২

উত্তপ্ত ভারতের আসাম, উপজাতি অঞ্চলে সহিংসতায় নিহত ২ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে উপজাতিদের অন্যতম স্বশাসিত অঞ্চল কার্বি-আংলং এলাকায় সহিংসতায় দুইজন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনার পর সেখানে রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে এবং মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। উপজাতীয়দের এলাকা হিন্দিভাষী, বাঙালি ও নেপালিরা ‘দখল করে রেখেছে’ এবং ওই ‘বহিরাগতদের উৎখাত করতে হবে’- এমন দাবি নিয়ে অনশন আন্দোলন চলছিল গত ৬ ডিসেম্বর থেকে। গত সোমবার (২২ ডিসেম্বর) অনশনকারীদের ‘তুলে’ গুয়াহাটিতে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায় পুলিশ। তারপরেই সহিংসতা শুরু হয়। মঙ্গলবারও সহিংসতা চলেছে।  আসাম পুলিশের মহাপরিচালক হরমিত সিং বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, তিনি নিজে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। মহাপরিচালক জানান, অনশন আন্দোলন যারা করছিলেন, তাদের নেতাকে চিকিৎসার জন্য গুয়াহাটিতে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসকদের পরামর্শেই। তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হচ্ছিল। এরপরই ভুয়া খবর ছড়িয়ে দেওয়া হয় যে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপরেই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনকারীরা একটি সেতু দখল করতে চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। তখন পুলিশের ওপরে বোমা নিক্ষেপ ও তীর ছুঁড়ে হামলা চালানো হয় বলে জানান হরমিত সিং। এরপরে বহিরাগতদের দোকান ভাঙচুর, পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় ইট ছোঁড়াছুঁড়ি করতে দেখা যায় সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নানা ভিডিওতে। কী দাবিতে আন্দোলন? ভারতীয় সংবিধানের ষষ্ঠ তফশিল অনুযায়ী কার্বি আংলং অঞ্চলটির প্রশাসন চালায় স্বয়ংশাসিত একটি কাউন্সিল। সেখানকার জমি, অরণ্যের ওপরে উপজাতীয়দের অধিকারও সংরক্ষিত রয়েছে। ওয়েস্ট কার্বি আংলং জেলার কার্বি উপজাতীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বহিরাগত, অ-উপজাতীয় মানুষ তাদের সংরক্ষিত অঞ্চলে জমি দখল করে রয়েছে। কার্বি আংলং স্বায়ত্তশাসিত কাউন্সিল ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংরক্ষিত এলাকা থেকে উচ্ছেদের নোটিশ দিলেও গৌহাটি হাইকোর্টে দায়ের করা একটি পিটিশনের ফলে সেই প্রক্রিয়া নিয়ে এগোনো যায়নি। গত এক বছর ধরে স্থানীয় উপজাতীয়রা দাবি করে আসছেন, বহিরাগত এবং দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হবে। অবশেষে কার্বি উপজাতীয়রা ৬ ডিসেম্বর থেকে এ দাবি নিয়ে অনশন শুরু করেন। এ অবস্থায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন পুলিশের মহাপরিচালক। এর আগে, রাজ্যের মন্ত্রী রনোজ পেগুও ওয়েস্ট কার্বি জেলার খেরোনিতে গিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ২৬ ডিসেম্বর রাজ্য সরকার, কার্বি আংলং স্বায়ত্তশাসিত কাউন্সিল এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হবে। তিনি বলেন, আমরা কার্বি সমাজকে বলেছিলাম, সরকার যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে জমির অধিকার এবং উপজাতীয়দের অন্যান্য সমস্যাগুলো নিয়ে দেখছে। কার্বি সমাজের বৃহত্তর সমস্যাগুলো নিয়েও আলোচনা হবে। সহিংসতার শুরু যেভাবে আলোচনার কথা থাকলেও সোমবার থেকে হঠাৎই সহিংসতা শুরু হয়। বার্তা সংস্থা এএনআই এবং আসামের গণমাধ্যম জানায়, সোমবার অনশনরত আন্দোলনকারীদের কয়েকজনকে পুলিশ সরিয়ে নিয়ে গেলে প্রথমে স্থানীয় কিছু মানুষ রাস্তা অবরোধ করে। এরপরে তারা মিছিল করে গিয়ে ডংকামুকাম এলাকায় কার্বি আংলং স্বায়ত্তশাসিত কাউন্সিলের প্রধান তুলিরাম রংহাঙের পারিবারিক বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। দফায় দফায় সংঘর্ষে দুজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা মঙ্গলবার রাতে তার এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করেছেন। কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈ দাবি করছেন, নিহতদের একজন পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন। রাজ্য পুলিশের আইজি আইনশৃঙ্খলা অখিলেশ কুমার সিং জানান, আন্দোলনকারীদের ছোড়া পাথর এবং ইটের ঘায়ে অন্তত ৪৮ জন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে বাড়তি পুলিশ বাহিনী নিয়ে আসা হয়েছে। অন্যদিকে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৬৩ ধারা অনুযায়ী স্বাভাবিক চলাচলে নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়। একসঙ্গে পাঁচজনের বেশি মানুষ একত্রিত হওয়া, বিকেল ৫টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত সব ধরনের যাতায়াত বন্ধ, মশাল নিয়ে মিছিল করা ইত্যাদি নিষিদ্ধ হয়েছে কার্ব আংলং এলাকায়। সেদিন থেকে মোবাইল ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ করে রেখেছে সরকার।

