অনিশ্চয়তার মুখে ২০২৬ বিশ্বকাপে ইরানের অংশগ্রহণ

অনিশ্চয়তার মুখে ২০২৬ বিশ্বকাপে ইরানের অংশগ্রহণ ২০২৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপে মাঠে দেখা যাবে ৪৮ দল। তার এশিয়ার শক্তিশালী দল ইরান ইতোমধ্যে নিশ্চিত করেছে তাদের অংশগ্রহণ। কিন্তু মাঠের লড়াই জিতে বিশ্বকাপের টিকিট পেলেও এখন তাদের সামনে এক অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিপক্ষ রাজনীতি ও ভিসা জটিলতা। এই বিশ্বকাপ আয়োজন করবে তিনটি দেশ— যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো। ফাইনালসহ অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হবে যুক্তরাষ্ট্রে। আর এখানেই শুরু হয়েছে সমস্যা। ওয়াশিংটনের কড়া ভিসা নীতি, সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা এবং ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়ী দ্বন্দ্ব একত্রে জটিল করে তুলেছে ইরানের বিশ্বকাপ যাত্রা। চলতি বছরের মার্চে উজবেকিস্তানের সঙ্গে ড্র করে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ইরান। কিন্তু ভিসা না পেলে যুক্তরাষ্ট্রে নকআউট পর্বে খেলাই অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়াবে। এমন পরিস্থিতিতে ফিফা ও আয়োজকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। বিশ্বকাপের সূচি অনুযায়ী, ইরান যদি ‘গ্রুপ এ’-তে পড়ে, তাহলে প্রাথমিক ম্যাচগুলো হতে পারে মেক্সিকোতে। কিন্তু শেষ ষোলোতে গেলে ম্যাচ পড়বে যুক্তরাষ্ট্রে—যেখানে ভিসা পাওয়া দারুণ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে ইরানি খেলোয়াড়দের জন্য। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপ করা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল আছে ১২টি দেশের ওপর, যার মধ্যে রয়েছে ইরান। যদিও ক্রীড়াজগতের জন্য বিশেষ ছাড় দেওয়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, এখনো নিশ্চিত কিছু নয়। ইতিহাস বলছে, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক টানাপোড়েনে আগে রাশিয়া ও যুগোস্লাভিয়া যেমন নিষিদ্ধ হয়েছিল ইরানের ক্ষেত্রেও তেমন কিছু ঘটতে পারে কি না তা নিয়েই শঙ্কা ফুটবলমহলে। শুধু জাতীয় দল নয়, ভিসা সমস্যা তাড়া করছে ক্লাব ফুটবলেও। ইন্টার মিলানের ইরানি স্ট্রাইকার মেহদি তারেমি ক্লাব বিশ্বকাপের স্কোয়াডে থাকলেও ভিসা জটিলতায় যুক্তরাষ্ট্রে দলের সঙ্গে যোগ দিতে পারেননি। ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তা সত্ত্বেও তাকে তেহরান থেকে বের করে আনা যায়নি। এখনও পর্যন্ত ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো কিংবা মার্কিন প্রশাসন কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। তবে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করলে বিশ্বকাপে ইরানের উপস্থিতি আদৌ সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় বাড়ছেই।

ক্লাব বিশ্বকাপে ‘আর্জেন্টিনার জার্সি’ ভাইরাল কোরিয়ান ক্লাব

ক্লাব বিশ্বকাপে ‘আর্জেন্টিনার জার্সি’ ভাইরাল কোরিয়ান ক্লাব ক্লাব বিশ্বকাপে দক্ষিণ আমেরিকার ক্লাবগুলো দুর্দান্ত খেলছে। ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোকে তারা নাকানি-চুবানি খাওয়াচ্ছে। তেমনি আজ উলসান হুন্দাইয়ের বিপক্ষে ৪-২ ব্যবধানে জয় নিয়ে এসেছেন ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ফ্লুমিনেন্স। তবে এই ম্যাচে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল উলসানের জার্সি! দক্ষিণ কোরিয়ার ক্লাবটি এমন এক জার্সি পরে মাঠে নামে, যা দেখতে হুবহু আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের পরিচিত জার্সির মতো। ওই জার্সিতে ছিল পাঁচটি আকাশি নীল রঙের স্ট্রাইপ, যার পটভূমি সাদা। জার্সির হাতায় ছিল জার্মান ব্র্যান্ডের ক্লাসিক থ্রি স্ট্রাইপ ডিজাইন। পুরো দলের শর্টস ও মোজাও ছিল সাদা রঙের। সব মিলিয়ে পুরো জার্সিটিই যেন ছিল আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জার্সির প্রতিরূপ! জার্সির এই আকস্মিক পরিবর্তন ঘিরে শুরু হয় আলোচনা, বিশেষ করে ম্যাচের ৩৭তম মিনিটে জিন-হিউন লি এবং শেষ দিকের সময়ে উম ওন-সাং গোল করার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেন উচ্ছ্বাসের বন্যা বইয়ে দেয় ভক্তরা। জার্সিটি নিয়ে আলোচনা হওয়ার প্রধান কারণ ছিল, এই জার্সির সঙ্গে কোনো মিল নেই ক্লাবটির ঐতিহাসিক রঙের। ক্লাব বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে দলটি নেমেছিল নীল-হলুদ রঙের জার্সিতে। ফলে হঠাৎ করে এমন সাদা-আকাশি রঙের জার্সি দেখে অবাক হয়ে যান আর্জেন্টিনার সমর্থকরা। অনেকে মনে করেন, এটা যেন লাতিন আমেরিকার বিশ্বজয়ী দলের ছায়া। এদিকে ব্রাজিলের ক্লাব ফ্লুমিনেন্সের বিপক্ষে খেলায় উলসানের এমন জার্সি পরাকে ঘিরে তৈরি হয় নানারকম মিমস। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ বলেন, ‘এ যেন আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিল!’। আবার কেউ লিখেছেন, ‘কোরিয়ান স্কালোনেতা মাঠে নেমে গেছে!’

