এবার তেলকুপি সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে বাংলাদেশী আহত


শিবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন সীমান্তে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই এবার শাহাবাজপুর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের তেলকুপি সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে হাবিল নামে এক বাংলাদেশী আহত হয়েছেন। তিনি তেলকুপি লম্বাপাড়া গ্রামের বেলাল উদ্দিনের ছেলে। আজ ভোররাত চারটার দিকে ঘটনাটি ঘটে বলে বিজিবি ও স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে। পরে দুপুর সাড়ে ১২টায় কোম্পানী কমান্ডার পর্যায়ে বিএসএফ’র সাথে পতাকা বৈঠকে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিজিবি। এদিকে স্থানীয় সূত্র হাবিলকে কৃষক বলে জানালেও বিজিবি বলছে তিনি একটি চোরাচালান দলের সদস্য। এদিকে স্থানীয় সূত্র আহত হাবিলের বর্তমান অবস্থান নিশ্চিত না করলেও বিজিবি জানেিয়ছে, তিনি রাজশাহীতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আজ দুপুর সাড়ে দেড়টার দিকে সংশ্লিস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা ব্যাটালিয়েনের (৫৯বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া  এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে  ও বক্তব্যে ঘটনার বিস্তারিত নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ভোররাত সাড়ে ৩টা থেকে পৌনে ৪টার মধ্যে তেলকুপি বিওপি’র আওতাধীন সীমান্তের  মেইন আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলার ১৮০ এর  দেড়শ গজ ভারতের অভ্যন্তরে ঘটনাটি ঘটে। এ সময় ঘন কুয়াশার সূযোগে ৭/৮ জন চিহ্নিত চোরাকারবারি চোরাচালানের উদ্দেশ্যে ভারতীয় সীমান্ত অতিক্রম করলে ১১৯ ব্এিসএফ ব্যাটালিয়নের গোপালনগর ক্যাম্পের টহলদল তাদের লক্ষ্য করে ২/৩ রাউন্ড গুলি করে। গুলির শব্দে বিজিবি টহলদল তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে গমন করলে চোরাকারারিরা পালিয়ে বাংলাদশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। পরে বিজিবি আহতের পরিচয় নিশ্চিত হয় এবং তাকে চিহ্নিত চোরাকারবারি বলে শনাক্ত করে।
অধিনায়ক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানান, শনিবার ভোররাত ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে তেলকুপি বিওপির দায়িত্বপূর্ণ ৫ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশী কোন কৃষক অবস্থান করছিল না। এছাড়া ওই সময় ওই সীমান্তে তেলকুপি বিওপি কমান্ডারের নেতৃত্বে ২টি টহলদল টহলরত ছিল। এদিকে আহত ব্যাক্তি কৃষক এবং গমক্ষেতে পানি দিতে গেছিল স্থানীয়দের এমন দাবির ব্যাপারে অধিনায়ক  বলেন,ভোররাত পৌনে ৪টায় সীমান্তের জমিতে কাজ করতে যাবার বিষয়টি  গ্রহণযোগ্য নয়।
এদিকে সংশ্লিস্ট ইউপি চেয়ারম্যান  নিজামুল হক  সীমান্তে গুলিতে একজন আহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি বলেন, গভীর রাত  হওয়ায় এ ঘটনা সম্পর্কে স্থানীয় সূত্রেও বিস্তারিত জানা যায়নি।  তিনি আহত ব্যাক্তি জমিতে কাজ করতে গেছিল এমন শোনা গেছে বলেও জানান।
সং¤িøস্ট ইউপি সদস্য কাশেদ আলী  আহত ব্যাক্তির  পরিচয় নিশ্চিত করে তাঁকে কৃষক বলে শনাক্ত করেন। ওই ব্যাক্তি ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে সীমান্তের শূণ্য রেখার দেড়শ গজ পর্যন্ত বাংলাদেশী অংশের ৫০ থেকে ১০০ গজের ভেতরে গমক্ষেতে পানি দিতে গেছিল বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, ওই সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে। বিএসএফ বেড়ার গেট খুলে  সীমান্তে প্রবেশ করে গুলি চালায়। গুলি আহত ব্যাক্তির পিঠের নীচ থেকে পায়ের দিকে লেগেছে বলে শোনা গেছে। তিনি বলেন, তেলকুপি বিওপি গ্রামের ভেতরেই অবস্থিত। ক্যাম্প  বা গ্রাম হতে দেড়  থেকে দুই কিলোমিটার দূরে  সীমান্তে গুলির ঘটনাটি ঘটে। ইউপি সদস্য আহত ব্যাক্তির বাড়ি গেছিলেন বলেও জানান।
সংশ্লিষ্ট গ্রাম পুলিশ ইসমাইক হক বলেন, সকাল ৬টার দিকে ঘটনাটি ঘটে  বলে শুনেেছন। আহত ব্যাক্তি কৃষক ও গমক্ষেতে পানি দিতে গেছিলেন  এমন শোনা গেছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, সকালে আহত ব্যাক্তির বাড়িতে  গিয়ে মহিলারা ছাড়া কোন পুরুষ মানুষ পাওয়া যায় নি।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা (বিট অফিসার) শিবগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক(এসআই) পিয়ারুল ইসলাম বলেন, গভীর রাতে সীমান্তে গুলির ঘটনার ব্যাপারে জানার পর খোঁজ নেয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এর আগে শিবগঞ্জের বিনোদপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের চৌকা সীমান্তে গত ৫ থেকে ৮ জানুয়ারী পর্যন্ত বিএসএফ’র বেআইনী কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকে কেন্দ্র করে টানা চারদিন চরম উত্তেজনা চলে। তবে বিজিবি ও স্থানীয়দের তীব্র বাধার মুখে বিএসএফ এখন পর্যন্ত কাঁটাতারের বেড়া নির্মান বন্ধ রেখেছে। এরপর গত ১১ জানুয়ারী  ভোররাতে  শিবগঞ্জের শাহাবাজপুর ইউনিয়নের  ৯ নং ওয়ার্ডের আজমতপুর সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে শহিদুল ইসলাম নামে এক বাংলাদেশী আহত হন। বিজিবি তাকে চোরাচালানী হিসেবে চিহ্নিত করে ঘটনাস্থল থেকে ফেনসিডিল  ও হাসুয়া উদ্ধারের কথা জানায়। এরপর গত ১৮ জানুয়ারী শিবগঞ্জের বিনোদপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের কিরণগঞ্জ সীমান্তে জমির ফসল ও গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশী ও ভারতীয় নাগরিকদের  মধে প্রায় দিনব্যাপী  তুমুল  সংঘর্ষ, বিএসএফ’র ককটেল বিস্ফোরণ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ এবং কয়েকজন বাংলাদেশেীর আহতের ঘটনা ঘটে।
বিজিবি ও বিএসএফ’র একই ব্যাটালিয়নের আওতাধীন  এসব ঘটনার ব্যাপারে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক এমনকি সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠকে ঘটনাগুলির আপাতত: সমাধান হলেও শিবগঞ্জ সীমান্তে উত্তেজনা চলছেই। আরও উল্লখ্য যে, আলোচ্য সীমান্তগুলি পাশাপাশি এবং ৩ থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে দূরে অবস্থিত।