হাঁটার জন্য আমাদের জুতা যেমন হওয়া উচিত
হাঁটা এমন একটি দৈনন্দিন শারীরিক কার্যকলাপ, যা বয়স কিংবা পেশা অতিক্রম করে সবার জীবনে প্রয়োজন হয়ে ওঠে। কিন্তু নিয়মিত হাঁটা আরামদায়ক ও উপকারী করার জন্য সঠিক জুতা নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপযুক্ত জুতা শুধু হাঁটাকে আরামদায়ক করে না, পায়ের ব্যথা কমায় ও বিভিন্ন আঘাতজনিত সমস্যা প্রতিরোধে সহায়তা করে। তাই হাঁটার জুতা বেছে নেওয়ার সময় কিছু মৌলিক বিষয় বিবেচনায় রাখা জরুরি। প্রথমেই আসা যাক, জুতার সঠিক সাইজ বিষয়ে। জুতাটি হতে হবে এমন, যেন পায়ের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে খাপ খায়। আঙুলের সামনে সামান্য ফাঁকা জায়গা থাকা ভালো, যাতে হাঁটার সময় আঙুলে অতিরিক্ত চাপ না পড়ে। এরপর আসে জুতার ওজন। হাঁটার জন্য হালকা ওজনের জুতা সবচেয়ে ভালো। কারণ এটি চলাফেরায় বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে না এবং দীর্ঘক্ষণ হাঁটলেও ক্লান্তি বাড়ায় না। জুতার সোলের গঠনও গুরুত্বপূর্ণ। নিচের অংশ বা আউটসোল যদি রাবারের হয়, তাহলে গ্রিপ ভালো পাওয়া যায় এবং পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ার ভয় কম থাকে। ননসিøপ ডিজাইন রাস্তা বা মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মানিয়ে যায়। মাঝের অংশ বা মিডসোল পায়ের ওপর ধাক্কা বা কম্পনের চাপ কমিয়ে আরাম দেয়। ইভা ফোম বা জেল কুশন থাকলে দীর্ঘ সময় হাঁটলেও পায়ে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
ভেতরের অংশ বা ইনসোলে নরম কুশন থাকা উচিত, যাতে পায়ের তালুকে সাপোর্ট দেয় এবং চাপ কমায়। যাদের পায়ের সমস্যা আছে, তাদের জন্য অর্থোপেডিক ইনসোল ভালো সাপোর্ট দিতে পারে।অনেকের পায়ের তালুর বাঁক হয় কম বা বেশি। এমন ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের আর্চ সাপোর্ট থাকা জুতা নির্বাচন করতে হয়। একইভাবে গোড়ালিতে ভালো সাপোর্ট থাকলে দীর্ঘক্ষণ হাঁটলেও গোড়ালি ও হাঁটুর ওপর বাড়তি চাপ পড়ে না। জুতার ওপরের অংশ এমন উপাদানে তৈরি হওয়া উচিত, যাতে সহজে বাতাস চলাচল করতে পারে। শ্বাসপ্রশ্বাস-নেওয়া সক্ষম জালযুক্ত কাপড় বা ক্যানভাস পা ঠান্ডা এবং ঘামমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। অনেক ক্ষেত্রে মানসম্মত সিনথেটিক লেদারও আরামদায়ক হতে পারে। হিলের উচ্চতা খুব বেশি বা খুব কম হওয়া ক্ষতিকর। সাধারণত শূন্য দশমিক ৫ থেকে ১ দশমিক ৫ ইঞ্চি হিল হাঁটার জন্য উপযোগী। সম্পূর্ণ ফ্ল্যাট জুতা ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ তাতে পায়ের গঠনে চাপ পড়ে। জুতার সামনের অংশ সহজে বাঁকানো যায় কিনা, সেটিও বিবেচনা করা দরকার। খুব শক্ত এবং অনমনীয় জুতা হাঁটার স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট করে। হাঁটার জুতায় লেইস বা ভেলক্রো স্ট্র্যাপ থাকলে পায়ে ফিট করানো সহজ হয়। বিশেষ করে বয়স্কদের জন্য ভেলক্রো স্ট্র্যাপ বেশ সুবিধাজনক। দীর্ঘস্থায়ী ও ভালো মানের ব্র্যান্ডের জুতা নির্বাচন করলে তা দ্রুত নষ্ট হয় না এবং পায়ের প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দীর্ঘদিন ধরে বজায় থাকে। যাদের প্লান্টার ফ্যাসাইটিস বা হিল স্পারের সমস্যা আছে, তাদের জন্য বাড়তি আর্চ সাপোর্ট ও নরম হিল কুশন অপরিহার্য। ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে নরম, সেলাইবিহীন ইনসোল থাকা জুতা বেছে নেওয়া উচিত, যাতে ঘর্ষণে ক্ষত বা ফোসকা হওয়ার ঝুঁকি কমে। ফ্ল্যাটফুট থাকলে বিশেষ আর্চ সাপোর্টযুক্ত জুতা ব্যবহার করা জরুরি। সব মিলিয়ে যাদের পায়ের বিশেষ কোনো সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে একজন ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে জুতা নির্বাচন করাই সবচেয়ে নিরাপদ।
ডা. এম ইয়াছিন আলী