ক্লাব বিশ্বকাপ: ১০০ কোটি ডলারের বাণিজ্যিক লড়াই

ক্লাব বিশ্বকাপ: ১০০ কোটি ডলারের বাণিজ্যিক লড়াই ফিফার নতুন সংস্করণের ক্লাব বিশ্বকাপ যেন শুধু মাঠের লড়াই নয়, বরং এক বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যিক মঞ্চ। গত মার্চে ফিফা ঘোষণা করে, এবারের ৩২ দল নিয়ে আয়োজিত ক্লাব বিশ্বকাপে বিজয়ী দল পাবে সর্বোচ্চ ১২৫ মিলিয়ন ডলার—অর্থাৎ মাত্র এক মাসের টুর্নামেন্টে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা পর্যন্ত আয়ের সুযোগ! শুধু ম্যাচ জিতলেই মিলবে ২ মিলিয়ন ডলার। ‘অক্টাগনের ফুটবল বিভাগের প্রধান ফিল কার্লিং বলেন, ‘এটা এখনকার ফুটবলে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ যুদ্ধ—আন্তর্জাতিক ভক্ত ধরে রাখা এবং তাদের অর্থে পরিণত করা। ‘এই মুহূর্তে ফুটবলে ট্যালেন্ট মানে টাকা, টাকা মানে নজর, নজর মানে স্পনসর, স্পনসর মানেই ক্লাবের অর্থনৈতিক ক্ষমতা, চ্যাম্পিয়নস লিগের মতো ঐতিহ্য না থাকলেও ক্লাব বিশ্বকাপে আমেরিকার মাটিতে নিজেদের দেখানোর এই সুযোগকে বড় ক্লাবগুলো হাতছাড়া করতে চায় না। জার্সি বিক্রি, সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলোয়ার বাড়ানো আর ডিজিটাল সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে ক্লাবগুলো নিজেদের আয়ের নতুন দ্বার খুঁজে পাচ্ছে। স্পোর্টস মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ টিম ক্রো বলেন, ‘এটা এখন আর ঐতিহ্যগত ভক্তদের মন জয় করার প্রশ্ন নয়, বরং নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছানোই মূল লক্ষ্য। ‘ এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, শীর্ষ ২০ ক্লাব ২০২৩-২৪ মৌসুমে বাণিজ্যিক খাত থেকে মোট ৪.২ বিলিয়ন পাউন্ড আয় করেছে—যার মধ্যে রিয়াল মাদ্রিদের আয় সর্বোচ্চ ৪১০ মিলিয়ন পাউন্ড। যুক্তরাষ্ট্রে এখনও লাখ লাখ মানুষ আছেন যাদের কোনো পছন্দের ফুটবল ক্লাব নেই। সেই বাজার দখলের এই সুবর্ণ সুযোগ মিস করতে চায় না রিয়াল মাদ্রিদের মতো ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলো।আসলে যুক্তরাষ্ট্র হলো ২০ ট্রিলিয়ন ডলারের ইকোনমি। সেখানে একজন ফ্যান মানেই ভবিষ্যতের ক্রেতা, সাবস্ক্রাইবার এবং বিনিয়োগকারী। কেউ জানে না আগামী ১০ বছরে এই টুর্নামেন্ট কোথায় দাঁড়াবে। তবে রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার সিটি, পিএসজি’র মতো ক্লাব যখন এতটা সিরিয়াস, তখন এটা শুধু ‘গ্রীষ্মকালীন প্রীতি ম্যাচ’ নয়, বরং ফুটবলের ভবিষ্যতের বাণিজ্যিক রূপরেখার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে।

