এনজিও মালিককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে নিবিড় মানবিক উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি এনজিও’র বিরুদ্ধে উচ্চহারে মূনাফা দেবার কথা বলে গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করে অন্তত: ১৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে ক্ষুদ্ধ গ্রাহকরা একাধিক মামলা করেছেন। মামলার পর পুলিশ এনজিও মালিক রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের শাহাজাহান আলীর ছেলে মতিউর রহমানকে গতকাল গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। এদিকে টাকা ফেরত ও মতিউর সহ তার অর্থ আত্মসাতকারী চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ প্রদর্শণ করেছেন ভুক্তভোগী গ্রাহক ও এনজিও’র মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা। আজ দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে তাঁরা জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দেন। টাকা আদায়ে তাঁর প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেন। মানববন্ধনের বক্তা গ্রাহক ও কর্মীরা বলেন,২০১১ সালে মূলত: সদর উপজেলা ভিত্তিক এনজিওটি জেলা শহরের শান্তিমোড়ে অফিস খুলে কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। গ্রাহকদের পাওনা ১২ কোটি টাকার বেশি। কিন্তু এমডি মতিউর গ্রাহকদের টাকা ফেরৎ নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ গড়িমসি করে পালিয়ে যেতে উদ্যত হলে গত মঙ্গলবার(২৪ ডিসেম্বর) তাকে অফিসে আটকে পুলিশেরর হাতে তুলে দেয়া হয়। এনজিও কর্মীরা জানান,এনজিওটির সমবায় নিবন্ধন রয়েছে। কিন্তু আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে টাকা লেনদেনের সরকারি অনুমোদন নেই। এনজিওটি নগদে ডিপিএস,চেকে এফডিআর ও বইয়ে ক্ষুদ্র ঋণের লেনদেন করত। মাঠকর্মীরা গ্রাহকদের নিকট থেকে এসব টাকা তুলে সরাসরি এমডিকে জমা দিতেন। তিনি জমি কেনা ও বিভিন্ন ব্যবসায় ওই টাকা বিনিয়োগ করতেন। তার একটি সংঘবদ্ধ চক্র রয়েছে প্রতারনার জন্য। মানববন্ধনে মাঠকর্মী ও ম্যানেজার তহমিনা খাতুন রুমা বলেন, গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মালিককে দিয়েছি। এখন টাকা ফেরতের জন্য গ্রাহকদের প্রচন্ড চাপে রয়েছি। দ্রুত তাদের টাকা ফেরৎ দিতে হবে। অনবরত: দরিদ্র পাওনাদাররা ধরণা দিচ্ছেন। অনেকের জীবন সংসার বিপন্ন হবার উপক্রম। আমরা ১৩ জন কর্মীও এ জন্য মতিউরের নামে পৃথক পৃথক মামলা করেছি। মাঠকর্মী মিনারা খাতুনও একই কথা বলেন। গ্রাহক রাজু আহমেদ বলেন, তাঁর বিদেশ থেকে আনা সাড়ে ২৪ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। বিভিন্নভাবে জমানো ও বিভিন্ন কাজের বিভিন্ন অংকের টাকা লোপাট হবার কথা বলেন, সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের গ্রাহকরা। এর মধ্যে চাদলাই গ্রামের জোসনারা,সালেহা, নয়নশুকা গ্রামের রোজিল, তাজকেরা প্রমুখ রয়েছেন। ১০ লক্ষ টাকার এফডিআর করে কান্না করছিলেন শহরের ফুলবাগান এলাকার সাহিদা। এ ব্যাপারে সদও থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) রইস উদ্দিন বলেন,গত মঙ্গলবার বিকালে বিক্ষদ্ধ গ্রাহকরা মতিউরকে পুলিশে দেয়। গত বুধবার এক গ্রাহক দুই থেকে আড়াইশ লোকের ১০ থকে ১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মতিউরসহ ১২ জনের নামে থানায় প্রতারণা মামলা করেন। ওইদিনই পুলিশ মতিউরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা(আইও) ও সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতারণার পুরো তদন্ত শরু হয়েছে। তদন্তে বের হয়ে আসবে এনজিও’র মোট সদস্য,মোট গ্রাহক, মোট জামানত ও আত্মসাৎ হওয়া টাকার পরিমান। ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম সম্পর্কেও জানা যাবে। প্রতারক চক্রের সকল সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হবে বলেও জানান এ্ই পুলিশ কর্মকর্তা।