নাইজেরিয়ার মসজিদে বোমা বিস্ফোরণ, নিহত ৭

নাইজেরিয়ার মসজিদে বোমা বিস্ফোরণ, নিহত ৭ নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শহর মাইদুগুরিতে একটি মসজিদের ভেতরে বোমা বিস্ফোরণে অন্তত সাতজন মুসল্লি নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এই ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও নিরাপত্তা সূত্র এএফপিকে জানিয়েছে। এই হামলার দায় এখনো কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠী স্বীকার করেনি। তবে জিহাদবিরোধী মিলিশিয়া নেতা বাবাকুরা কোলোর মতে, এটি একটি সন্দেহজনক বোমা হামলা। মাইদুগুরি নাইজেরিয়ার বর্নো রাজ্যের রাজধানী। এই রাজ্য দীর্ঘদিন ধরে জিহাদি সংগঠন বোকো হারাম এবং তাদের সহযোগী ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্সের (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। যদিও শহরটিতে গত কয়েক বছরে বড় ধরনের কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, শহরের গামবোরু বাজার এলাকার একটি মসজিদের ভেতরে এই বিস্ফোরণ ঘটে। স্থানীয় সময় বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে নাগাদ মুসল্লিরা যখন মাগরিবের নামাজের জন্য জড়ো হয়েছিলেন, তখন মসজিদের ভেতর বোমাটি বিস্ফোরিত হয়। মসজিদের অন্যতম নেতা মালাম আবুনা ইউসুফ নিহতের সংখ্যা আটজন বলে জানিয়েছেন। তবে সরকারি কর্তৃপক্ষ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করেনি। নাইজেরিয়ান পুলিশের মুখপাত্র নাহুম দাসো এএফপিকে বলেন, আমরা নিশ্চিত করছি যে সেখানে একটি বিস্ফোরণ ঘটেছে। তিনি আরও জানান, বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয়করণ দলের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করেছেন। বাবাকুরা কোলোর মতে, এই হামলায় সাতজন নিহত হয়েছেন। তিনি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, বোমাটি মসজিদের ভেতর রাখা হয়েছিল এবং নামাজ চলাকালীন মাঝামাঝি সময়ে সেটি বিস্ফোরিত হয়। তবে কিছু প্রত্যক্ষদর্শী এটিকে আত্মঘাতী বোমা হামলা বলেও বর্ণনা করেছেন। আহতদের সঠিক সংখ্যা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে প্রত্যক্ষদর্শী ইসা মুসা ইউশাউ এএফপিকে বলেন, আমি অনেক আহত মানুষকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে দেখেছি। ঘটনার পরপরই ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, রক্তাক্ত অবস্থায় একজন ব্যক্তি মাটিতে কাতরাচ্ছেন এবং কয়েকটি মরদেহ চাদর দিয়ে ঢাকা রয়েছে। এদিকে, মাইদুগুরিতে কর্মরত একটি আন্তর্জাতিক এনজিও তাদের কর্মীদের কাছে পাঠানো নিরাপত্তা সতর্কবার্তায় গামবোরু বাজার এলাকা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে। এএফপি ওই সতর্কবার্তাটি দেখেছে। ২০০৯ সাল থেকে নাইজেরিয়া জিহাদি বিদ্রোহের মুখে রয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। যদিও এক দশক আগের তুলনায় সহিংসতা কিছুটা কমেছে, তবু এই বিদ্রোহ পাশের দেশ নাইজার, চাদ ও ক্যামেরুনেও ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিছু এলাকায় সহিংসতা নতুন করে বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা বাড়ছে। বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘদিনের সামরিক অভিযানের পরও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো এখনো প্রাণঘাতী হামলা চালানোর সক্ষমতা ধরে রেখেছে। মাইদুগুরি শহরটি একসময় নিয়মিত গোলাগুলি ও বোমা হামলার সাক্ষী ছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে শান্ত রয়েছে। শহরটিতে সর্বশেষ বড় ধরনের হামলার ঘটনা ঘটে ২০২১ সালে। তবুও রাজ্যের রাজধানীতে সংঘাতের চিহ্ন এখনো স্পষ্ট। এখানেই বড় বড় সামরিক অভিযানের সদর দপ্তর অবস্থিত। প্রতিদিন সামরিক পিকআপ গাড়ি শহরের রাস্তায় চলাচল করে, যেগুলোর পেছনে সশস্ত্র সেনারা অবস্থান নেন এবং তাদের হেলমেট প্রখর দুপুরের রোদ থেকে সুরক্ষা দেয়। সন্ধ্যার পরও শহরে নিরাপত্তা চেকপয়েন্ট কার্যকর থাকে। যদিও একসময় দুপুরের পর বন্ধ হয়ে যেত এমন বাজারগুলো এখন রাত পর্যন্ত ব্যস্ত থাকে। অন্যদিকে, গ্রামীণ এলাকায় বিদ্রোহ এখনো অব্যাহত রয়েছে। বিশ্লেষকেরা সতর্ক করে বলছেন, চলতি বছরে জিহাদি সহিংসতা আবারও বাড়তে পারে।