অসুস্থ এমবাপ্পেকে রেখে শার্লটে গেল রিয়াল মাদ্রিদ

অসুস্থ এমবাপ্পেকে রেখে শার্লটে গেল রিয়াল মাদ্রিদ ক্লাব বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামবে রিয়াল মাদ্রিদ। আজ রাতে শার্লটের ব্যাংক অব আমেরিকা স্টেডিয়ামে মেক্সিকান ক্লাব পাচুকার মুখোমুখি হবে লস ব্লাঙ্কোরা। এই ম্যাচকে সামনে রেখে ফ্লোরিডা ছেড়ে নর্থ ক্যারোলাইনার শার্লটে পৌঁছেছে রিয়াল মাদ্রিদ। তবে শার্লটগামী এই বিমানে ছিলেন না কিলিয়ান এমবাপ্পে। কিছু দিন আগে পেটের পীড়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এমবাপ্পে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও এখনও পুরোপুরি সেরে ওঠেননি তিনি। তাই ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে ফরাসি তারকাকে রেখেই শালর্টে গেছেন দলের বাকিরা। বার্তা সংস্থা এএফপিকে রিয়ালের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এমবাপ্পের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে এএফপিকে রিয়ালের একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘তার শারীরিক অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে। তবে সে রোববারের ম্যাচটি খেলতে সতীর্থদের সঙ্গে বিমান ভ্রমণ করবে না।’শুধু এমবাপ্পে নয় এই ম্যাচে ডিফেন্ডার দানি কারভাহালকেও পাচ্ছেন না রিয়াল কোচ জাবি আলোনসো। স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক মার্কা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ঘাড়ে ব্যথা অনুভব করায় ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে অনিশ্চিত কারভাহাল। আগামী বৃহস্পতিবার ফিলাডেলফিডায় অস্ট্রিয়ান ক্লাব রেড বুল সাল্‌জবুর্গের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলবে রিয়াল মাদ্রিদ। সেই ম্যাচে এমবাপ্পেকে পাওয়ার আশায় আলোনসো। সংবাদ সম্মেলনে রিয়াল কোচ বলেন, ‘সে হাসপাতাল থেকে ফিরেছে। সেরে উঠছে এবং উন্নতি করছে। আমরা তাকে সাল্‌জবুর্গের বিপক্ষে পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।’

আরচ্যারিতে বাংলাদেশের স্বর্ণ জয়

আরচ্যারিতে বাংলাদেশের স্বর্ণ জয় এশিয়ান কাপ আরচ্যারিতে বাংলাদেশের আরচ্যার আব্দুর রহমান আলিফ স্বর্ণ জিতেছেন। ফাইনালে জাপানের মিয়াতা গাকুতোকে ৬-৪ সেট পয়েন্টে পরাজিত করেন আসিফ। সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত আজ শুক্রবার (২০ জুন) রিকার্ভ পুরুষ ব্যক্তিগত ইভেন্টের প্রথম সেটে আলিফ ২৮ স্কোর করেন। তার প্রতিপক্ষ জাপানি আরচ্যার মিয়াতা করেন ২৭ পয়েন্ট। তাতে বাংলাদেশের আলিফ ২-০ সেট পয়েন্টে লিড পায়৷ দ্বিতীয় সেটে আলিফ ২৯ আর জাপানি আরচ্যার ২৮ করলে বাংলাদেশের স্বর্ণ জয়ের সম্ভাবনা বাড়ে। পরের দুই সেটের একটি জিতলে শেষ সেট প্রয়োজন হতো না। বাংলাদেশের আরচ্যার আলিফ তৃতীয় ও চতুর্থ সেটে হেরে যান৷ মিয়াতার ২৮ ও ২৭ স্কোরের বিপরীতে আলিফ করেন ২৭ ও ২৬। ফলে ৪-৪ সেট পয়েন্টে সমতা আসে। পঞ্চম ও শেষ সেট শিরোপা নির্ধারণীতে পরিণত হয়। আলিফ শেষ সেটে ৩০ এর মধ্যে ২৯ পয়েন্ট সংগ্রহ করেন। জাপানি আরচ্যার মিয়াতা ২৬ পয়েন্ট পেলে আলিফ শেষ সেট জেতেন৷ এতে ৬-৪ সেট পয়েন্টে রিকার্ভ পুরুষ ব্যক্তিগত ইভেন্টে বাংলাদেশের স্বর্ণ নিশ্চিত হয়। আলিফ বাংলাদেশের উদীয়মান রিকার্ভ আরচ্যার। বিকেএসপির এই আরচ্যার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলছেন কয়েক বছর যাবত। এশিয়ান কাপ আরচ্যারির স্বর্ণ জয় তার ক্যারিয়ারের সেরা সাফল্য। তার আগে বাংলাদেশের রোমান সানা এমন কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন৷

