অবশেষে ২৬২ রানে অলআউট বাংলাদেশ
দীর্ঘদিন পর হাসলো লিটন দাসের ব্যাট। ক্রিজে ছিলেন শেষ ভরসা হয়ে।দলের বিপদে হাল ধরার পর তুলে নিয়েছেন অসাধারণ সেঞ্চুরি। এরপর ছুটছিলেন ১৫০-এর দিকেও। তবে সে পর্যন্ত যেতে পারেননি তিনি। তার থেমে যাওয়ায় লিডের দেখা পায়নি বাংলাদেশও। রাওয়ালপিন্ডিতে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে করা ২৭৪ রানের জবাবে ২৬২ রানে শেষ হয়েছে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস।
পাকিস্তান লিড পেলো ১২ রানের। ফলে ১২ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয়বার ব্যাট করতে নামবে স্বাগতিকরা।
২৬ রানেই ৬ উইকেট হারানো বাংলাদেশ ২৬২ পর্যন্ত যায় লিটন দাসের সেঞ্চুরি ও মেহেদী হাসান মিরাজের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে। লিটন-মিরাজ সপ্তম উইকেটে ১৬৫ রানের জুটি গড়ে বিপর্যয় সামাল দিয়ে লড়াকু পুঁজির ভিত গড়ে দেন। ১৯১ রানের মাথায় মিরাজ ১২ চার ও ১ ছক্কায় ৭৮ রান করে ফিরলেও লিটন ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। শেষ পর্যন্ত ২২৮ বল খেলে ১৩টি চার ও ৪ ছক্কায় ১৩৮ রান করে আউট হন ২৬২ রানের মাথায়। সেই রানেই নাহিদ রানা এলবিডব্লিউ হলে অলআউট হয় বাংলাদেশ।বল হাতে পাকিস্তানের পেসার খুররম শাহজাদ ২১ ওভারে ৩ মেডেনসহ ৯০ রান দিয়ে ৬টি উইকেট নেন। আর মীর হামজা ও সালমান আগা নেন ২টি করে উইকেট।
টেস্টের তৃতীয় দিনে বাংলাদেশ শুরু থেকেই চাপে পড়ে। অল্পের জন্য জাকির হাসান বেঁচে যান আবরার আহমেদ ক্যাচ ধরতে না পারায়। তার সামান্য সামনে পড়ে বল, যদিও উদযাপন করে ফেলেছিলেন আবরার। কিন্তু টিভি রিপ্লেতে স্পষ্ট হয়, বল আগে পড়েছিল মাটিতে।
এরপর জাকির আরও একবার সুযোগ পান। মীর হামজার বল জাকিরের প্যাডে লাগে, জোরালো আবেদনও হয়; কিন্তু আম্পায়ার সাড়া দেননি। রিভিউ নেয়নি পাকিস্তানও। পরে রিপ্লেতে দেখা গেছে, স্টাম্পে আঘাত হানতো বল।
পরের ওভারে এসেই অবশ্য জাকিরের উইকেট তুলে নেন খুররাম শেহজাদ। সেই আবরার আহমেদের হাতেই মিড উইকেট অঞ্চলে ক্যাচ দেন ১৬ বলে ১ রান করা এই ব্যাটার। পরের ওভারের প্রথম বলে সাদমান ইসলামকে বোল্ড করেন খুররাম।
দুই বল পর একই ভাগ্য বরণ করতে হয় অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে। স্রেফ ৫ বলের ব্যবধানে তিন উইকেট তুলে বাংলাদেশকে পাহাড়সম চাপে ফেলে দেন খুররাম। পরে যত সময় গড়িয়েছে, তত সেটি বেড়েছে। উইকেটের দেখা পান সকাল থেকে দারুণ বল করা মীর হামজাও। ২ বলে কোনো রান করার আগেই তার লেগ স্টাম্পের বল ফ্লিক করতে গিয়ে মিড অনে সহজ ক্যাচ দেন মুমিনুল।
অভিজ্ঞ দুই ব্যাটার মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসানও পারেননি দলের হাল ধরতে। ৯ বলে ৩ রান করে মীর হামজার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মুশফিক। খুররামের বলে এলবিডব্লিউ হন ১০ বলে ২ রান করা সাকিব। ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় ভেঙে পড়াটাই ছিল অনেকটা অনুমিত দৃশ্য। কিন্তু সেটি বদলে দেওয়ার কাজটি করেন লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ। তাদের জুটিতে এগোতে থাকে বাংলাদেশ। লাঞ্চের পর এসে দুজন হাফ সেঞ্চুরিও তুলে নেন।
তাদের জুটি দেড়শ ছাড়ালে রেকর্ড গড়ে ফেলে। ৩০ রানের নিচে ৬ উইকেট হারানোর পর ১৫০ রানের জুটি হয়নি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই। কিন্তু রেকর্ডের রানকে আর খুব বেশি বড় করতে পারেননি মিরাজ। খুররাম শেহজাদের কিছুটা লাফিয়ে উঠা বল ডিফেন্ড করতে গিয়ে বোলারের হাতেই ক্যাচ দেন তিনি। ১২৪ বলে ৭৮ রান করেন মিরাজ।
এরপর উইকেটে এসে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি তাসকিনও। ৫ বলে ১ রান করে এলবিডব্লিউ আউট হয়েছেন খুররামের পরের ওভারে। এরপরই চা বিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়। বাংলাদেশের আশা হয়ে ছিলেন লিটন। মিরাজ না পারলেও তিনি সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে থেকে অসাধারণ এক ইনিংস খেলেছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। ১৭১ বলে স্পর্শ করেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি।
দারুণ খেলতে থাকা লিটন শেষদিকে একাই হাল ধরেছিলেন। মিরাজের পর তাকে অনেকটা সময় সঙ্গ দিয়ে গেছেন হাসান মাহমুদ। ৫১ বলে ১৩ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন হাসান। তবে অপরপ্রান্তে লিটন নবম উইকেট হিসেবে বিদায় নেন। ২২৮ বল খেলে ১৩৮ রান করেন তিনি। ১৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় সাজানো এই ইনিংস। লিটনের পর শেষদিকে নাহিদ রানা (০) দ্রুত বিদায় নিলে আর লিড পাওয়া হয়নি বাংলাদেশ।