বিশ্বকাপ স্বপ্ন থেমে গেছে, ধ্বংস হয়ে গেছে গাজার ক্রীড়াঙ্গন

বিশ্বকাপ স্বপ্ন থেমে গেছে, ধ্বংস হয়ে গেছে গাজার ক্রীড়াঙ্গন ওমানের বিপক্ষে ড্রয়ের মাধ্যমে শেষ হয়ে গেছে ফিলিস্তিনের বিশ্বকাপ ফুটবলের স্বপ্নযাত্রা। মাঠের লড়াইয়ের পরিসমাপ্তির সময় গাজায় মাটির নিচে চাপা পড়ে গেছে ক্রীড়াঙ্গনের ভবিষ্যৎ।যুদ্ধবিধ্বস্ত এই ভূখণ্ডের ক্রীড়াপ্রেমীদের মতে, তারা আবার মাঠে ফিরতে পারলেও তাতে লাগবে অন্তত এক দশক। খান ইউনুসে নিজের ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘরের ভেতর ৭৫ বছর বয়সী শাকের সাফি হাত বুলিয়ে দেখছিলেন তার ছেলে মোহাম্মদের পুরনো ছবি। মোহাম্মদের হাতে গড়া জুনিয়র ফুটবল দলের ট্রফি, মেডেল, দলের হাডল করা মুহূর্তের ছবি—সব এখন স্মৃতিচিহ্ন, এক অসমাপ্ত স্বপ্নের নীরব সাক্ষী।২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর, ইসরায়েলি এক বিমান হামলায় নিহত হন মোহাম্মদ সাফি—একজন ফুটবল কোচ এবং শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক। গাজার স্কুল ও স্থানীয় ক্লাবে বছরের পর বছর ধরে কিশোর ফুটবলারদের গড়ে তুলেছিলেন তিনি। আল-আকসা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শারীরিক শিক্ষায় স্নাতক মোহাম্মদ ছিলেন দক্ষিণ গাজার আল-আমাল ফুটবল ক্লাবের প্রধান কোচ। ৬ থেকে ১৬ বছর বয়সী খেলোয়াড়দের মাঝে তার সুনাম ছিল অপরিসীম।শাকের বলেন, “আমার ছেলের স্বপ্ন ছিল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফিলিস্তিনকে প্রতিনিধিত্ব করার। সে বিশ্বাস করত—খেলা তরুণদের হতাশা থেকে বের করে আনতে পারে। কিন্তু যুদ্ধ তার আগেই থামিয়ে দিল তাকে। ”মোহাম্মদের স্ত্রী নীরমীন ও তাদের চার সন্তান—শাকের জুনিয়র (১৬), আমির (১৪), আলমা (১১) ও তাইফ (৭)—আজ শূন্যতা আর কষ্ট নিয়ে দিন কাটাচ্ছে। তাদের কাছে বাবার শেষ ফুটবল, কোচিংয়ের নোটবইই এখন একমাত্র সম্বল। ছোট্ট তাইফ যখন জিজ্ঞাসা করে, “আমাদের কাছ থেকে বাবাকে কেন কেড়ে নিল ওরা?” তখন মায়ের চোখে জল ঝরে।“সে রাজনীতিবিদ ছিল না, স্বপ্নবাজ ছিল,” বলেন নীরমীন। “আন্তর্জাতিক রেফারি হতে চেয়েছিল, মাস্টার্স করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাকে মেরে ফেলা হলো, কারণ সে ছিল জীবনের প্রতীক। ” খেলাধুলার বদলে এখন শুধু বেঁচে থাকার লড়াই, গাজায় যারা এখনও বেঁচে আছে, তাদের কাছে খেলাধুলা এখন বিলাসিতা। বেঁচে থাকাই এখন একমাত্র লক্ষ্য।২০ বছর বয়সী ইউসুফ আবু শাওয়ারিব, রাফাহর প্রিমিয়ার লিগ ক্লাবের গোলরক্ষক। মে ২০২৪-এ নিজের ঘর ছেড়ে আশ্রয় নেন খান ইউনুস স্টেডিয়ামে—যেখানে একসময় খেলতেন ম্যাচ।আজ সে মাঠে নেই ফুটবলারের ছায়া, বরং সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শরণার্থীদের তাঁবু।“এই জায়গায় আমার কোচ আমাকে ম্যাচের আগে ব্রিফ করতেন। এখন আমি এখানে পানির জন্য অপেক্ষা করি, কিক অফের জন্য নয়,” বলেন ইউসুফ। আজ তার রুটিন কেবল মাঝেমধ্যে নিজের তাঁবুতে হালকা অনুশীলন। জার্মানিতে খেলার স্বপ্ন কিংবা খেলাধুলা নিয়ে উচ্চশিক্ষার চিন্তা—সব এখন অতীত।ধ্বংসের মাঝেও কিছু আশা টিকে আছে। ফিলিস্তিনের অ্যাম্পিউটি ফুটবল দলের প্রধান কোচ শাদি আবু আরমানা যুদ্ধের আগে ছয় মাসব্যাপী একটি প্রস্তুতিমূলক পরিকল্পনা করেছিলেন।তার ২৫ জন খেলোয়াড় ও পাঁচ সদস্যের কোচিং স্টাফ নিয়ে দলটি আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিল। ২০১৯ সালে তারা ফ্রান্সে অংশ নিয়েছিল, আবার ২০২৩ সালের নভেম্বর ও ২০২৫ সালের অক্টোবরের জন্য পরিকল্পনা ছিল।“এখন তো একসঙ্গে জড়ো হওয়াটাই সম্ভব না,” বলেন শাদি। “সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেছে—হোম, মাঠ, গিয়ার, কিছুই নেই। খেলোয়াড়দের অনেকেই পরিবারের সদস্য হারিয়েছে, কেউ কেউ নিজের বাড়িও। ” তিনি বলেন, “যুদ্ধ থেমে গেলেও, আমরা যা হারিয়েছি তা ফিরিয়ে আনতে বছর লাগবে। এটা শুধু থেমে যাওয়া নয়, এটা একেবারে ‘মুছে ফেলা’। ফিলিস্তিন অলিম্পিক কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট আসআদ আল-মাজদালাওয়ি বলেন, গাজার ক্রীড়াব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংসের পথে। কমপক্ষে ২৭০টি ক্রীড়া স্থাপনা আঘাতপ্রাপ্ত, যার মধ্যে ১৮৯টি সম্পূর্ণ ধ্বংস এবং ৮১টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত। “গাজার ক্রীড়া অবকাঠামোর প্রতিটি স্তরে হামলা হয়েছে—অলিম্পিক অফিস, ক্রীড়া ফেডারেশন, ক্লাব, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া কার্যক্রম—সবকিছু,” বলেন আল-মাজদালাওয়ি। নিহতদের তালিকায় রয়েছেন আন্তর্জাতিক কারাতে চ্যাম্পিয়ন নাঘাম আবু সামরা, ১৯৯৬ সালের অলিম্পিকে পতাকা বহনকারী মাজেদ আবু মারাহিল, জাতীয় ফুটবল কোচ হানি আল-মাসদার এবং অ্যাথলেটিকস কোচ বিলাল আবু সামান। “এটা শুধু ক্ষতি নয়, এটা এক ধরনের নির্মূল প্রক্রিয়া,” বলেন আল-মাজদালাওয়ি। “প্রতিটি খেলোয়াড় ছিল একেকটি কমিউনিটির স্তম্ভ। তারা সংখ্যা নয়, তারা প্রতীক ছিল—আশা, ঐক্য ও সংগ্রামের প্রতীক। ” আন্তর্জাতিক সমাজের নীরবতা আর সহনীয় নয়, আল-মাজদালাওয়ির মতে, আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংগঠনগুলো শুধু নীরবই নয়, বরং একপ্রকার দায় এড়িয়ে চলেছে। তিনি বলেন, “প্রাইভেটভাবে অনেকে সমবেদনা প্রকাশ করে, কিন্তু সিদ্ধান্তের স্তরে এসে ইসরায়েল যেন আইনের ঊর্ধ্বে। খেলাধুলার নিয়ম বা মানবাধিকার—সবই এখানে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। ” তিনি বলেন, “আমরা ১৯৯৪ সাল থেকে এই ক্রীড়া কাঠামো গড়ে তুলেছি। জ্ঞানের স্তর, পেশাদারি, অবকাঠামো—সব ছিল। এখন তা কয়েক মাসেই ধ্বংস হয়ে গেছে। ” যুদ্ধ এখনও চলছে। ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। তবুও শাকের সাফি, ইউসুফ, শাদি—তারা সবাই বিশ্বাস করেন, একদিন খেলাধুলা আবার হয়ে উঠবে তাদের অস্তিত্ব, আশা আর জীবনের পরিচয়। “এখন তো শুধু কামনা করি, আগামীকাল যেন খাওয়ার কিছু পাই,” বলেন ইউসুফ। “যুদ্ধ শুধু মাঠ ভাঙেনি, আমাদের ভবিষ্যৎও গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ” তিনি যখন পোড়া স্টেডিয়ামের দিকে তাকান, তখন তা শুধুই সাময়িক আশ্রয় নয়—একটা জাতিগত ‘মুছে ফেলার’ প্রতীক।

ফিফা র‍্যাংকিংয়ে বড় লাফ বাংলাদেশের মেয়েদের

ফিফা র‍্যাংকিংয়ে বড় লাফ বাংলাদেশের মেয়েদের নারী ফুটবলের র‍্যাংকিং প্রকাশ করেছে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। যেখানে ৫ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। মার্চে প্রকাশিত র‍্যাংকিংয়ে ১৩৩ নম্বরে ছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। আজ প্রকাশিত র‍্যাংকিংয়ে ১২৮ নম্বরে উঠে এসেছে পিটার বাটলারের শিষ্যরা। বাংলাদেশের মেয়েরা মে মাসে নারী ফিফা উইন্ডোতে জর্ডানে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলেছে। স্বাগতিক জর্ডান ও ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে ড্র করেছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। যথাক্রমে ৩৯ ও ৫৯ ধাপ এগিয়ে থাকা ইন্দোনেশিয়া ও জর্ডানকে রুখে দেওয়ায় বাংলাদেশের র‌্যাঙ্কিং পয়েন্ট ১০৯২ থেকে বেড়ে ১০৯৯.৩৬ হয়েছে। এতেই ৫ ধাপ উন্নতি হয়েছে র‍্যাংকিংয়ে। নারী র‍্যাংকিংয়ে শীর্ষস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এবারের র‍্যাংকিংয়ে সর্বোচ্চ ৭ ধাপ উন্নতি হয়েছে মিশরের। সবচেয়ে বেশি ৫ ধাপ অবনমন সংযুক্ত আরব আমিরাতের। র‍্যাংকিংয়ের শীর্ষ পাঁচে আছে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, জার্মানি, ব্রাজিল ও ইংল্যান্ড।চার ধাপ উন্নতি করে ব্রাজিলের মেয়েরা চার নম্বরে এবং এক ধাপ পিছিয়ে পাঁচে নেমেছে ইংল্যান্ড। দুই ধাপ পিছিয়ে জাপান সাত, এক ধাপ পিছিয়ে কানাডা আট এবং এক ধাপ এগিয়ে ফ্রান্সের মেয়েরা ১০ নম্বরে উঠেছে।

মেসিকে তুলে নেওয়ার ব্যাখ্যা দিলেন স্কালোনি

মেসিকে তুলে নেওয়ার ব্যাখ্যা দিলেন স্কালোনি দল তখনও পিছিয়ে, গোলের খোঁজে মরিয়া আর্জেন্টিনা। ঠিক এমন এক মুহূর্তে মাঠ থেকে উঠিয়ে নেওয়া হলো লিওনেল মেসিকে! কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে কোচ লিওনেল স্কালোনির এমন সিদ্ধান্তে অবাক হয়েছেন অনেকেই। তবে ম্যাচ শেষে স্কালোনি জানালেন, সিদ্ধান্তটা একান্তই মেসির ইচ্ছে মতো হয়েছে। ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে আজ বাংলাদেশ সময় ভোরে নিজেদের মাঠে কলম্বিয়ার মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ১৫তম মিনিটে দুর্দান্ত এক গোলে দলকে এগিয়ে দেন লুইস দিয়াস। ৭৮তম মিনিটে তখনও ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে আর্জেন্টিনা, আর ঠিক তখনই মেসিকে তুলে এসেকিয়েল পালাসিওসকে মাঠে নামান স্কালোনি। সবচেয়ে বড় চমক ছিল এই বদলিতেই। চোট না থাকলে সাধারণত পুরো ম্যাচ খেলা মেসিকে এমন গুরুত্বপূর্ণ সময় তুলে নেওয়ায় প্রশ্ন উঠতেই পারে। তবে কোচ জানালেন, সিদ্ধান্তটি পুরোপুরি মেসির সম্মতিতেই। স্কালোনির ভাষ্য, ‘সে সাধারণত মাঠ ছাড়ে না। কিন্তু যখন দেখল আমরা দুটি পরিবর্তন আনছি, তখন সে নিজেই বলল, তাকে তুলে নেওয়াই ভালো হবে। তাই আমরা তাকে পরিবর্তন করি। না হলে আমি কখনোই এমন করতাম না। আপনারা জানেন, আমি এসব বিষয়ে কতটা গুরুত্ব দিই। ’মেসির মাঠ ছাড়ার তিন মিনিট পরই থিয়াগো আলমাদার দারুণ এক গোলে সমতায় ফেরে আর্জেন্টিনা। শেষ পর্যন্ত ১-১ ড্র নিয়েই মাঠ ছাড়ে দুই দল। গত মার্চে চোটের কারণে উরুগুয়ে ও ব্রাজিলের বিপক্ষে খেলতে পারেননি মেসি। তবে ওই দুই ম্যাচ জিতে মূলপর্বের টিকিট নিশ্চিত করে নেয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। এই মাসের বাছাইপর্বে চিলির বিপক্ষে জয় পাওয়া ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে নেমেছিলেন তিনি। জাতীয় দলের দায়িত্ব শেষ করে এখন ক্লাব ফুটবলে মনোযোগ দেবেন ৩৭ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। বাংলাদেশ সময় আগামী রোববার সকালে আল আহলির বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ক্লাব বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে মেসির ক্লাব ইন্টার মায়ামি।

প্রাণান্তকর চেষ্টার পরও হারলো বাংলাদেশ

প্রাণান্তকর চেষ্টার পরও হারলো বাংলাদেশ এএফসি বাছাইপর্বের ম্যাচে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিলো বাংলাদেশ।ম্যাচের আগে বাংলাদেশের হামজা-সমিত-ফাহামেদুলরা যেমন আলোচনায় ছিলেন, ঠিক তেমনি স্বাগতিকদের জন্য ভয়ের কারণ ছিলেন সিঙ্গাপুরের ইখসান ফান্দি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সেই ফান্দি-ই দলের হয়ে দ্বিতীয় গোলটি করলেন। দীর্ঘদিন পর জাতীয় স্টেডিয়ামে ফুটবল ফিরেছে। ঘরের মাঠে ফুটবল ফেরার ম্যাচে অবশ্য গত ৪ জুন ভুটানকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। তবে গড়বড় করে ফেললেন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে। জাতীয় স্টেডিয়ামে যে ম্যাচটি নিয়ে ছিলো চরম উত্তেজনা, সেই ম্যাচটাই হেরে গেলো স্বাগতিকরা। আজকের এ ম্যাচ নিয়ে দর্শকদের মাঝে উন্মাদনা ছিলো অনেক আগে থেকেই। কেননা, ম্যাচটা বাংলাদেশের জন্য বিশেষ কিছুই বটে। কানাডা প্রবাসী সমিত সোমের অভিষেক হয়েছে এই ম্যাচে। অন্যদিকে হামজা চৌধুরী, ফাহামেদুল ইসলামের মতো খেলোয়াড় দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় রাতারাতি পাল্টে গেছে বাংলাদেশ দল। ক’দিন আগেও কী এত শক্তিশালী ছিলো বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল, নিশ্চই না। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা ফুটবলার হামজা চৌধুরী বাংলাদেশ দলে যোগ দেওয়ার পরেই যেনো দর্শকদের উন্মাদনা বেড়ে গেলো বহু গুণ। তারপর যোগ দিলেন ইতালির লিগে খেলা ফাহামেদুল ইসলাম ও কানাডার লিগে খেলা সমিত সোম। আর তার সঙ্গে সঙ্গে সমর্থকদের প্রত্যাশাও যেনো বেড়ে গেলো আরও কয়েকগুণ। তবে সমর্থকদের সেই প্রত্যাশায় যেনো গুড়ে বালি। বাংলাদেশের ফুটবল মাঠে এমন দৃশ্য ঠিক কবে দেখেছেন, হয়তো মনেও নেই। এত দর্শক সবশেষ কোন ম্যাচে হয়েছিলো, তাও হয়তো খেয়াল করতে পারবেন না। বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচে সমর্থকরা যে প্রত‌্যাশা নিয়ে এসেছিলেন মাঠে খেলা দেখতে, তাদের সেই প্রত‌্যাশা অবশ্য পূরণ হয়নি। সিঙ্গাপুরের কাছে ২-১ গোলে ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ। প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে গোল হজম করেছে বাংলাদেশ। আবার দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আরও একটা গোল হজম করে স্বাগতিকরা। গ্যালারি তখন একেবারে নিশ্চুপ। সেই নিরবতা ভাঙলো ম্যাচের ৬৭ মিনিটে। দর্শকদের সে কি চিৎকার, একেবারে গলা ফাটানো। কারণটা হলো, হামজার বাড়ানো বল থেকে সিঙ্গাপুরের গোলকিপারকে বোকা বানিয়ে গোল করেন রাকিব হোসেন। ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণের চেষ্টা চালিয়েছে সিঙ্গাপুর। বেশ কয়েকবার গোলের সুযোগও তৈরি করেছে, তবে তা কাজে আসেনি। সময়ে সময়ে আবার বাংলাদেশও নাড়া দিয়েছে সিঙ্গাপুরের ঘরে। মাঝেমধ্যে ফাহামেদুল-সমিতরাও ভীতি ধরিয়েছেন প্রতিপক্ষের মনে। ম্যাচের ৪৫তম মিনিটে বাংলাদেশের রক্ষণে ঢুকে পড়ে সিঙ্গাপুর। গোলকিপার মিতুল বল ফিস্ট করতে গিয়ে পারেননি। বক্সের মধ্য থেকে হেড দিয়ে সিঙ্গাপুরের একজন বল দেন ডান দিকে। সেখান থেকে তিনি বল দেন বাঁ পাশে। শট নেন সিঙ্গাপুরের সং উই ইয়াং। হামজা চৌধুরী অনেক দূর থেকে দৌড়ে এসে গোল বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পারেননি। প্রথমার্ধে প্রতিপক্ষের ডেরায় বেশ কয়েকবার হানা দিয়েছিলো সমিত-ফাহামেদুলরা। তবে বাংলাদেশের আক্রমণের উৎস যেনো সমিত সোম। প্রথমার্ধে কমপক্ষে পাঁচটি আক্রমণের উৎস ছিলেন সমিত। কিন্তু তার দারুণভাবে বাড়ানো পাসগুলো কাজে লাগাতে পারেননি রাকিব-ফাহামেদুলরা। ম্যাচের ১৬তম মিনিটে বড় বাঁচা বেঁচে যায় বাংলাদেশ। সতীর্থের ক্রস থেকে দারুণ এক হেড করেছিলেন ইখসান ফান্দি। তবে পোস্ট ঘেঁষে সেটি বেরিয়ে যায়। খেলার প্রথম ২০ মিনিটে আক্রমণে এগিয়ে ছিলো বাংলাদেশ। ফাহামেদুল ইসলাম ও শাকিল আহাদ একাধিক সুযোগ তৈরি করেছিলেন। কিন্তু রাকিব হোসেন কাজে লাগাতে পারেননি। পাল্টা আক্রমণে সিঙ্গাপুরও দুটি সুযোগ তৈরি করেছিলো। তারাও সুযোগ হাতছাড়া করেছে। ম্যাচের ৫৯ মিনিটে ব্যবধান বাড়ায় সিঙ্গাপুর। দ্বিতীয় গোলটি করেছেন ইকসান ফান্দি। বক্সের ভেতর থেকে নেওয়া সিঙ্গাপুরের এক ফরোয়ার্ডের শট বাংলাদেশের গোলকিপার মিতুল ঠেকালেও ভালোভাবে বিপদমুক্ত করতে পারেননি। বক্সের মধ্যেই বল পেয়ে যান ফান্দি। দূরের পোস্টে তার নেওয়া শট ঠেকাতে পারেননি মিতুল মারমা। ৬৭ মিনিটে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। হামজা চৌধুরীর বাড়ানো বল পেয়ে সিঙ্গাপুরের গোলকিপারকে বোকা বানান রাকিব হোসেন। শেষ ১০ মিনিটে প্রতিপক্ষের ডেরায় একের পর এক আক্রমণ করেছে স্বাগতিকরা। হামজা-সমিতদের আক্রমণ ঠেকাতে রীতিমতো ঘাম ঝরেছে সফরকারীদের। তবে চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত সমতা ফেরাতে পারেনি বাংলাদেশ। ২-১ গোলের হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় হামজাদের।

পা ভাঙতে হলে ভাঙুক, আমাকে ট্রফি জিততে হবে: রোনালদো

পা ভাঙতে হলে ভাঙুক, আমাকে ট্রফি জিততে হবে: রোনালদো চোখের জলে ভিজছে তার মুখ। আনন্দাশ্রু। উন্মাতাল, উচ্ছ্বাস, উৎসব সবই এই রাতে তার প্রাপ্য। সেই প্রাপ্যটাই জার্মানির আলিয়াঞ্জ এরিনায় বুঝে পেলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। স্পেনকে হারিয়ে উয়েফা নেশন্স লিগের শিরোপা জিতল পর্তুগাল। ২০১৯ সালে রোনালদো পেয়েছিলেন এই শিরোপা। ছয় বছর পর শিরোপা পুনরুদ্ধার। লম্বা সময় পর রোনালদোর ট্রফির আনন্দ। বয়স চল্লিশ পেরিয়ে যাচ্ছে। ঠিক এমন সময়ে নিজে গোল করে শিরোপা জয়ের অবদানে শামিল হওয়ার আনন্দ, আবেগ, আতিশজ্য ছুঁয়ে যাচ্ছিল তাকে। চোখের জলের মতো অনুভূতি প্রকাশেও রোনালদো ছাড়িয়ে গেলেন নিজেকে, ‘‘কী আনন্দ! এই প্রজন্মের জন্য এটা জরুরি ছিল, এই মানের একটি ট্রফি যাদের প্রাপ্য। আমাদের পরিবারের জন্যও.. আমার বাচ্চারা এসেছে এখানে, আমার স্ত্রী, ভাই, বন্ধুরা…।” ম‌্যাচের পুরোটা সময় মাঠে থাকতে পারেননি রোনালদো। ম‌্যাচের আগে খানিকটা অস্বস্তিও ছিল তার। কিন্তু সব পাশ কাটিয়ে সবুজ গালিচায় নেমে খেলেছেন সিআরসেভেন। গোল করেছেন। এই ফাইনাল ও শিরোপা তার কাছে কতটা অরাধ‌্য সেটা বোঝা গেল কথায়, ‘‘ম্যাচের আগে গা গরমের সময়ই কিছুটা অস্বস্তি ছিল। কিছুটা সময় খারাপ লাগছিল। তবে এটা জাতীয় দলের ম্যাচ। খেলার জন্য আমার পা ভাঙতে হলে ভাঙুক। আমাকে ট্রফি জিততে হবে, খেলতে হবে, নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দিতে হবে। কারণ এটা আমার দেশের জন্য। আমরা মানুষ অল্প, কিন্তু উচ্চাকাঙ্ক্ষা অনেক বড়।’’ পর্তুগালের হয়ে তিনটি শিরোপা জিতেছেন রোনালদো। ২০১৬ ইউরোর পর ২০১৯ ও ২০২৫ নেশন্স লিগ। জাতীয় দলের জার্সিতে খেলা নিয়ে পর্তুগিজ সুপারস্টার বলেছেন, ‘‘পর্তুগালের কথা যখন হয়, এই অনুভূতিই বিশেষ কিছু। এই প্রজন্মের অধিনায়ক হতে পারা দারুণ গর্ব ও সম্মানের। জাতীয় দলের হয়ে কোনো শিরোপা জিততে পারা মানে সবসময়ই প্রাপ্তির চূড়া।” “পর্তুগালের জন্য কিছু জিততে পারা সবসময়ই স্পেশাল। ক্লাবের জয়ে অনেক ট্রফি জিতেছি, কিন্তু পর্তুগালের হয়ে জয়ের চেয়ে সুখের কিছু আর নেই। এজন্যই এই কান্না। দায়িত্ব পালন করেছ এবং এই আনন্দের সীমা নেই।” –যোগ করেন তিনি। চল্লিশেও রোনালদো অপ্রতিরোধ‌্য। কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল ও ফাইনাল তিনটি ম‌্যাচেই গোল করেছেন। পেশাদার ক‌্যারিয়ারে সহস্র গোলের রেকর্ড গড়ার ইচ্ছা তার। সেদিকে এগিয়েও যাচ্ছেন। ৯৩৮ তো হয়েই গেল। তবুও প্রশ্নটা বারবার এসেই যায়, কোথায় থামবেন? উত্তরটা বেশ পরিস্কার তার কাছে, “ভবিষ্যৎ ভাবনা চলতে থাকবে সংক্ষিপ্ত মেয়াদ ধরে। তবে আপাতত সময়টা বিশ্রামের। চোট নিয়ে খেলেছি এবং সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, নিজেকে ঠেলে নিয়েছি সবটুকু… কারণ, জাতীয় দলের জন্য নিজেকে সর্বোচ্চটুকু চেষ্টা করতেই হবে।”